শ্বশুর বাড়ি এসে সিলেটী শব্দ শেখার চেষ্টায় মঈন আলী
রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গ্রাউন্ডে আরও অনেক বিদেশি ক্রিকেটার অনুশীলন করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের আগ্রহের মূলে মঈন আলী। ক্রিকেটারদের খোঁজ খবর রাখা ভক্তদের কাছে অবশ্য এর কারণটা অজানা হওয়ার কথা নয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের এই ইংলিশ অলরাউন্ডারের শ্বশুর বাড়ি সিলেটে।
তিন দিনের জন্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এসেছে সিলেটে। লাক্কাতুরার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ছয়টি ম্যাচ। এর আগে নবনির্মিত স্টেডিয়ামে (দুই নম্বর গ্রাউন্ড) প্রস্তুতির কাজ সেরে নিচ্ছে দলগুলো। অনুশীলনের ফাঁকে মঈন যেখানে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেখান থেকে তার শ্বশুর বাড়ি পীর মহল্লা স্রেফ হাঁটা দূরত্বের।
বিয়ের বয়স বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলেও বিপিএল খেলার সুবাদে সিলেট শহরে প্রথমবার এলেন এখানকার জামাই মঈন। ইংলিশ অলরাউন্ডারের খেলা উপলক্ষে সিলেটে আসছেন তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও। প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি এসে রোমাঞ্চিত মঈন। টিম হোটেলের অনেকেই তার সঙ্গে সিলেটী ভাষায় কথা বলছেন। এ কারণে মঈনও চেষ্টায় আছেন এখানকার ভাষা শেখার।
মঈনের জন্ম ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে, বেড়ে ওঠাও সেখানে। তবে ইংলিশ এই অলাউন্ডার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। তার স্ত্রী ফিরোজা হোসেনের বাড়ি সিলেটে। সিলেট স্টেডিয়াম থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে পীর মহল্লায় এক সময় বাস করতেন মঈনের শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন। পরে তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। ফিরোজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। পরে মঈনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার ফিরোজার। তাদের পুত্র সন্তানের নাম আবু বকর ও কন্যার নাম হাদিয়া।
বেশ আগে থেকেই বাংলাদেশে আসছেন মঈন। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে ২০০৫ সালে প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন তিনি। ২০১০-১১ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলেন মঈন। দুই বছর পর ২০১৩ বিপিএলে দুরস্ত রাজশাহীর হয়ে কয়েকটা ম্যাচ খেলেন তারকা এই ক্রিকেটার। এ ছাড়া ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে একাধিকবার এসেছেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে এলেও কখনও সিলেটে আসা হয়নি মঈনের। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে কথা বললেও সেবার সুযোগ হয়নি এখানে আসার। এবার অনেকটা আয়োজন করেই শ্বশুর বাড়ির এলাকায় এসেছেন তিনি। মঈন বলছিলেন, 'পরিবারের অনেকেই এসেছে। আমার স্ত্রী এখানে। তার বোনরা, আমরা শ্যালক, সবাই আছে। ওরা ঢাকায় আছে, দিন দুয়েকের মধ্যে সিলেটে আসবে ওরা।'
বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বাড়ি মনে হয় কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে শেকর পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের কথা উল্লেখ করলেন মঈন। তার মতে তিনটি দেশই তার বাড়ি, 'বাংলাদেশও বাড়ি, পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সবই আমার ঘর। সব আমার চোখে এক। আমার সব ইন-লজরা এখানে। অনেক শ্রদ্ধা আছে আমার। সিলেটে আমার এবারই প্রথম। ওরা আমাকে সব সময় বলতো, "চলো সিলেটে যাই।" কিন্তু সময় হয়ে ওঠেনি। এবার আসতে পেরে ভালো লাগছে। হতাশাজনক যে বাইরে যেতে পারছি না। তবে এখানে এসে আমার ভালো লাগছে। আমার পরিবার এখানকার। খুবই খুশি।'
স্ত্রীর কাছ থেকে আগেই কয়েকটি সিলেটী শব্দ শিখেছেন মঈন। এবার সিলেটে এসে শব্দ তালিকাটা দীর্ঘ করার চেষ্টায় তিনি, 'কয়েকটি সিলেটি শব্দ জানি আমি, এই তো। সত্যি বলতে, আরও বেশি জানতে পারলে ভালো লাগত। চেষ্টা করব আরও শিখতে। এখন হোটেলে লোকেরা আমার সঙ্গে সিলেটি কথা বলছে। চেষ্টা করছি শিখতে।'