তামিমের ভবিষ্যদ্বাণী ও সাকিবের পেস বোলিং
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের নেট। ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল; তার বোলার দুজন, সঙ্গে একজন থ্রোয়ার। বোলারদের বিপক্ষে সাবলীল বাংলাদেশ ওপেনারের মনে হলো, তিনি আউটই হবেন না। ঘোষণা দিয়ে তা জানিয়েও দিলেন তামিম। আবার এই নেটেই নতুন সাকিব আল হাসানের দেখা মিললো। বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ক্রিকেট দুনিয়ায় পরিচিত বাংলাদেশ অলরাউন্ডার এদিন হয়ে উঠলেন পেসার, পেলেন আফিফ হোসেন ধ্রুবর উইকেটও।
চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে দ্বিতীয় দিনের অনুশীলনের চিত্র এটা। ফুরফুরে মেজাজে কাটানো দিনে ছিল খুনসুটিতে ভরা আরও কিছু মুহূর্ত। এসব মুহূর্তের স্বাক্ষী পুরনো গুরু জেমি সিডন্সও। ব্যাটিং পরামর্শক হয়ে বাংলাদেশে আসার কদিন পর করোনায় আক্রান্ত হওয়া জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ এদিনই প্রথম দলের সঙ্গে সময় কাটালেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শেষ করে বিশ্রামের সময় মেলেনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চলে আসতে হয় চট্টগ্রামে। সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানদের ছাড়াই ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যায় অনুশীলন। পরের দিন মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কোনো কার্যক্রম ছিল না দলের। এদিনই দলের সঙ্গে চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব ও মুস্তাফিজ।
দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আগে কলকাতা গিয়েছিলেন সাকিব। বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে দুদিন ব্যস্ত সময় কাটিয়ে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম আসেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দলের অনুশীলন, ঠিক সময়েই মাঠে হাজির তিনি। গা গরম করে নেমে যান ব্যাটিংয়ে। মাঠের দক্ষিণ পাশের নেটে ব্যাটিং করেন অনেকটা সময়। স্পিনারদের খেলার পর পেসারদের বিপক্ষে ব্যাটিং করে শেষ করেন সাকিব।
ব্যাটিং শেষে অনেকটা সময় বিশ্রাম নেন সাকিব। এ সময় সিডন্সের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায় তাকে। পুরনো গুরুর সঙ্গে আড্ডা শেষে উত্তর পাশের নেটের বোলিং প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ান সাকিব। সে সময় মুশফিকুর রহিমকে বোলিং করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। থ্রো ডাউন করছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। থ্রো ডাউন শেষে সাকিবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতা চলে ডমিঙ্গোর।
তাদের আলাপচারিতার এক পর্যায়ে নেটে ব্যাটিং করতে যান আফিফ। এ সময় বল হাতে নেন সাকিব। কিন্তু স্পিনার নয়, এবার তিনি পেসার। পেসারদের মতো সিম গ্রিপ করে করেন পেস বোলিং-ই। আশেপাশে সবাই তখন সাকিবের দিকে তাকিয়ে। সেদিকে নজর নেই তার, আফিফকে প্রায় দুই ওভারের মতো পেস বোলিং করে যান সাকিব।
এক পর্যায়ে পেস বোলিংয়েই আফিফের উইকেট নেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন আফিফ। আউট বলে চিৎকার দিয়ে দুই হাত মেলে উদযাপনে মাতেন সাকিব। যদিও তাকে থামিয়ে আফিফ বলে ওঠেন, 'কীসের আউট! বল তো স্লিপ দিয়ে বেরিয়ে যাবে।' মানলেন না সাকিব, পাল্টা উত্তরে বলেন, 'আমি তো স্লিপ নিয়ে বোলিং করছি। একটা না, তিনটা স্লিপ।'
দলীয় অনুশীলনের শেষদিকে ওই নেটেই ব্যাটিং করেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার অনুরোধে আবার বোলিং শুরু করেন সাকিব। এবার পেস নয়; সেই চিরচেনা স্পিন। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গেও চলে সাকিবের লড়াই। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের পায়ে বল লাগিয়ে চিৎকার করে এলবিডব্লিউর আবেদন করেন তিনি। আউট ঘোষণা করার জন্য আম্পায়ার ছিলেন না বলে উইকেটটা অবশ্য পাওয়া হয়নি সাকিবের।
এর আগে নেটে দাপুটে সময় কাটান তামিম। ওয়ানডে অধিনায়ককে বোলিং করছিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তামিমকেও থ্রো ডাউন করেন ডমিঙ্গো। আফিফ-মিরাজের বোলিংয়ের পাশাপাশি ডমিঙ্গোর থ্রো ডাউনেও সাবলীল ছিলেন তামিম। একটি ফ্লিক শট খেলে বোলার আফিফের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ওপেনার বলে ওঠেন, 'আউটই হবো না। আউট হওয়ার কোনো লক্ষণ তো দেখছি না রে।'