জয়ের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির পরও পিছিয়ে বাংলাদেশ
মাহমুদুল হাসান জয়ের অনবদ্য ১৩৭ রানের ইনিংস, অতিরিক্ত থেকে এসেছে ১৪ রান। হয়ে গেল ১৫১ রান। বাকি ১০ ব্যাটসম্যান মিলে কিছু কিছু করে রান করলেও তো বড় সংগ্রহ দাঁড়ায়! কিন্তু গল্পটা যে এমন নয়, সেটা সবারই জানা। ডারবান টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ১৪৭ রান। তাই জয়ের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির পরও প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে হলো বাংলাদেশকে।
জয়ের ১৩৭ রানের দৃঢ়চেতা ইনিংসের পরও সংগ্রহ বড় হলো না মুমিনুল হকের দলের। ২৯৮ রানে গুটিয়ে গেছে সফরকারীদের প্রথম ইনিংস। প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশকে পিছিয়ে পড়তে হলো ৬৯ রানে। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৩৬৭ রানে অলআউট হয়।
২৯৮ রানই অবশ্য বাংলাদেশের কাছে স্বস্তির সংগ্রহ বলে মনে হতে পারে। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুতে নজর রাখলেই সেটা পরিষ্কার হবে। দলীয় ২৫ রানেই ওপেনার সাদমান ইসলামকে হারায় বাংলাদেশ। সাদমানকে ফেরানোর পর স্পিন ঘূর্ণিতে বাংলাদেশকে পথ ভুলিয়ে দেন প্রোটিয়া স্পিনার সাইমন হার্মার। তার বোলিং তোপে ৯৪ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম ৪ উইকেটই তার শিকার।
ব্যতিক্রম কেবল জয়, নিয়মিত উইকেট পতনের মাঝেও আস্থার প্রতীক হয়ে উইকেটে টিকে থাকেন তিনি। নাইট ওয়াচম্যান তাসকিন আহমেদকে নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেন জয়। এদিনও শুরুতেই উইকেটের পতন। তাসকিন ফিরে যান প্রথম বলেই। এরপর লিটন কুমার দাসের সঙ্গে ৮২ রানের জুটি বাধেন জয়।
লিটন ৪১ রান করে ফিরে গেলে নতুন সঙ্গী হিসেবে ইয়াসির আলী রাব্বিকে পান জয়। তবে রাব্বির সঙ্গে তার জুটি জমেনি, দুর্ভাগ্যবসত রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় দারুণ শুরু করা রাব্বিকে। ২২ রান করে রান আউট হন ডানহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। রাব্বির বিদায়ে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে এগোতে শুরু করেন জয়।
মিরাজকে বেশ সাবলীল মনে হচ্ছিল, কিন্তু ২৯ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। জয়ের সঙ্গে ৫১ রানরে জুটি গড়ে আউট হন তিনি। এরপর বাকি দুই ব্যাটসম্যান খালেদ আহমেদ ও এবাদত হোসেনকে নিয়ে বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি জয়ের। খালেদের পর জয়ও আউট হয়ে যান। এর আগে সাড়ে সাত ঘণ্টা ব্যাটিং করে ৩২৬ বলে ১৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৩৭ রানের মহামূল্যবান ইনিংস খেলেন জয়।
তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা জয়ের এটা প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম সেঞ্চুরিতে কয়েকটি রেকর্ডও গড়ে ফেলেছেন ডানহাতি এই ওপেনার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করলেন জয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেও প্রথম সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান তিনি।
এতোদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল মুমিনুলের। ২০১৭ সালের সফরে পচেফস্ট্রুমে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। আরও একটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন জয়। টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এশিয়ার বাইরে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডও এখন তার দখলে।
বাংলাদেশের ইনিংসে জয়ের পর সবচেয়ে বেশি রান করেছেন লিটন, ৯২ বলে ৬টি চারে ৪১। এ ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮, ইয়াসির আলী রাব্বি ২২ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ২৯ রান করেন। বাংলাদেশের ছয়জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি, এর মধ্যে দুজন আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামানো প্রোটিয়া অফ স্পিনার হার্মারের শিকার ৪ উইকেট। লিজাড উইলিয়াম ৩টি উইকেট নেন। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পান ডুয়ানে অলিভিয়ের ও ভিয়ান মুলডার।