আবাহনী-প্রাইম ব্যাংক ম্যাচ থামিয়ে দেওয়ার হুমকি আম্পায়ারদের
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আবাহনী লিমিটেডের প্রতাপের কথা কার না জানা! মাঠের পারফরম্যান্সের বাইরে পেশি শক্তিতেও তারা যেকোনো ক্লাবের চেয়ে এগিয়ে। বিসিবির ছত্রছায়ায় থাকার কারণে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকে অনেকে 'কমিটির ক্লাব' বলেও ডাকেন। প্রতি বছরই আবাহনীকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও থাকে।
এবার তেমন অভিযোগ না উঠলেও দলটির সমর্থকদের উগ্রতার কারণে ম্যাচ চলাকালীন দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিতে দেখা গেল আম্পায়ারদের। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির হওয়া আবাহনী সমর্থকদের অকথ্য গালিগালাজে ম্যাচ থামিয়ে প্রতিবাদ জানান ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ শিপার। তিনি জানান, অফিসিয়ালরা ভয় পাচ্ছেন; যে কারণে দায়িত্ব পালন করতে চান না তারা।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেডের মুখোমুখি হয় প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে আবাহনী। তখন ৪৩ ওভারের খেলা চলছিল। ব্যাটিং করছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও হনুমা বিহারী। নাহিদুলের করা পঞ্চম ডেলিভারিটি স্লিপে ঠেলে দিয়ে রান নেওয়ার জন্য দৌড় শুরু করেন বিহারী।
ফিল্ডার রুবেল হোসেনের কাছ থেকে পাওয়া বল কুড়িয়ে স্টাম্প ভাঙেন প্রাইম ব্যাংকের উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন। প্রাইম ব্যাংকের জোরালো আবেদনে মোসাদ্দেক হোসেনকে আউট ঘোষণা করেন লেগ আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। কিন্তু এই রান আউট মানতে পারছিলেন না মোসাদ্দেক। হতভম্ব হয়ে উইকেটের পেছনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। উইকেট পতনে প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটাররা উদযাপন করতে থাকেন, তখনও একই ভঙিতে ব্যাটের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আবাহনী অধিনায়ক।
মাঠে যখন এই অবস্থা, গ্যালারির একটা অংশ তখন উত্তাল। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন আবাহনীর সমর্থকরা। মিরপুর স্টেডিয়ামের হসপিটালিটি বক্সের নিচের গ্যালারিতে বসা আবাহনীর ২০-২৫ জন সমর্থক আম্পায়ারদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ক্ষুব্ধ সমর্থকদের একজন বলতে থাকেন, 'আম্পায়ারের মাথায় বল মার।' আরেকজন বলেন, 'বের করে দে মাঠ থেকে।'
আবাহনীর সমর্থকদের এমন উগ্রতায় নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন বলে জানান ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ শিপার। তিনি জানান, এমন চলতে থাকলে এই ম্যাচে দায়িত্ব পালন করবেন না তারা। পরে আবাহনী কর্তৃপক্ষ সমর্থকদের বুঝিয়ে ঠান্ডা করে। মাঝে কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। সমর্থকরা শান্ত হলে আম্পায়াররা আবার ম্যাচ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনাটি কানে গেছে বিসিবির আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠুর। ঘটনার কিছুক্ষণ পর মাঠে গিয়ে আবাহনীর ড্রেসিং রুমে যান তিনি। ভক্তদের উগ্রতা নিয়ে আবাহনীর কোচ খালেদ আহমেদ সুজনের সঙ্গে কথাও বলেন মিঠু।
বিসিবির এই পরিচালক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'হ্যাঁ আবাহনীর ভক্তরা গালিগালাজ করেছে। রোজার মাসে এমন ঘটনায় আম্পায়াররা মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। ঘটনা শুনে আমি মাঠে গিয়েছিলাম। রান আউটটা ৫০-৫০ ছিল। আউট হতে পারতো, নাও হতে পারতো। তো আমি ড্রেসিং রুমে গিয়ে সুজনকে বলেছি, 'সমর্থকদের এসব তো তোমাদেরই ম্যানেজ করতে হবে।' তবে মাঠে তো এমন ঘঠনা ঘটেই। সচেতন থাকতে হবে এসব নিয়ে এই আর কি।'