দুই বছরে চার শতাধিক মামলায় ১১'শ রোহিঙ্গা কারাগারে
নানা অপরাধে গত দুই বছরে ৪ শতাধিকের বেশী মামলার আসামী হয়েছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এসব মামলায় কারান্তরিণ হয়েছে প্রায় ১১'শ রোহিঙ্গা। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন না হলে ভবিষ্যত দিনগুলো নিয়ে শঙ্কায় আছেন স্থানীয়রা।
আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলার দুই বছর পূর্ণ হলো।
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
সীমান্তের দু'উপজেলার প্রায় ৮ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমিতে আশ্রয়স্থল তৈরী করে ৩৩টি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে নতুন পুরোনো প্রায় সোয়া ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে। এদের অধিকাংশই নারী-শিশু। দেয়া হচ্ছে জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় রসদ।
কিন্তু দিন দিন উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবণতি ঘটছে ক্রমশ। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি, চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে জাতিগত নিধনের শিকার এসব রোহিঙ্গাদের অনেকে।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সুত্র জানায়, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ ও প্রশাসনের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৪৬ রোহিঙ্গা। এদের মাঝে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩২ জন।
এছাড়াও ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, চুরি, মাদক ও মানবপাচারসহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৭১ টি। যার মধ্যে, মাদক মামলা ২০৮, হত্যা মামলা ৪৩ ও নারী সক্রান্ত মামলা ৩১ টি।
এসব মামলায় আসামী হিসেবে আছে ১১০৫ রোহিঙ্গা।
স্থানীয়রা বলছেন, দিন দিন রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হচ্ছে। তারা জড়িয়ে পড়ছে চুরি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে স্থানীয়দের উপর হামলার ঘটনাও ঘটছে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) টেকনাফের হ্নীলার ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক হত্যা ঘটনায় পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইন কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র্যাব প্রতিনিয়িত অভিযান চলাচ্ছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। র্যাবের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সবসময় সচেষ্ট রয়েছে র্যাব।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মামলার সংখ্যা। হত্যা,চুরি মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেই ৪ শতাধিক মামলা হয়েছে এবং কারান্তরিণও আছে প্রায় ১১'শ জন।
নিপীড়ন দেখে বেড়ে ওঠা এত সংখ্যক উদ্বাস্তু এক জায়গায় থাকলে অপরাধের মাত্রা বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, এমনটি উল্লেখ করেন তিনি।