পাবনার ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত দল, ঘন্টু বহিষ্কার
পাবনায় থানা চত্বরে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ের আয়োজনের ঘটনার তদন্তে নেমেছে এবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত দল। শনিবার বেলা ১১টায় সদর উপজেলার যশোদল সাহাপুর গ্রামে নির্যাতিত নারীর বাবার বাড়ি থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন তারা। ঘণ্টা তিনেক ধরে তারা ভিকটিম নারী, তার পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।
জানা গেছে, তদন্ত দল রবিবার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিন সদস্যের এ দলে রয়েছেন, পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদ নেওয়াজ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আবু জাফর।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজ জানান, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনার শিকার নারী ও সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য শুনেছি। সদর থানা ও অপরাধস্থল পরিদর্শন করে তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে।”
তবে তদন্তে কী পাওয়া গেল সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তদন্ত কমিটির সদস্য পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত সব আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে।
ইবনে মিজান আরও জানালেন, “পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে আমরাও ঘটনা তদন্ত করছি। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে। জেলা প্রশাসক পরে প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবেন।”
প্রসঙ্গত, পাবনা সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামের এক নারীকে ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদ ও তার চার সহযোগী অপহরণ করে। পরে তাকে চার দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।
গৃহবধূ বাড়ি ফিরে বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাসেলকে আটক করে। কিন্তু তারা মামলা নথিভুক্ত করেনি। বরং ধর্ষিতাকে তার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর থানা চত্বরে রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন দুজন পুলিশ সদস্য।
অভিযুক্ত দুজন পুলিশ সদস্য এভাবে ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা চালান বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখনই পাবনার পুলিশ সুপার ধর্ষিতার মামলা নিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। আসামীদেরও গ্রেফতার শুরু হয়।
এরপর তদন্তে গণধর্ষণের শিকার নারীকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার ও উপ-পরিদর্শক ইকরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।
এদিকে, ভিকটিমের দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামী শরিফুল ইসলাম ঘন্টু দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। দলীয় তদন্ত শেষে তাকে এ পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তথ্যটির সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, “কারও ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেবে না। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের নমনীয়তা বা সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই।”