মরণব্যাধি এইডসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে খুলনা
খুলনায় মরণব্যাধি এইডসের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত আট মাসে ৩২ জনের শরীরে এ রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে।
সে হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে শনাক্ত হচ্ছে চারজন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এইচআইভি সেবা জোরদারকরণ শীর্ষক প্রকল্পের সূত্রে জানা যায়, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে খুলনা মহানগরী এলাকার বাসিন্দা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও নড়াইল জেলার ব্যক্তিরা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের বর্তমানে খুলনাসহ ১২ জেলায় ২৪৫ জনকে এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যার মধ্যে খুলনা জেলায় ৮০ জন রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত ১১ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এইডস/এসটিডি কর্মসূচি এবং ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘গর্ভবতী মায়ের থেকে শিশুর যাতে এইচআইভি না ছড়ায়’ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকা ও কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে দিন দিন এইচআইভি/এইডস পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। সকল অস্ত্রোপচারের আগে রোগীকে বাধ্যতামূলক এইচআইভি পরীক্ষার জন্য সরকারের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে। এর জন্য আইন পাস হলেই এইডস রোগীদের সংখ্যা আরও সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
খুমেক হাসপাতালে পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, এইচআইভি/এইডস রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই বিষয়ে মানুষের নিজের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি এইচআইভি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো গর্ভবতী মায়ের রক্তে এইচআইভি শনাক্ত হয় তবে তাকে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটির এইচআইভি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
খুমেক হাসপাতালের প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্লা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩২ জনের এইচআইভি/এইডস পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১৬ জন। এছাড়া গর্ভবতী মায়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দুইজনের এইচআইভি/এইডস পজেটিভ পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছে ১১ জন। এর মধ্যে চলতি বছরেই মারা যায় তিনজন। এ সময়ের মধ্যে ১১ হাজার ৪৭৫ জন গর্ভবতী মহিলাকে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। যার মধ্যে এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া যায় ছয়জনের। এছাড়া খুমেক হাসপাতালের এআরটি কর্নার থেকে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৫০ জন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৮০ জনের এইচআইভি/এইডস পজিটিভ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে খুমেক হাসপাতাল এআরটি কর্নার থেকে ১২ জেলার ২৪৫ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে এন্টি রেক্টোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) বিনামূল্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এর মধ্যে খুলনায় ৮০ জন, যশোরে ৩৬ জন, নড়াইলে ২৭ জন, ঝিনাইদহে ১০ জন, বাগেরহাটে ১৪ জন, মাগুরায় ৪ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জন, গোপালগঞ্জে ৫ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, পিরোজপুরের ৩ জন, বরগুনায় ১ জন (হিজড়া) ও রাজশাহী ১ জন (হিজড়া) এইচআইভি/এইডস আক্রান্তকে এআরটি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এসএম কামাল উল্লিখিত প্রকল্পের এক সভায় কাউন্সিলিং এর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেন। যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের কাছ থেকে কোনো ধরনের অসহযোগিতা না পান।