৮ বার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছি, বিচার পাইনি : ডাকসু ভিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেছেন, ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলটির ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার হলেও বিচার পাননি তিনি।
ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে গেলে সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়েন ডাকসু ভিপি। তার প্রেক্ষিতেই সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত ৩০ শে জুন ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ভিপি হওয়ার পূর্বে ৩ বার(৩০ শে জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে, ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি ও ১১ ই মার্চ রোকেয়া হলে) এবং ভিপি হওয়ার পর ৫ বার (১২ ই মার্চ টিএসসি, ২ এপ্রিল এস.এম হল,২৫ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ২৬ মে বগুড়া ও ১৪ অগাস্ট উলানিয়া) মোট ৮ বার ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হই।”
তিনি বলেন, “প্রতিবার প্রকাশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলে ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতায় চেয়েও পাওয়া যায় নি। পুলিশের নীরব ভূমিকা ছিলো সন্ত্রাসীদের সহায়ক।”
ঈদের দ্বিতীয় দিন নিজের এলাকা চর বিশ্বাস থেকে বোনের বাড়ি দশমিনা যাবার পথে উলানিয়া বাজার নামক এলাকায় ফের হামলার শিকার হন দাবি করে নুরুল হক নুর বলেন, “পটুয়াখালী - ৩ এর সাংসদ এস.এম শাহজাদা সাজুর নির্দেশে চাঁদাবাজ ও মাদকব্যবসায়ী, গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ এর নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, লিটু পেদা, আব্বাস পেদা, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রণো, পৌর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক,উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা রাহাদ, তূর্য্যসহ আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড,স্টীলের পাইপ ও চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।”
হামলায় তিনিসহ ৫ জন ‘গুরুতর আহত’ হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, “হামলায় প্রায় ২০-২৫ জনকে আহত হয়, ১০ টি মটরসাইকেল ভাংচুর, ২ টি ডিসএলআর ও ৮৯ হাজার টাকা ছিনতাই করে। আহতদের মধ্যে অমি নিজে, রবিউল, ইব্রাহিম, জাহিদ, রিয়াজসহ ৫ জন গুরুতর আহত হই।”
হামলার পর তাকে চিকিৎসা নিতে বাধা দেয়া হয়েছে দাবি করে নুর বলেন, “ডাক্তার সিটি স্ক্যান ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার জন্য বরিশাল মেডিকেলে রেফার করলেও সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমাকেও আমার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।”
১৪ আগস্ট হামলার আশঙ্কা থেকে আগেই পুলিশকে জানিয়ে রেখেছেন দাবি করে নুর বলেছেন, “পুলিশের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায়। পুলিশ আমার আত্নীয়,সমর্থকদের গ্রেফতারের হুমকিও দেয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নগ্ন হামলা চালালেও ওসি হামলার কথা অস্বীকার করে।”
বর্তমান অবস্থায় প্রাণ নাশের শঙ্কাবোধ করছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নূর বলেন, “ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা আমার তথা অন্যায়ের-অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন। আমি কোন অন্যায়- অপরাধ করিনি।”
২৮ বছর পর এ বছরের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রলীগের সভাপতি ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হন কোটা আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল হক নুর।
ডাকসুর ২৫ সদস্যের ছাত্র প্রতিনিধির মধ্যে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন ২৩ জন। ভিপি নুর ও অন্যজন সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হবার পর থেকেই ছাত্রলীগের প্যানেল হতে নির্বাচিত সদস্যদের থেকে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে আসছেন নুর।