ইশারা ভাষা বোঝার অ্যাপ বানালেন ১৪ বছরের কিশোর
তেজাস শুকলা, ভারতের আসামের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একদিন টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ আটকে যায় তার। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য ইশারা ভাষা ব্যবহার করে দিনের সংবাদগুলো পরিবেশন করছিলেন এক নারী। এ দৃশ্যই তাকে গভীর চিন্তায় ফেলে দেয়।
"আমি তখনই বুঝতে পারি শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা কতোটা কঠিন হতে পারে।"
তখন থেকেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যোগাযোগের এ বাধা দূর করতে কিছু করার চিন্তা শুরু করেন এই কিশোর। এর মধ্যেই একদিন 'আরটিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ফর ইয়ুথ' নামের এক প্রোগ্রামের কথা জানতে পারেন তিনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের মিনিস্ট্রি অব ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি। তেজাস এখানেই তার আইডিয়া তুলে ধরেন। সাথে সাথেই তার প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লাগে প্রায় এক বছর। এর মধ্যে তেজোসকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন বানানোর মেন্টরশিপের সুযোগ পান। এই প্রকল্পের জন্য বিজয়ী হন, অন্যান্য আরও প্রকল্পের জন্য তার সঙ্গেই বিজয়ী হন আরও ১৮ জন।
পৃথিবীতে বিভিন্ন শ্রবণ সমস্যায় ভোগেন প্রায় ৪৩ কোটি মানুষ। এরমধ্যে একেবারেই শুনতে পান না ও কথা বলতে পারেন না নয় লাখ মানুষ। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া এসব মানুষের অন্যান্যদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্য কোনো উপায়-ই নেই। ইশারা ভাষায় দক্ষতা আছে এমন মানুষের সংখ্যাও হাতে গোণা।
প্রশ্ন হলো, এই অ্যাপের মাধ্যমে কী সুবিধা পাবেন শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা।
মোবাইলের ক্যামেরা অন করে ইশারা ভাষায় কথা বলছেন এমন কারো দিকে ধরতে হবে। অ্যাপের মাধ্যমেই কী বলছেন তা অনুবাদ হয়ে যাবে। টেক্স মেসেজ বা ভয়েস মেসেজ- দুটি অপশন-ই আছে এতে।
এই অ্যাপ দিয়ে ইশারা ভাষা বোঝা যাবে শুধু তা নয়। কেউ ইশারা ভাষায় কিছু বলতে চাইলে তাও সম্ভব এই অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাপটিতে ঢুকে যা বলতে চান তা লিখলেই, অ্যাপের মাধ্যমে তা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে রূপান্তর হয়ে যাবে।
তেজাসের এই অ্যাপ বানানোর অনুপ্রেরণা ছিল তার বাবা। তার বাবা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। পড়ালেখার পাশাপাশিই এই অ্যাপ তৈরির কাজ করেছেন তিনি।
অ্যাপটি ডেভেলপ হয়েছে এখনো বেশিদিন হয়নি। তাই এখনো শুধু ইংরেজি ভাষাতেই এই অ্যাপটি ব্যবহার করা সম্ভব। অ্যাপটিতে ধীরে ধীরে অন্যান্য ভাষা নিয়ে আসার ইচ্ছা আছে তেজাসের। তার বিশ্বাস, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের যোগাযোগ বাধা দূর করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে তার এই অ্যাপ।
- সূত্র: আউটলুক ইন্ডিয়া