কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন: অক্সফোর্ড ট্রায়ালের আমি একজন!
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের প্রাথমিক ফলাফল দারুণ আশার সঞ্চার করেছে। অনেকের মতো আশায় বুক বেধেছেন রিচার্ড ফিশারও, সেই উদ্যম থেকেই তিনি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অন্যতম একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন, শুনুন তার সেই রোমাঞ্চ জাগানো কাহিনী...
যাত্রা শুরুর গল্প:
আমি তখন বসে আছি হাসপাতালের রিসেপশনে। ভারি শ্বাস-প্রশ্বাসের বাষ্পে আমার চোখে লাগানো স্বচ্ছ প্লাস্টিকের সুরক্ষা আবরণটি তখন ঝাপসা হয়ে উঠেছে প্রায়। দেরি হয়ে যাওয়ায় প্রায় কিছুক্ষণ আগেই দৌড়ে এসেছি সরু ভ্যাপসা সড়ক পথে।
অন্যরা অবশ্য আমার দিকে খুব একটা নজর দিচ্ছিলেন না। লজ্জা এড়াতে এটাই বাঁচোয়া। ডাক্তার এবং নার্সরা আমাকে পাশ কাটিয়েই নিজ নিজ কাজে যাচ্ছিলেন । তারপরও, কেউ যদি আমার গলদগর্ম অবস্থা দেখে, তাহলে কি মনে করবেন! তা নিয়ে অস্বস্তি কাটছিল না কিছুতেই।
দক্ষিণ লন্ডনের টুথিং এলাকায় অবস্থিত এই সেন্ট জর্জ হাসপাতাল। শেষবার এখানে এসেছিলাম, আমার মেয়ের জন্মের সময়। আজকের দিনটা সেদিনের তুলনায় অনেক আলাদা। মাস্ক পড়ে থাকা স্বত্বেও হাসপাতালের চকচকে মেঝে থেকে কড়া ব্লিচের গন্ধ উঠে এসে, যেন নাকে ধাক্কা মারছে। আমার পাশে বসার সিটটি টেপ মারা, যাতে সেখানে কেউ এসে পাশাপাশি না বসতে পারে। ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে এখানে সতর্কতার কোনো কমতি নেই ।
বসে বসে এসব যখন ভাবছি, ঠিক তখনই- মাস্ক ও সুরক্ষা সরঞ্জাম পড়ে এগিয়ে এলেন হাসপাতালের দুই কর্মী। তাদের একজনের হাতে একটি বোর্ডে লেখা 'ভ্যাকসিন ট্রায়াল', ঠিক যেমনটা এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি ড্রাইভারদের নির্দিস্ট যাত্রীর নাম লিখে অপেক্ষা করার সময় ধরে থাকতে দেখা যায়।
কিন্তু, এ সঙ্কেত আমার জন্যেই। আমার নতুন যাত্রা শুরুর নির্দেশ। সে অনুসারে কর্মী দুজনের দিকে এগিয়ে যেতেই তারা চলতে শুরু করলেন, আর আমি দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে তাদের গতিপথ অনুসরণ করছিলাম। তারা দুজনে কিন্তু নিজেদের মধ্যে হাসপাতালের নানা ওয়ার্ডের গুজব আর মজার পেশাদার অভিজ্ঞতা বিনিময় করছিলেন। আমার মনের অবস্থাটা তাদের জানার কথা নয়।
আমি সেদিন সেন্ট জর্জ হাসপাতালে এসেছি, অক্সফোর্ড গবেষকদের তৈরি ChAdOx1 nCoV-19 শীর্ষক গড়বড়ে বৈজ্ঞানিক নামের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে। ভেতরে কিছুটা উত্তেজনা তো কাজ করছিলই। এরপরের সপ্তাহগুলোতে চলমান মহামারি নির্মূলের চেষ্টায় পৃথিবীর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নেওয়ার অনুভূতি কেমন হতে পারে; তা বুঝতে পেরেছিলাম। এপর্যন্ত বিশ্বে যতগুলো ভ্যাকসিনের গবেষণা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে; তার মধ্যে অক্সফোর্ডের প্রার্থী ভ্যাকসিনটিই সবার চেয়ে এগিয়ে।
আমি হাসপাতালে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই ২০ জুলাই গবেষকরা এক হাজার ৭৭ জন ব্যক্তির দেহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ভ্যাকসিন পরীক্ষায় অবিশ্বাস্য সফলতার ফলাফল ঘোষণা করেন। ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্রিয় করতে সমর্থ হয়েছে বলা জানান তারা।
অক্সফোর্ড গবেষক দলের প্রধান সারাহ গিলবার্ড এসময় বলেন, ''এখনও অনেক কাজ বাকি… কিন্তু এই প্রাথমিক ফলাফল উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।''
এর পরবর্তী পর্যায় তৃতীয় ভাগে আমি নিজে অংশ নেই। যা আরও বড় আকারে কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে করা হয়। শুধু যুক্তরাজ্য নয়; ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো যেসব দেশে এখন করোনার বিস্তার ভয়াবহ আকারে রূপ নিয়েছে, সেসব দেশের অনেক সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের দেহে এটি প্রয়োগ করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এ পর্যায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আর প্রভাব- আরও বেশি পরিমাণ মানুষের দেহে পরীক্ষার অংশ।
ব্রিফিং:
তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল গত মে'তে। সেসময় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দার্শনিকের করা টুইটের মাধ্যমে আমি তা জানতে পারি। ভ্যাকসিনটি তৈরির কাজ যে খুব দ্রুত এগিয়ে চলেছে, তা অবশ্য আগে থেকেই জানতাম। তাই নিছক কৌতূহলবশেই সেদিন রাতে অক্সফোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজের নামটা লেখাই। তারপর বিষয়টি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
কিন্তু, কয়েক সপ্তাহ পরই এলো অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ। তারপরই আমি সেদিন গিয়ে হাজির হয়েছিলাম সেন্ট জর্জ হাসপাতালে।
এরপর হাসপাতালের দুজন কর্মীকে অনুসরণ করে প্রবেশ করেছিলাম নিউরোলজি বিভাগে। বর্তমানে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য এ বিভাগটিকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আমার মতো বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবক। আমাদের সবাইকে একটি বড় প্রজেক্টরের পর্দায় একটি ভিডিও দেখানো হলো। সেখানে অক্সফোর্ড গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী ম্যাথিউ স্ন্যাপ স্বেচ্ছাসেবকদের ভ্যাকসিনটি কিভাবে কাজ করে এবং এটি প্রয়োগের পর কি কি পার্শ্বঃপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে; তা বুঝিয়ে বলছিলেন।
ভিডিও বার্তায় বিজ্ঞানী স্ন্যাপ জানালেন, আমাদের মতো ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। এর ভেতর থেকে দুইটি গ্রুপ করা হবে। একদলকে দেওয়া হবে; কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কাজ করেনা এমন একটি ভ্যাকসিন। সমানভাবে ভাগ করা অন্যদলটির সদস্যদের দেহে ChAdOx1 nCoV-19 ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হবে।
করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে, শিম্পাঞ্জির দেহে সর্দি-কাশির জন্য দায়ি একটি দুর্বল ধরনের ভাইরাস থেকে। মহামারির আগে থেকেই অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীরা মিডল ইস্ট র্যাসপেটেরি ভাইরাস নামক করোনাগোত্রের পুরোনো একটি ফুসফুসের সংক্রামক ভাইরাস প্রতিরোধে এ ভ্যাকসিনের গবেষণা শুরু করেছিলেন। ইবোলা মোকাবিলাতেও এটির উন্নয়ন করছিলেন তারা। এরমধ্যেই বিশ্বে হানা দেয় করোনাভাইরাস। বিশ্বের সবাই যখন নতুন করোনাভাইরাস (সার্স কোভ-২) সহজে দূর হবে না; এ কঠিন সত্য অনুধাবন করলো- ঠিক তখনই নিজেদের চলমান ভ্যাকসিনের গবেষণাকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় পরিবর্তন করেন অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীরা। একারণেই তাদের প্রার্থী ভ্যাকসিন অন্যদের থেকে এগিয়ে।
ভিডিও বার্তায় এরপর ব্যাখ্যা করা হলো; ভ্যাকসিনটি তৈরির প্রক্রিয়া। সেখানে বলা হল; প্রথমে শিম্পাঞ্জির দেহ থেকে সর্দি-কাশির জন্য দায়ি ভাইরাসটি সংগ্রহ করে। তার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা হয়। মানবদেহে এটি যেন নেতিবাচক প্রভাব না তৈরি করতে পারে, সেজন্যেই এ প্রচেষ্টা। এরপর তাতে যুক্ত করা হয় নতুন করোনাভাইরাসের জিন থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন। করোনাভাইরাসের গায়ে কাঁটা সদৃশ যে আবরণ দেখা যায়, তার নাম গ্লাইকোপ্রোটিন। ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়ায় এটাই ব্যবহার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশা, এর ফলে তাদের প্রতিষেধকটি মানবদেহে স্থায়ীভাবে সার্স কোভ-২ প্রতিরোধী প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করতে সমর্থ হবে।
অন্যদলকে দেওয়া হবে MenACWY (নিমেনরিক্স বা মেনভো) নামের একটি নিবন্ধিত ও প্রচলিত ভ্যাকসিন। মেনিনজাইটিস বা সেপসিস রোগ প্রতিরোধে এ ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করা হয়। তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য এটি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রয়োগ করা হবে। যার মধ্যে দিয়ে আসল ভ্যাকসিন কী ধরনের পার্শ্বঃপ্রতিক্রিয়া জন্ম দিতে পারে, তা পরীক্ষা করা হবে। ২০১৫ সাল থেকেই MenACWY যুক্তরাজ্যের সেইসব তরুণদের দেহে প্রয়োগ করা হচ্ছে, যারা সেপসিস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বিশ্বের এমন সব অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। প্রতিবছর হজ অনুষ্ঠানের সময়েও এ টিকা দেওয়া আছে কিনা- সেই সনদ চায় সৌদি আরব।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
ভিডিওটি শেষ হওয়ার পরই আমার যাবতীয় স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও চিকিৎসার ইতিহাস বিস্তৃত বিবরণ দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। এসময় পরীক্ষার জন্য আমার রক্তের নমুনাও নেওয়া হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নানা দিক নিয়ে এরপর আমাকে সই করতে হয় অনেকগুলো নথিতে। সেখানে নানা বিষয়ে সজ্ঞানে আমার সম্মতি চাওয়া হয়েছিল।
কিছু কিছু শর্ত এখানে উল্লেখ করা যায়। যেমন; যেখানে ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে দেহের ওই স্থানের ছবি তোলার অনুমতি, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কাউকে রক্ত দেব না এমন অঙ্গীকার। আমি যদি নারী হই তাহলে গর্ভধারণ করব না, এমন অসংখ্য বিষয়াদি। এত এত শর্ত পড়তে গিয়ে বেশ মুশকিলেই পড়েছিলাম, কিন্তু এর মাঝেই হাসি পেল আরেকটি শর্ত লেখা দেখে। সেখানে লেখা আছে, আমি সজ্ঞানে নিজের নমুনাগুলো অক্সফোর্ডকে উপহার হিসেবে দিতে রাজি আছি। আগেই জানতাম, কিছু কিছু রোগীকে তাদের মলের নমুনাও দিতে হবে, তাই শর্তটি পড়ে হাসি আটকে রাখা নিয়ে বিপদে পড়েছিলাম।
এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আমি বাড়ি ফিরে যাই। নিজেকে তখন আগের চাইতে বেশ জ্ঞানী মনে হচ্ছিল। প্রত্যাশা বাড়ছিল ভেতরে ভেতরে। উৎকণ্ঠা ছিল না; তা বলা যাবে না। বিশেষ করে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর রোগীর দেহে হালকা সর্দি, মাথা ও মাংসপেশি ব্যথা ইত্যাদি মৃদু উপসর্গ দেখা দেবে বলে জেনেছিলাম। তার সঙ্গে আবার জানানো হয়, জুলিয়ান-বাররে সিনড্রোম নামের এক বিরল অথচ মারাত্মক উপর্গের কথা। এতে ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তি চরম অবসন্ন বোধ করেন, যা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণসংশয়ের কারণও হতে পারে। যদিও জানতাম এমন ঝুঁকি খুবই কম। কিন্তু একসঙ্গে এতসব উপসর্গের কথা শোনার ফলেই হয়তো কিছু উৎকণ্ঠা কাজ করছিল আমার মধ্যে।
ভ্যাকসিন গ্রহণের দিন:
এক সপ্তাহ পর আবার যাই সেন্ট জর্জ হাসপাতায়ের সেই জানালাহীন ঘরে। শেষ পর্যন্ত ট্রায়ালে অংশ নিতে পারব কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংশয় কাজ করছিল এদিন। কিন্তু, মিনিট দশকের অপেক্ষার পর তা দূর হলো ইভা গালিজা নামের এক চিকিৎসকের কল্যাণে। তিনিই আমার শরীরে ভ্যাকসিন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করলেন। তার আগে অবশ্য আমার স্বাস্থ্যগত ইতিহাস আরেকবার মেলানো হলো। নেওয়া হয়েছিল রক্তের নমুনা।
কিন্তু মজার বিষয় হল; আমার শরীরে কোন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে;তা গালিজা জানতেন না। পরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই এ বিষয়টি ইঞ্জেকশন দেওয়া চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে গোপন রাখা হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল প্রকাশের আগে তা কাউকেই জানানো হবে না।
সোয়াব টেস্ট আর অপেক্ষার পালা:
এরপরের ধাপ ছিল দীর্ঘ অপেক্ষার। অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের দুটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। প্রত্যেক দলের সদস্যদের; নিয়মিত তাদের দেহে দেখা দেওয়া নানা উপসর্গ জানানো, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং রক্তের নমুনা দানে ভিন্ন দুই সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। ভ্যাকসিন গ্রহণের সাতদিন পর থেকে আমার জন্য এ সময়সীমা নির্ধারিত হয়। বলতে দ্বিধা নেই, এপর্যায় নিয়ে আমি একটু ভয়ও পাচ্ছিলাম। আবার সোয়াবের সোয়াবের মাধ্যমে লালার নমুনা গ্রহণের বিষয়টিও ছিল সাংঘাতিক বিরক্তের।
প্রায়শই ১০ সেকেন্ড ধরে আমার টনসিলের ওপর কটন বাড ঘুরিয়ে নমুনা নিতেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। এরপর ওই একই কাঠি দিয়ে নাকের গভীর পর্যন্ত ঢুকিয়ে নমুনা নেওয়ার যন্ত্রণা সইতে হতো। এসময় মগজের ভেতর তীব্র সুড়সুড়ি বোধ করতাম যেন। প্রক্রিয়াটি ভয়ঙ্কর কিছু না হলেও, আরামদায়ক কিছুও যে নয়, তা নিশ্চিত।
সোয়াব পরীক্ষার পর নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও লিখিত বিবরণ দিতে হয়েছে। কীভাবে চলাচল করেছি, গণপরিবহন ব্যবহার করেছি কিনা!সবকিছুর বিস্তৃত এক ফর্দ দেওয়ার এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া আমাকে আগামী চার মাস মেনে চলতে হবে। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালে গিয়ে রক্তের নমুনা দেওয়ার নিয়ম তো আছেই।
একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝলাম, ভ্যাকসিন তৈরি কতোটা সময়সাপেক্ষ এবং বিস্তৃত ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল। রাজনীতিবিদেরা এটা বুঝতে চান না। তারা মনে করেন, বেশি বেশি টাকা ঢাললেই বুঝি রাতারাতি করোনা প্রতিষেধক তৈরি করা যাবে। সব সমস্যা টাকা দিয়ে সমাধান করা যায় না।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দ্বিতীয় পর্যায় এক হাজার লোকের দেহে সফল হয়েছে। কিন্তু, লাখ লাখ মানুষের দেহে প্রয়োগের শেষ ধাপের আগে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার সফলতা দরকার। এজন্য, যেমন ধৈর্য্য দরকার , তেমনি প্রয়োজন প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি। তবেই শেষ ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ারা সুরক্ষিত থাকবেন। আর বিশ্বমারি মুক্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বিজ্ঞান আরেকধাপ এগিয়ে যাবে।
- সূত্র: বিবিসি
- অনুবাদ: নূর মাজিদ