কোনো রান না দিয়েই ইনিংসে ১০ উইকেট পেয়েছেন ২৫ বোলার!
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৪ বছরের ইতিহাসে আজ ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর, শনিবার একটি অবিস্মরণীয় দিন। কেননা টেস্ট ক্রিকেটের এই দীর্ঘ পথচলায় আজকের আগে মাত্র দুজন বোলারই এক ইনিংসে ১০টি উইকেটের সবগুলোই নিজেরা শিকার করেছিলেন।
১৯৫৬ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৫৩ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ইংলিশ অফ স্পিনার জিম লেকার। এরপর ১৯৯৯ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে ৭৪ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতীয় লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে। আর আজ টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় বোলার হিসেবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের এক ইনিংসে সম্ভাব্য ১০ উইকেটই নিজের করে নিলেন নিউজিল্যান্ডের এজাজ প্যাটেল।
ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঁহাতি স্পিনার এজাজ পূর্ণ করেন তার 'পারফেক্ট টেন'। নিজের জন্মশহর মুম্বাইয়ে মোট ৪৭.৫ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১১৯ রানে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরান ভারতের ১০ ব্যাটসম্যানকে।
বলাই বাহুল্য, ভারত-নিউজিল্যান্ড চলমান এই টেস্ট ম্যাচে যে-ই জয়ী হোক না কেন, এমনকি যদি ম্যাচটি অমীমাংসিতভাবেও শেষ হয়, তারপরও এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় 'টকিং পয়েন্ট' হিসেবে বিবেচিত হবে এজাজের এই 'পারফেক্ট টেন'।
তবে এবার আপনাদের শোনাবো ১০ উইকেট শিকারের আরও কিছু কাহিনি, যেগুলো 'পারফেক্ট'-এর চেয়েও বেশি কিছু। কেননা সেসব ক্ষেত্রে বোলাররা শুধু ১০ উইকেটই শিকার করেননি, বরং বিনিময়ে খরচ করেননি একটি রানও! এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন আপাত অবিশ্বাস্য রেকর্ডের মালিক ২৫ জন বোলার।
তবে হ্যাঁ, যেসব ঘটনার কথা বলছি, সেগুলো কোনোটিই ঘটেনি সর্বোচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সেগুলো ঘটেছে বিভিন্ন দেশের মাইনর ক্রিকেটে। কিন্তু তারপরও, আপনি যে পর্যায়ের ক্রিকেটই খেলেন না কেন, কোনো রান না দিয়েই বিপক্ষ দলের ১০ উইকেটই পাকড়াও করা অসাধারণ কৃতিত্ব, তাই নয় কি?
ক্রিকেটে এমন ঘটনা প্রথম ঘটেছে ১৮৬৭ সালে, ইংল্যান্ডের ব্রড গ্রিন বনাম থর্নটন হিথের মধ্যকার একটি ম্যাচে। সেখানে এ ডার্টনেল কোনো রান ব্যয় না করেই এক ইনিংসের ১০ উইকেটই তুলে নেন। এর এক যুগ পর আরটিপি টার্ন একই মাইলফলক অর্জন করেন পারশোরে অনুষ্ঠিত পারশোর বনাম সুইনডেন'স ইলেভেন ম্যাচে।
উনিশ শতকে একই ধরনের দৃষ্টান্ত দেখা গেছে আরও চারবার। সেই চার কৃতি বোলার হলেন এ হিপগ্রেভ, জে কট্রেল, এফ রে এবং এইচএস থাইন। তারা রেকর্ডগুলো গড়েন যথাক্রমে সিডনি, লিভারপুল, ড্রেটন পার্ক ও সিন্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচে।
এইচএস থাইন বিনা খরচে ১০ উইকেট লাভ করেছিলেন ১৮৯২ সালে। এর ঠিক বছর দশেক বাদে, ১৯০২ সালে ক্যাসল ও জুনিয়র হকসের মধ্যকার ম্যাচে একই কীর্তি গড়েন জে ওয়াটস। এরপর থেকে গোটা বিশ শতক জুড়ে বোলারদের এমন রেকর্ড অর্জন পরিণত হয় নিয়মিত ঘটনায়।
সর্বশেষ এই রেকর্ড ছোঁয়া বোলার হলেন আকাশ চৌধুরী। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে জয়পুরে অনুষ্ঠিত দিশা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বনাম পার্ল অ্যাকাডেমির মধ্যকার একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই রেকর্ডের ভাগিদার হন ১৫ বছর বয়সি বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার আকাশ।
২৫ জন বোলার কোনো রান না দিয়েই ১০ উইকেট পেলেও, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ কৃতিত্বটি জেনিংস টিউনের। ১৯২৩ সালের ৬ মে হাওডেনের ক্লিফ ক্লাবের হয়ে ইস্টারিংটনের বিপক্ষে এক ম্যাচে তিনি ১০ উইকেট নেন, এবং সেই ১০টি উইকেটই এসেছিল বোল্ড আউটের মাধ্যমে।
এদিকে মাইনর ক্রিকেটে কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও খেলেছেন, এমন একজন ক্রিকেটার হলেন অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটার এমা লিডেল। ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে সিডনির ইস্ট পেনরিথে মেট্রোপলিটন ইস্টের হয়ে মেট্রোপলিটন ওয়েস্টের বিপক্ষে ০ রানে ১০ উইকেট নেন তিনি। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলার সময় তিনি ৩ টেস্টে ১২ উইকেট এবং ৩৩ ওয়ানডে আন্তর্জাতিকে ৩২ উইকেট পান। অস্ট্রেলিয়ার ২০০৫ সালের বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডেরও সদস্য ছিলেন তিনি।
নিশ্চয়ই জানার আগ্রহ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে কোনো রান না দিয়েই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি কার দখলে। তিনি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেটার ডেন ফন নাইকার্ক। ২০১৭ সালে নারীদের বিশ্বকাপে লিস্টারের গ্রেস রোডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৩.২ ওভার বোলিং করে কোনো রান না খরচ করেই ৪ উইকেট পান তিনি।
এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি রিচি বেনো। ১৯৫৯ সালে ভারতের বিপক্ষে এক টেস্টে ৩.৪ ওভার বল করে বিনা খরচে ৩ উইকেট নেন তিনি।