চাঁটগাইয়াদের বার্গার আর পিৎজা প্রীতি
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পিৎজা সমান জনপ্রিয়। ইতালিয়ান সুস্বাদু খাবারটি বাংলাদেশেও সব বয়সের মানুষের কাছে পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে বার্গার এখন মধ্যবিত্ত বাঙ্গালির প্রতিদিনের খাবারে পরিণত হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মানুষেরাও সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই এখন নিয়ম করে পিৎজা ও বার্গার সাজিয়ে রাখা হয়।
পিৎজায় সেরা 'পিৎজা হাট'
পিৎজা হাট হলো একটি মার্কিন চেইন রেঁস্তোরা যার আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি রয়েছে। এরা পিৎজা, সালাদ, পাস্তা প্রভৃতি প্রস্তুত করে। শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এর ৬ হাজারের বেশি এবং অন্য ৯৪টি দেশে ৫,১৩৯টির অধিক শাখা রয়েছে। বাংলাদেশে পিৎজা হাটের ফ্র্যাঞ্চাইজি-হোল্ডার হলো ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেড। চট্টগ্রামের ব্যস্ততম জিইসি মোড়ে এর শাখা রয়েছে।
পিৎজা হাট চট্টগ্রাম শাখার জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ করিম উল্লাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "গ্রাহকদের কাছে 'প্যান পিৎজা' সবচেয়ে জনপ্রিয়। চট্টগ্রামেও এটির আন্তর্জাতিক মান অক্ষুণ্ণ রেখেই নিজস্ব রেসিপিতে তৈরী করা হয়।"
তিনি জানান, প্যান এবং থিন ক্রাস্টের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে পিৎজা তৈরী করেন তারা। এর মধ্যে 'ক্লাসিক' ক্যাটাগরিতে একটি পার্সোনাল পিৎজার দাম শুরু হয় ১৩৯ টাকা থেকে ১৯৯ টাকায় (মূসকসহ) এবং প্রতিটি মাঝারি আকারের পিৎজা পাওয়া যাবে ২৬৯ টাকা থেকে ৩৬৯ টাকায়। ফ্যামেলি সাইজের পিৎজার দাম হবে ৪৯৯ টাকা থেকে ৬২৯ টাকা।
একইভাবে, 'ফেভারিটস' ক্যাটাগরিতে একটি পার্সোনাল পিৎজার দাম শুরু হয় ২৪৯ টাকা থেকে ২৮৯ টাকায় এবং প্রতিটি মাঝারি আকারের পিৎজা পাওয়া যাবে ৪৬৯ টাকা থেকে ৫৪৯ টাকায়। ফ্যামেলি সাইজের পিৎজার দাম পড়বে ৮৪৯ টাকা থেকে ৯৬৯ টাকা।
এছাড়া 'সুপার লিমো পিৎজা' নামক এক মিটার লম্বা পিৎজাও তৈরী করেন তারা। 'ফেভারিটস' ক্যাটাগরিতে ছয় ধরনের পিৎজা পাওয়া যায়। যার দাম পড়বে ১ হাজার ৯৯৯ টাকা। এবং 'সুপ্রিমস' ক্যাটাগরিতেও ছয় ধরনের পিৎজা পাওয়া যায়। যার একেকটির দাম পড়বে ২ হাজার ৪৯৯ টাকা।
চিলক্সে তারুণ্যের মেলা
ফাস্টফুডের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল বার্গার। কিন্তু চট্টগ্রামে সবচেয়ে জনপ্রিয় বার্গার কারা বানায়, এটা নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে। তরুণেরা বার্গারের জন্য আজকাল নগরের নাসিরাবাদের 'চিলক্স'কেই বেছে নিচ্ছেন।
চিলক্সের অন্যতম শেয়ার পার্টনার প্রান্থ ভৌমিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০১৯ সালে চট্টগ্রামে চিলক্স এর যাত্রা শুরু। প্রথম থেকেই বার্গারের সঙ্গে সসেজের মেলবন্ধনে ভিন্ন স্বাদে তরুণদের নজর কাড়ে চিলক্স। এখন আমরা ১২ ধরনের বার্গার গ্রাহকদের সরবরাহ করে থাকি। সিসেমি বান এবং ব্রিয়শে বানের সাথে চিজ, সসেজ, বারবি কিউ সস, বিফ বেকন, প্যাটি সহ ৮ ধরনের টপিংস ব্যবহার করে খাওয়া যায়।"
চট্টগ্রামের ইনচার্জ শফিকুর জানান, চিলক্সের 'সিগনেচার বার্গার' হচ্ছে সসেজ অথবা চিজের সাথে বিফ বা চিকেন বার্গার। এখানে সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা থেকে ৬৮০ টাকা দামের বার্গার পাওয়া যায়। এছাড়াও মাত্র ২০০ টাকায় ৬ ফ্লেভারের 'পাংখা উইংস' পাওয়া যাবে।
টেকআউটে ভোজনরসিকদের প্রিয় বার্গার
বার্গারের রেস্টুরেন্ট হিসেবে টেকআউট চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয়। ভিন্ন স্বাদের বার্গার তৈরি করে ভোজনরসিকদের প্রিয় হয়ে আছে তারা প্রায় সাত বছর ধরে।
টেকআউটের জেনারেল ম্যনেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, "২০১৪ সালে যাত্রা শুরুর পর এখন আমাদের ১০টি আউটলেট রয়েছে। চলতি বছরেই চট্টগ্রামে শাখা খোলা হয়। ২০১৭ সালে দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে চালু করা হয় টেকআউটের একটি শাখা।"
তিনি বলেন, 'আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল, ভিনদেশি একটি খাবারকে কীভাবে দেশীয় ফ্লেভার দেওয়া যায়। শুরু থেকেই সেটা করার চেষ্টা করেছি এবং টেকআউটের বার্গারের বিশেষত্ব এটা।'
চট্টগ্রামের সহকারি ইনচার্জ আরমান হোসেইন জানান, তাদের জনপ্রিয় আইটেমগুলোর মধ্যে রয়েছে বিফ চিজ ডিলাইট, বিফ চিজ বার্গার, চিকেন চিজ বার্গার, চিকেন চিজ ডিলাইট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং নানান স্বাদের মিল্ক শেক, উইংস ও স্লাইডস।
সর্বনিম্ন ৯০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকায় এখানে বার্গার পাওয়া যায়।
সাড়া জাগানো বার্গারিটা
তিন লাখ টাকার পুঁজি দিয়ে তিন বন্ধুর ব্যবসা শুরু। প্রথম দিন বিক্রি হয়েছিল ৯ হাজার টাকা।
"ভাঙাচোরা ঘর। সেটাকেই রেস্টুরেন্ট বানিয়ে ফেললাম। না, মন্দ না! তাহলে আমরা পারবো", ঠিক এভাবেই কথাগুলো বলে একটু থামলেন ফাহাদ মাহমুদ সাইফ।
জনপ্রিয় ফাস্টফুড বার্গারের ভুবনে চট্টগ্রামের 'বার্গারিটা' এখন একটি পরিচিত নাম। সাইফ এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের একজন।
সাইফের সাথে আছেন শেখ বাহাউদ্দিন এবং আবদুল্লাহ আল সুমন- তরুণ এই তিন বন্ধু মিলেই চট্টগ্রামে গড়ে তুলেছেন বার্গারের এই রেস্তরাঁ।
নানান স্বাদের ৪০ ধরনের বার্গার প্রস্তুত করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। জানালেন, স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাবারের প্রতিটি উপাদান বাছাইয়ে তারা ভীষণ সতর্ক।
'লাভ অ্যাট ফার্স্ট বাইট' এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ফাস্টফুডের ব্যবসায় সুনাম ছড়িয়েছে বার্গারিটা। প্রতিদিন এই প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে ৩০০ বার্গার বিক্রি হয়। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, কক্সবাজার, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বার্গারপ্রেমীরা ছুটে আসেন বার্গারিটায়।
কাতালগঞ্জ মোড় শাখার ম্যানেজার হোসেন মোহম্মদ শাকিব জানান, "প্রতিদিন ২৫ কেজি চিকেন ও ২০ কেজি করে বিফ প্রয়োজন হয় বার্গার তৈরিতে। এ ছাড়া মাংস, মাশরুম, চিজ ও প্রচুর পরিমাণে ডিম মজুদ রাখেন নিয়মিত। নরম মাংস ব্যবহার করার জন্য তাদের রয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন"।