টোকিওর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে নিউইয়র্কে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে সংসার পাতছেন জাপানি রাজকুমারী মাকো
সাধারণ পরিবার থেকে আসা প্রেমিক কেই কোমুরোকে বিয়ে করে রাজপ্রাসাদ ছেড়েছেন জাপানের রাজকুমারী মাকো। ছেড়েছেন রাজপ্রাসাদ আকাসাকা এস্টেট, রাজপদবি, এমনকি রাজকীয় সুযোগসুবিধাও। এ নিয়ে সরগরম জাপানসহ অনলাইন দুনিয়া।
আট বছরের বাগদান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের প্রেমিক কেই কোমুরোর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন মাকো। জাপানের কঠোর উত্তরাধিকার আইন অনুসারে, রাজপরিবারের কোনো নারী সাধারণ পরিবারের কাউকে বিয়ে করলে তাকে রাজপদবি ছাড়তে হয়।
বিয়ের পর রাজকুমারী মাকো তার স্বামীকে নিয়ে জাপান ছাড়ছেন। জানা গেছে, নিউ ইয়র্কে এক বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেবেন তারা। সেখানে এক ল ফার্মে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন কোমুরো। আমেরিকায় যাওয়ার আগে এই নবদম্পতি থাকবেন টোকিওর এক অ্যাপার্টমেন্টে।
জাপানের রাজপরিবারের কোনো নারী সদস্য রাজকীয় মর্যাদা ত্যাগ করলে তাকে ১৩ লাখ ডলার দেওয়া হয়। কিন্তু সেই অর্থ নিতেও রাজি হননি মাকো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই প্রথম সদস্য হিসেবে এই অর্থ নিচ্ছেন না।
নিজের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা ওঠার কারণে এই অর্থ নিতে অস্বীকৃতি জানান মাকো। শুধু সমালোচনাই নয়, জাপানজুড়ে প্রতিবাদও হয়েছে এ বিয়ের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ মিছিলে প্রদর্শিত একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: 'আমাদের পরিবারকে রক্ষা করুন', 'রাজপরিবার জাপানের আত্মা'।
তবে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে গত মঙ্গলবার অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ের পর্ব সমাধা করেন মাকো ও কোমুরোর। সাদামাটা নীল ফ্রক পরা রাজকুমারী একতোড়া সাদা ফুল নিয়ে বাবা-মাকে বিদায় জানান।
এরপর কোমুরোকে নিয়ে একাই চলে যান রেজিস্ট্রি অফিসে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে নবদম্পতি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তাদের বিয়ের জন্য যারা হতাশ হয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন মাকো ও কোমুরো।
সাধারণ পরিবার থেকে আসা কোমুরোকে বিয়ে করার যুক্তি হিসেবে একটি লিখিত বিবৃতিও পড়ে শোনান মাকো। তিনি বলেন, কোমুরোকে কেন্দ্র করে যেসব 'ভুল' খবর পরিবেশন করা হচ্ছে তাতে তিনি 'ভীত, দুঃখিত'—এবং এর ফলে তিনি অশান্তিতে ভুগছেন।
মাকো আরও বলেন, 'কেইয়ের জায়গা কেউ নিতে পারবে না। আমাদের জন্য এই বিয়ে ছিল অত্যাবশ্যকীয় সিদ্ধান্ত।'
এছাড়া গণমাধ্যমে বাড়াবাড়ি রকমের প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক আক্রমণের প্রভাব পড়েছে মাকোর মানসিক অবস্থার ওপর। রাজপরিবারের সংস্থা ইম্পেরিয়াল হাউসহোল্ড এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাকো এখন মানসিক চাপজনিত কিছু সমস্যায় ভুগছেন।
মাকোর এই ঘটনাকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের বিয়ের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এই যুগলকে বলা হচ্ছে 'জাপানের হ্যারি ও মেগান'।
বিয়ের পর মাকো তার স্বামীর পদবি গ্রহণ করেছেন। এখন থেকে তিনি পরিচিত হবেন মাকো কোমুরো নামে।
সংবাদ সম্মেলনে কোমুরো তার বক্তব্যে বলেন, 'মাকোকে আমি ভালোবাসি। একটাই জীবন, আর সেই জীবনটা আমি আমার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে কাটাতে চাই।'
মাকো ও কোমুরোর প্রথম দেখা হয় ২০১৩ সালে, টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকেই তারা প্রেমে পড়েন। এরপর গোপনে বাগদান সারেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই যুগল তাদের বিয়ের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। মাকো তখন বলেন যে, কোমুরো 'সূর্যের মতো উজ্জ্বল হাসি দিয়ে' তার হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।
তবে কোমুরোকে জড়িয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির গুজব উঠলে তাদের বিয়ে বিলম্বিত হতে থাকে। লোকমুখে চাউর হয়ে যায় যে, কোমুরোর মায়ের বিস্তর দেনা রয়েছে। তাই অর্থের জন্য রাজকুমারীকে বিয়ে করছেন কোমুরো।
অভিযোগ উঠেছিল, কোমুরোর মা তার সাবেক প্রেমিকের কাছ থেকে ৩৫ হাজার ডলার নিয়ে ফেরত দেননি। ওই টাকাটা ঋণ ছিল নাকি উপহার, তা নিয়েই বিতর্ক উঠেছিল। তবে কোমুরো বলেছেন, ওই টাকা ঋণ নয়, উপহার ছিল।
এই বিতর্ক ওঠার পর আইন নিয়ে পড়াশোনার জন্য কোমুরো আমেরিকায় চলে যান। সেখান থেকে স্নাতক করে এখন তিনি নিউ ইয়র্কে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। গত মাসে টোকিও ফেরেন তিনি।
এরপরই বিয়ের ঘোষণা দেন মাকো ও কোমুরো। অবশেষে গত মঙ্গলবার অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন তারা।
- সূত্র: দ্য ডেইলি মেইল