তাহরুন নেসা থেকে ফেরদৌসী কাদরী: ‘এশিয়ার নোবেল’জয়ী বাংলাদেশি যারা
১৭ মার্চ ১৯৫৭। মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি রামোন ম্যাগসেস। একজন অটোমোবাইল মেকানিক থেকে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠা এই সাবেক গেরিলা নেতার সম্মানে, তার মৃত্যুর পরের মাসেই ফিলিপাইন সরকারের সম্মতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক রকফেলার ব্রাদার্স ফান্ডের ট্রাস্টিরা প্রবর্তন করেন 'রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার'। সংক্ষেপে 'ম্যাগসেসে পুরস্কার' নামেই খ্যাত। অনেকে এ পুরস্কারকে 'এশিয়ার নোবেল' বলেও বিবেচনা করেন।
'সরকারি সেবা', 'জনসেবা', 'সামাজিক নেতৃত্ব', 'সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং যোগাযোগে উদ্ভাবনী কলা', 'শান্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়' এবং 'নতুন নেতৃত্ব'- এই ছয়টি শ্রেণিতে প্রতি বছর এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি দেওয়া হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯৫৭ সালের মে মাসে রামোন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন (আরএমএএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য করা হয় ফিলিপাইনের সাত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিকে। পুরস্কারটির বাস্তবায়নে এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানই কাজ করে।
সম্প্রদায়, লিঙ্গ, জাতীয়তা ইত্যাদি পরিচয়ের সীমারেখা পেরিয়ে, এশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের স্বীকৃতি ও সম্মাননা হিসেবে দেওয়া হয় 'ম্যাগসেসে পুরস্কার'। শুরুতে পাঁচটি শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হলেও ২০০০ সালে 'নতুন নেতৃত্ব' নামে আরও একটি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পরের বছর থেকে এ শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়।
ব্যক্তিগতভাবে অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়সীকে তার সম্প্রদায়ের সামাজিক পরিবর্তনে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতি জানাতেই ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ও অর্থায়নে সৃষ্ট হয়েছে নতুন শ্রেণিটি। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত ও পরিচিত কাউকে এই শ্রেণিতে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে না।
বাংলাদেশে ম্যাগসেস...
এই 'এশিয়ান নোবেল' পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয় ১৯৫৮ সালে। এবার পুরস্কারটি পেয়েছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। এ নিয়ে মোট ১২ জন বাংলাদেশি এ সম্মানে ভূষিত হলেন।
বাংলাদেশে প্রথম এ সম্মান বয়ে আনেন সমাজকর্মী তাহরুন নেসা আবদুল্লাহ। ১৯৭৮ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
এরপর এ দেশে এ পুরস্কার আরও বয়ে আনেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ (১৯৮০), গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস (১৯৮৪), গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৮৫), উন্নয়নকর্মী রিচার্ড উইলিয়াম টিম (১৯৮৭), সমাজকর্মী মোহাম্মদ ইয়াসিন (১৯৮৮), সমাজসেবক এঞ্জেলা গোমেজ (১৯৯৯), শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (২০০৪), প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (২০০৫), সেন্টার ফর ডিস্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের (সিডিডি) প্রতিষ্ঠাতা এ.এইচ.এম. নোমান খান (২০১০) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (২০১২)।