নিলামে উঠছে মোগল আমলের দুর্লভ হীরা-পান্নাখচিত চশমা
ভারতে মোগল শাসনামলের দুর্লভ হীরা-পান্নাখচিত একজোড়া চশমা নিলামে বিক্রি করতে যাচ্ছে খ্যাতনামা ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সোথবি'স। চলতি মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হবে এই নিলাম।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি চশমা দেড় থেকে আড়াই মিলিয়ন পাউন্ডে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিলামে বিক্রির পর এগুলো প্রথমে হংকং ও পরে লন্ডনে প্রদর্শিত হবে।
সোথবি'স ফর মিডল ইস্ট অ্যান্ড ইন্ডিয়া'র চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড গিবস বলেন, "রত্নখচিত এই চশমাজোড়া এককথায় অদ্বিতীয় এবং আমাদের সামনে কারুশিল্পের এক অসাধারণ উদাহরণ তুলে ধরে। যিনি চশমাগুলো বানিয়েছেন, কোনো সন্দেহ নেই, তিনি একজন দুর্দান্ত শিল্পী। এমন কোনো চশমাই আমি এর আগে দেখিনি!"
চশমাগুলোর মালিক কে, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সোথবি'স-এর মতে, খুব সম্ভবত এগুলো মোগল আমলে তৈরি। ১৬ ও ১৭ শতকে ভারতে বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তারকারী মোগলরা শিল্প-সংস্কৃতিতে অন্যদের চাইতে ছিল যোজন যোজন এগিয়ে। ভারতজুড়ে অসংখ্য স্থাপনা ও শিল্প নিদর্শন রেখে গেছে তারা, যা আজও আধুনিক মানুষদের চমকে দেয়।
এক বিবৃতিতে সোথবি'স জানায়, "চশমা দুটিতে হীরা ও পান্না বসিয়ে কারুকার্য করা হয়েছে। রত্নদুটির আকার, শুদ্ধতা ও মান দেখেই বোঝা যায়, এগুলো কোনো এক সম্রাটের রত্নশালায় সংরক্ষিত ছিল।"
ধারণা করা হচ্ছে, চশমায় বসানো হীরার লেন্সের হীরাগুলো দক্ষিণ ভারতের গোলকুন্ডা হীরার খনি থেকে আনা হয়েছে। অশ্রুবিন্দু আকৃতির গাঢ় সবুজ পান্নাগুলোর উৎপত্তি হয়েছে এক ধরনের প্রাকৃতিক কলম্বিয়ান পান্না থেকে।
সোথবি'স আরও বলে, "সাধারণ লেন্স যেখানে শুধুমাত্র দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে কাজ করে, সেখানে হীরা বসানোতে চশমায় এক ধরনের আধ্যাত্মিক দ্যুতি চলে আসে। হীরার উজ্জ্বল আলো এক অনন্য অনুভূতি তৈরি করে। ওই সময়ে মনে করা হতো, পান্নার মধ্যে এক ধরনের আরোগ্য ক্ষমতা আছে এবং এটি শয়তানের কুনজর থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।"
নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যে, ইতিহাস ও পুরাণে এ ধরনের চশমার ব্যবহারের কথা আমরা প্লিনি দ্য এল্ডারস-এর 'ন্যাচারাল হিস্টোরি' বইয়ে দেখতে পাই। বইয়ে রোমান সম্রাট নিরোর এরকম সবুজ পাথরের ভেতর দিয়ে গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধ দেখার কথা উল্লেখ আছে।
সম্রাট নিরোর গুরু, সেনেকা প্রতিসরণ, আয়না, অপটিকস ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং ওই চশমাগুলোকে ইতিহাসের একেবারে প্রথম দিকের একটি চশমা বলে মনে করা হয়।