ফাঁকা মাঠের মাঝখানে এক টেবিলের রেস্তোরাঁ
বিশাল মাঠের মাঝখানে মাত্র একটি সুসজ্জিত দৃষ্টিনন্দন টেবিল। হতে পারে তা আপনার পছন্দের রেস্তোরাঁর মতো দেখতেই। কিন্তু শর্ত হলো; একাই সেখানে আপনাকে খেতে যেতে হবে। সঙ্গীসাথি-পরিজন পরিত্যাজ্য। উপায় কি? চেয়ারও তো একটাই।
চলমান বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্ব যখন লকডাউনে তখনও সুইডেন তা নাগরিকদের অধিক সচেতনতায় তা চালু করেনি বটে, কিন্তু দেশটিতে নাগরিকেরাই নিজ উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন।
সুইডিশ এক দম্পতির নতুন উদ্ভাবনটি এসব উদ্যোগে নতুন মাত্রা যোগ করলো। খবর অডিটি সেন্ট্রালের।
বিশ্ব মহামারির ভয়াবহতার মাঝে সবচেয়ে নিরাপদ রেস্তোরাঁর দাবি করেছেন তারা। এটি একটি সাহসী দাবি হলেও, খদ্দেরের নিরাপত্তায় যথেষ্ট সতর্ক ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
রেস্তোরাটিকে স্থানীয় ভাষায় তারা নাম দিয়েছেন 'বোর্ড ফর এন' বা একজনের টেবিল হিসেবে। জনশূন্য ফাঁকা মাঠের মধ্যে এক-চেয়ার টেবিলের এই রেস্তরাটি আগামীকাল রোববার থেকে সুইডেনের মফস্বল শহর রান্সাটেরের একটি মাঠে চালু হতে চলেছে। উল্লেখ্য রান্সাটেরের স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যাও মাত্র ১১৪ জন। অর্থাৎ, সেখানে জনসমাগম বা ভিড়ভাট্টার ঝুঁকিও অনেকাংশে কম।
বোর্ড ফর এন' একা একা খাওয়াটাই উত্তম এমন ভাবনা দ্বারা অনুপ্রাণিত।
রেস্তোরাঁর নিজস্ব ওয়েবসাইট সূত্র জানায়, নিকট ভবিষ্যতের একটা অনিশ্চিত সময় জুড়ে একা একা খাওয়া-দাওয়া করাটাই আপনাদের জীবনে এখন বাস্তবতা। তাহলে কেন একটু সুসজ্জিত টেবিলে বসে আপনি তা উপভোগ করবেন না?
একা খাওয়ার এই দর্শনের উদ্ভাবক দম্পতি লিন্ডা কার্লসন এবং তার স্বামী রাসমুস পার্সসেন। তারা মনে করেন একা খেলে তাদের খাবারের স্বাদে এবং মানের প্রতি মানুষের মনোযোগ পারে। অর্থাৎ, সঙ্গীর সাথে আলাপ বা হাস্যরসের চাইতে খাবারটাই তখন হয়ে ওঠে আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্র।
তাদের এই চিন্তাকেই এগিয়ে নিয়ে যায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অধুনা চল। একারণেই তারা চিন্তাটিকে এবার বাস্তবে রুপ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন।
যেভাবে চলবে একজন খদ্দেরের রেস্তোরাঁ:
'বোর্ড ফর এনে' কোনো কর্মচারী বা ওয়েটার নেই। কাছাকাছি এক রান্নাঘর থেকে ঝোলানো দড়ির মাধ্যমে পিকনিকের খাবার ঝুড়িতে করে খদ্দেরের খাবার তার টেবিলে পৌঁছে যাবে। খাবারের অর্ডার আগে থেকেই বদিয়ে টেবিল রিজার্ভ করে রাখাটাই নিয়ম।
এছাড়াও, বাড়তি সতর্কতা হিসেবে রান্সাটের বাস স্টপ থেকে কিভাবে সামাজিক দূরত্ব এড়িয়ে রেস্তোরাঁর ঠিকানায় পৌঁছাতে হবে খদ্দেরকে সেই সংক্রান্ত নির্দেশনাও দেওয়া হবে ফোনকলের মাধ্যমে। সম্মানিত অতিথি এসে পৌঁছানোর ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই জীবাণুনাশক দিয়ে দুইবার পরিষ্কার করা হবে টেবিল-চেয়ার এবং খাবারের বাসনপত্র।
বাবুর্চি উদ্যোক্তা রাসমুস পার্সসেন নিজেই। তিন কোর্সের নিরামিষাশী আহার প্রস্তুত করবেন তিনি। তবে মেন্যু বা খাদ্যসুচী নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই। শেফ পার্সসেন কিছুদিন পড়পড়ই এতে রদবদল আনার অঙ্গীকার করেছেন।
স্ত্রী লিন্ডা কার্লসন সুইডিশ রন্ধনশৈলী অনুসারে মেন্যুর বিশেষ পদ হচ্ছে; রারাকা যা আসলে এক ধরনের হ্যাশব্রাউনি। আরও আছে ব্ল্যাক অ্যান্ড ইয়েলো নামের একটি প্রধান পদ, যা তৈরি করা হয় সুইট কর্ন এবং সার্পেন্ট রুট নামক এক গাছের শিকর দিয়ে। এসব খাবার শেষে ডেজার্ট হিসেবে থাকছে 'লাস্ট ডেজ অব সামার' নামের ব্লু-বেরি, আইস বাটারমিল্ক এবং ভায়োলা সুগার মিশ্রিত মিষ্টান্ন।
এক টেবিলের রেস্তোরা থেকে অবশ্য মুনাফা করাটা অনেক কঠিন। সেই চেষ্টাও করবেন না ওই দম্পতি। বরং তারা খদ্দেরদের নিজের মনে যা চাইবে সেই অনুসারে বিল নেওয়ার মডেল বেছে নিয়েছেন।