ফ্রাঁসোয়াস বেতনক্যুঁ মেয়ার: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী
২০২১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। সেই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন লরিয়াল ব্র্যান্ডের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়াস বেতনক্যুঁ মেয়ার। তার সম্পদের পরিমাণ চোখ কপালে তোলার মতো।
হ্যাঁ, এই মুহূর্তে ৯২ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক তিনি!
তবে শুধু এটুকুই নয়, ৬৮ বছর বয়সী এই নারী সম্পর্কে জানার আছে আরও অনেক কিছু।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি
ফ্রাঁসোয়াস বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড লরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন শুলারের নাতনি। ১৯০৭ সালে চুল রঙ করার জন্য এক ধরনের সল্যুশন বানিয়ে ইউজিন সেটির নাম দিয়েছিলেন 'ওরিয়াল'। প্যারিসের হেয়ারড্রেসারদের কাছে সেই পণ্য বিক্রি করেন তিনি। পরবর্তীকালে নিজের একটি কোম্পানি হিসেবে রেজিস্টার করিয়ে নেন, যা কিছুদিন পর 'লরিয়াল' নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৫৭ সালে শুলারের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন তার মেয়ে লিলিয়ান বেতনক্যুঁ। তিনি ও তার স্বামী ফরাসি রাজনীতিক আঁদ্রে বেতনক্যুঁ মিলে খুব দ্রুত সমাজের উঁচু কাতারে জায়গা করে নেন।
মায়ের সঙ্গে তিক্ততা
'মেয়ের সঙ্গে আমার আর দেখা হয় না। আমি চাইও না দেখা করতে। আমার মেয়ে এক ধরনের জড় পদার্থ হয়ে গেছে,' ২০০৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন লিলিয়ান। তিনি অবশ্য এখন আর বেঁচে নেই।
জানা যায়, ২০০৭ সালে মায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সেলিব্রেটি আলোকচিত্রী ফ্রাঁসোয়া-মারি বেনিয়ারের নামে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ফ্রাঁসোয়াস। তার অভিযোগ ছিল, মায়ের এই বন্ধু তাদের সম্পত্তির একাংশ দখলের চেষ্টা করছেন। এরপর থেকেই মায়ের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয় তার।
পরবর্তীকালে সেই মামলা 'বেতনক্যুঁ অ্যাফেয়ার' নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলে মামলাটি। শেষ পর্যন্ত বেনিয়ারকে ওই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত জানান, তিনি লিলিয়ানের ডিমেনশিয়া রোগের সুযোগ নিয়ে তার পরিবারের সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক
লরিয়ালের ৩৩ শতাংশ মালিকানা পাওয়া সত্ত্বেও প্রসাধনী জগতের বাইরে বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করেন ফ্রাঁসোয়াস। এর মধ্যে একটি হলো বই লেখা। গ্রিক মিথোলজি থেকে শুরু করে বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও লিখেছেন বিলিয়নিয়ার এই নারী।
১৯৮৭ সালের দিকে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা নিয়ে গবেষণা ও মানবতাবাদী উদ্যোগ প্রচারের লক্ষ্যে 'বেতনক্যুঁ শুলার ফাউন্ডেশন' প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
তারকাখ্যাতি এড়িয়ে
মা-বাবা দুজনকেই নিয়মিত চোখ ধাঁধানো ও জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেখলেও অল্প বয়স থেকেই ফ্রাঁসোয়াস ছিলেন এর ঠিক বিপরীত। এমনকি কিশোরী বয়সেও তিনি পিয়ানো বাজানো কিংবা বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বলে 'ভ্যানিটি ফেয়ার' সূত্রে জানা যায়।
নটরডেম গির্জা সংরক্ষণে সাহায্য
২০১৯ সালের এপ্রিলে এক ভয়াবহ আগুনে প্যারিসের বিখ্যাত মধ্যযুগীয় স্থাপনা নটরডেম গির্জার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গির্জাটির সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজের জন্য লরিয়াল ও বেতনক্যুঁ মেয়ার পরিবার এখন পর্যন্ত ২২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে।
-
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট