বড় হচ্ছে গাঁজার বাজার: উবার, সিগারেট, বিয়ার কোম্পানি বিলিয়ন ডলার নিয়ে হাজির
বিশ্বজুড়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে গাঁজার ব্যবসা। এ বছরের মাঝামাঝি নাগাদ যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বলেছিল, গাঁজাতেই নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখছে তারা।
মার্চে কানাডিয়ান চিকিৎসার জন্য গাঁজা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অরগানিগ্রামের শেয়ার কেনে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। গাঁজা উৎপাদন নিয়ে নতুন গবেষণার জন্য একটি চুক্তিও করে।
এছাড়া সরকারি পর্যায়ে গাঁজা চাষের উদাহরণও আছে। ২০১৮ সালে কানাডা নেশা করার গাঁজা বৈধ করে দেয়। গাঁজা চাষের জন্য সরকারিভাবে বিদেশ থেকে লোক নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণাও দেয়। যদিও এই ঘোষণার পরও কালোবাজারে এর বেচাকেনা হচ্ছে।
কানাডা গাঁজা বৈধ করার পর মনে হচ্ছিল হুড়মুড়িয়ে সবাই গাঁজা ব্যবসায় নেমে যাচ্ছে। গাঁজা ব্যবসা নিয়ে কানাডিয়ানদের এই অতি-উৎসাহকে সে সময় নাম দেওয়া হয়েছিল 'গ্রিন রাশ'। যদিও অল্পদিন পরেই সেই উৎসাহ মিইয়ে যায়।
তবে বৈধ ব্যবসা কমে গেলেও কালোবাজারে বিক্রি এখনও তুঙ্গেই আছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ গাঁজাসেবী এখনও অবৈধভাবে গাঁজা সেবন করে।
অবৈধ গাঁজার রমরমার একটা অন্যতম কারণ হলো, বৈধ গাঁজার দাম অনেক বেশি। আর বৈধ গাঁজা বিক্রির দোকানও কম। ৩০ লাখ বাসিন্দার টরন্টোতে বৈধ গাঁজার দোকান আছে মাত্র পাঁচটি।
তবে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গাঁজা বৈধ করার সুফলও পেয়েছে কানাডা সরকার। গাঁজা বৈধ করে দেওয়ার ফলে কানাডিয়ান অর্থনীতির জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক শিল্পের দুয়ার খুলে গেছে।
২০১৮ সালে কানাডার গাঁজা শিল্পের আকার বেড়ে ৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। দেশটির জিডিপির ০.৩ শতাংশ এখন গাঁজা শিল্পের দখলে।
কানাডা সরকার আশা করছে, এ শিল্প অচিরেই আরও বড় হয়ে উঠবে।
গাঁজায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর বিনিয়োগের কথা তো আগেই বলা হয়েছে। গাঁজার বাজারে বিনিয়োগ করতে এবার এগিয়ে এসেছে উবারও।
কানাডার অন্টারিওর বাসিন্দারা এখন থেকে উবার ইটস ব্যবহার করে গাঁজা কিনতে পারবেন। শিগগিরই কানাডার সব অঞ্চলের মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করে গাঁজা কিনতে পারবে।
উবার ইটস ব্যবহার করে ক্রেতারা পাইকারি বিক্রেতা টোকিও স্মোক থেকে গাঁজা অর্ডার করতে পারবেন।
বর্ধিষ্ণু গাঁজা বাজারের ওপর অনেক আগে থেকেই নজর রাখছে উবার। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে গাঁজা বৈধ করা হলে সে দেশেও গাঁজা বিক্রির ব্যাপারে ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছেন উবারের প্রধান নির্বাহী দারা খোসরোশাহি।
তবে গাঁজা শিল্পের জন্য অন্যতম সুখবরটি আসে ২০১৮ সালে। সে বছর ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পায় এ শিল্প।
বিশাল এই বিনিয়োগ করে কনস্টেলেশন ব্র্যান্ডস। করোনা, মডেলো ও স্ভেদকার-এর মতো পানীয় মালিক এই প্রতিষ্ঠান। কানাডিয়ান গাঁজা কোম্পানি ক্যানপি গ্রোথ-এ এই বিনিয়োগ করেছে কনস্টেলেশন।
কুইন্স মার্কেট ইনসাইটের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, গাঁজার বৈশ্বিক বাজারের আকার ২০২১ সালে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। আর ২০২১ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এই বাজারের প্রবৃদ্ধির হার হবে ২৭ শতাংশ।
জুলাই মাসে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যে বৈধ গাঁজার বাজারের আকার হবে ৯১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
এসব পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ভবিষ্যতে গাঁজার বাজার আরও রমরমা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর মতো আরও অনেক বড় কোম্পানিরই গাঁজায় বিনিয়োগে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।