বিবর্তনের যে ধারায় এগিয়েছে চলচ্চিত্র
আন্দোলন। শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঘর থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে বাইরে বেরোনো বিক্ষুব্ধ জনতার দৃশ্য। মিছিলে স্লোগানে সেখানে রাজপথ উত্তপ্ত। কিন্তু যদি বলা হয় চলচ্চিত্রের আন্দোলন, তা কিন্তু ভিন্ন৷ চলচ্চিত্রের আন্দোলন বলতে এমন সব জোয়ারকে বোঝানো হয় যা পরবর্তী সময়ে বিশ্বে চলচ্চিত্রের গতিপথকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে; কখনো বা পাল্টে দিয়েছে।
চলচ্চিত্রশিল্পের বিবর্তন নিয়ে আমরা খুব মাথা ঘামাই না। তবে তা একদিনে হয়নি৷ অনেক পথ-পরিক্রমা অতিক্রম করে চলচ্চিত্র আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এতে ভূমিকা রেখেছে এসব আন্দোলন। সামাজিক পরিবর্তন, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক উত্তেজনা, জাতীয় পরাজয়ের মতো অনেক উপাদান আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে৷ এজন্যই আন্দোলনগুলো তাদের সময়কার চলচ্চিত্রের প্রেক্ষাপট বুঝতে সাহায্য করে।
নিজ জন্মস্থানের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব চলচ্চিত্রের ধারায় কিছু কালজয়ী সৃষ্টি উপহার দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে অভিনব কোনো কৌশল সংযোজন করেছে, এমন তাৎপর্যপূর্ণ ১২টি চলচ্চিত্র আন্দোলন নিয়ে এখানে কথা বলা হলো।
জার্মান এক্সপ্রেশনিজম (১৯১০-১৯৩০):
১ম বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে গড়ে ওঠেছিল চলচ্চিত্রের এই আন্দোলন। ইউরোপীয় আভা-গার্দ ও দাদাইজম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এফ ডব্লিউ মুরনাওয়ের মতো জার্মান চলচ্চিত্রকাররা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন ঠুনকো সমাজব্যবস্থার চিত্র। সেখানে মানুষের চরিত্রও ভঙ্গুর।
যুদ্ধ-ফেরত সৈনিক ফ্রিৎস ল্যাং এবং রবার্ট উইনেরা তাঁদের চলচ্চিত্রে দেখান চরিত্রদের বিদঘুটে সাজসজ্জা, ক্যামেরার তীর্যক অ্যাঙ্গেল, বিষাদগ্রস্ত-অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। সিনেমার সেই তীব্র বিষণ্নতা মূলত তৎকালীন জার্মানির অভ্যন্তরীণ দৈন্যদশারই প্রতিফলন।
জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট ফিল্ম নসফেরাতু -র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে হরর জনরার উদ্ভব ঘটে। আধুনিক সাই-ফাই যেমন ব্লেড রানার বা দ্য মেট্রিক্স -এ কিংবা আলফ্রেড হিচককের নয়্যার ফিল্মে জার্মান এক্সপ্রেশনিজমের প্রভাব স্পষ্ট। এ ধারার জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্য ক্যাবিনেট অভ ডক্টর ক্যালিগেরি, নসফেরাতু, মেট্রোপলিস, অ্যাম, দ্য লাস্ট লাফ ইত্যাদি।
হলিউডের স্বর্ণযুগ (১৯১০-১৯৬০ এর দশক):
দীর্ঘ সময়ব্যাপী চলমান এ সুবর্ণ সময়কে আন্দোলন না বলে চলচ্চিত্রের একটি 'ধারা' বললে বেশি মানানসই হবে। দু'টি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার সমান্তরালে মার্কিন চলচ্চিত্রের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে ওঠেছিল। ওয়ার্নার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট, এমজিএম, আরকেও, ফক্স স্টুডিওগুলোর হাত ধরে নির্মিত হতে থাকে ব্যবসাসফল ছবি।
সিটিজেন কেইন, ক্যাসাব্লাঙ্কা, দ্য সার্চার্স, স্কারফেস (১৯৩২), রোমান হলিডে, বেন হার, গন উইথ দ্য উইন্ড, ১২ অ্যাংরি ম্যান, ইট'স আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ, ইন আ লোনলি প্লেস, সানসেট বুলেভার্ড সেসময়ের সাড়াজাগানো কয়েকটি চলচ্চিত্র।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে অরসন ওয়েলস, জন ফোর্ড, ভিক্টর ফ্লেমিং, উইলিয়াম ওয়াইলার, বিলি ওয়াইল্ডার, ফ্র্যাংক ক্যাপ্রা, নিকোলাস রে, হাওয়ার্ড হকস অন্যতম। তবে ষাটের দশকের প্রারম্ভে স্টুডিও-র উপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আর চাপ আসতে থাকায়, হলিউডের স্বর্ণযুগের অবসান ঘটে। ইউরোপীয় রেনেসাঁর মতো এসব চলচ্চিত্রেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মানুষ। তারপরও তারকাদের ঝলকানি এবং আড়ম্বরপূর্ণ এসব চলচ্চিত্রে ছিল বাস্তবতার অভাব।
সোভিয়েত মন্টাজ (১৯২০-১৯৩০):
প্রায় সকল চলচ্চিত্রপ্রেমীই মন্টাজের সাথে পরিচিত। সোভিয়েত তাত্ত্বিক ও চলচ্চিত্রকার লেভ কুলেশভের মতে, একটি ধারণা বা আবেগ প্রকাশের জন্য একটি ফ্রেম যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি কয়েকটি ভিন্ন শট একের পর এক জুড়ে দিলে আবেগটা আরো শক্তিশালী হয়৷ এখান থেকেই মন্টাজ তৈরির অবতারণা ঘটে। এটি কুলেশভ ইফেক্ট নামে পরিচিত। এ ধারণার উদ্ভাবন কুলেশভ করলেও, চলচ্চিত্রে মন্টাজকে অভিনব কায়দায় ব্যবহার করা ও এর তত্ত্বকে বিস্তৃত করে সহজবোধ্য করার কাজটি করেছিলেন তাঁরই শিষ্য সের্গেই আইজেনস্টাইন।
অডিয়েন্স পাশাপাশি দু'টো আলাদা ছবি দেখেও তাদের একটি সম্পর্ক গড়ে নেয়। একটি ফ্রেম একা কোনো গল্প বলতে পারে না। কিন্তু পাশাপাশি অনেকগুলো ফ্রেমের মিথস্ক্রিয়া দিয়ে গল্প বলার চেষ্টা করেছিলেন কুলেশভ, আইজেনস্টাইন, জিগা ভার্তভরা। মন্টাজের ব্যবহার দেখা যায় ব্যাটলশিপ পোটেমকিন, অক্টোবর: টেন ডেজ দ্যাট শুক দ্য ওয়ার্ল্ড, ম্যান উইথ আ মুভি ক্যামেরা, দ্য ডেথ রে, মাদার -র মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সোভিয়েত নির্বাক চলচ্চিত্রে।
মঞ্চের সাথে চলচ্চিত্রকে পৃথক করা উদ্ভাবনী এ কৌশলকে আলফ্রেড হিচকক (সাইকো), স্টিভেন স্পিলবার্গ (শিন্ডলার'স লিস্ট), মার্টিন স্করসেজে (রেজিং বুল), ব্রায়ান ডি পাল্মা (আনটাচেবলস) -র মতো নির্মাতারা ভিন্ন কায়দায় ব্যবহার করেছেন। এছাড়া '৮০-র দশকে হলিউড অ্যাকশন ফিল্মে মন্টাজের ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে দেখা গেছে।
ইতালীয় নব্য-বাস্তববাদ (১৯৪৩-১৯৫২):
২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিধ্বস্ত ইতালি। জ্যঁ-লুক গদারের মতে, চলচ্চিত্রকে ভিন্ন রূপ দেওয়ার মাধ্যমে ইতালি আবার তার জাতীয় স্বরূপ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল। ভিত্তোরিও ডি সিকা, রবার্তো রসেলিনি, লুচিনো ভিসকোন্তি-র মতো চিন্তাশীল পরিচালকরা এসময় তৈরি করেন চলচ্চিত্রের নতুন নান্দনিক ধারা: নব্য-বাস্তববাদ। কৃত্রিম সেটে শ্যুটিংয়ের পরিবর্তে সত্যিকার জায়গায় শ্যুটিং, প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার, অপেশাদার অভিনয় শিল্পীর আনাগোনা প্রাধান্য পেয়েছে এসব ছবিতে।
গতানুগতিক ধারার বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্রের পরিবর্তে নির্মাতারা বেছে নেন সমাজের নিচুতলার মানুষের আখ্যান। এসময়ের বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে বাইসাইকেল থিভস, শুশাইন, রোম, ওপেন সিটি, উমবের্তো ডি, ওসেসিয়োনে অন্যতম।
জাপানি চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ (১৯৫০ এর দশক):
২য় বিশ্বযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের পর জাপান পরিণত হয়েছিল বিধ্বস্ত এক ভূখণ্ডে; ভুগছিল পরিচয়ের সংকটে। সেসময় আকিরা কুরোসাওয়া, ইয়াসুজিরো ওজু, কেনজি মিজোগুচি, ইশিরো হোন্দা, মাসাকি কোবায়াশির মতো গুণী চলচ্চিত্রকাররা নবউদ্যমে বাধাহীনভাবে নির্মাণ করে চলেন একের পর এক কালজয়ী চলচ্চিত্র। বিশেষ করে, কুরোসাওয়ার ব্যতিক্রমধর্মী রাশোমন, সেভেন সামুরাই; ওজুর মর্মস্পর্শী টোকিও স্টোরি; মৌলিক ঢঙে নির্মিত হোন্দার গডজিলা-র মত ছবি বহির্বিশ্বে জাপানি সিনেমাকে পরিচিত করিয়েছিল।
যুদ্ধের সময় চলচ্চিত্রে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও, '৫০-র দশকে নির্মাতারা পরিবর্তনকে আপন করে নেন। নির্মিত হয় জাপানের প্রথম অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র দ্য টেল অভ দ্য হোয়াইট সারপেন্ট; শোকিচি এবং তোহোর মতো বাঘা বাঘা স্টুডিওকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন কানেতো শিন্দো; দ্য হিউম্যান কন্ডিশন ট্রিলজি-র মাধ্যমে বিশ্বযুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী জাপানের সর্বগ্রাসী মনোভাবের সমালোচনা করেন কোবায়াশি। জীবন-সায়াহ্নে এসে মিজোগুচি নির্মাণ করেন তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা তিনটি ছবি। কারিগরি দিক থেকে উদ্ভাবনী এবং ভঙ্গিমায় নতুন চলচ্চিত্রে পূর্ণ জাপানের নবজাগরণের এই সময় ফরাসি নবকল্লোলকেও প্রভাবিত করেছিল।
দ্য পোলিশ ফিল্ম স্কুল (১৯৫৫-১৯৬৩):
'৫০-র দশকের শেষভাগে লডজ ফিল্ম স্কুল থেকে উঠে আসেন একদল তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। আন্দজে ভাইদা, রোমান পোলানস্কি, ইয়ার্জি স্কোলিমোওস্কিরা কিছু চিন্তাশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁদের চারপাশকে যুদ্ধ কীভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল তা চলচ্চিত্রে তুলে ধরেন। আ জেনারেশন, কানাল, অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস, প্যাসেঞ্জার, ইনোসেন্ট সরসারারস, নাইফ ইন দ্য ওয়াটার এ ধারার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র। পোলানস্কি '৭০-র দশকে হলিউডেও পরিচিতি লাভ করেন।
ফরাসি নবকল্লোল (১৯৫৮-১৯৬০ এর দশক):
বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র আন্দোলনের মধ্যে নিঃসন্দেহে ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভের নাম অনেক উপরে থাকবে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র জার্নাল কাহিয়ে দ্যু সিনেমা থেকে উঠে আসা একদল লেখক - জ্যঁ-লুক গদার, ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো, এরিক রোমার, ক্লদ শাবরোল, জাঁক রিভেৎ এবং আনিয়েস ভার্দা, অ্যালা রেঁনে এবং জাঁক দেমি-র মতো লেফট ব্যাংক কমিউনিটির পরিচকালকরা এর হাল ধরেছিলেন।
গতানুগতিক ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের নির্মাণশৈলী অনুসরণ না করে তাঁরা তুলে ধরেছিলেন প্রথাবিরোধী চলচ্চিত্র-ভাষা। গল্পকথনের ঢঙ, সম্পাদনা, স্টাইলে অভিনবত্ব আনতে গিয়ে ব্যবহার করেছেন জাম্প কাট, ফ্রিজ শট আর লং টেক। মূলধারার ফরাসি চলচ্চিত্রকে কোনোরকম তোয়াক্কা না করে ডকুমেন্টারি স্টাইলে বানানো এ যুগের অধিকাংশ ছবি। গল্পের গতানুগতিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় গুরুত্ব কমিয়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও কল্পনাশক্তিকে বড় করে দেখা হয়েছে এখানে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে ব্রেথলেস, ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ, মাই লাইফ টু লিভ, হিরোশিমা মাই লাভ, জুল অ্যান্ড জিম অন্যতম।
চেক নবকল্লোল (১৯৬০ এর দশক):
গত শতকের পুরো ষাটের দশক জুড়েই রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করেছে চেকোস্লোভাকিয়াতে। প্রাগ বসন্ত এবং সোভিয়েত আগ্রাসন - সেসময়ের চেক রাজপথ ছিল উত্তপ্ত। মিলোস ফোরমান, ভেরা খিতিলোভা, ইভান প্যাসারের মতো একদল অকুতোভয় নির্মাতা তৈরি করলেন লাভস অভ আ ব্লন্ড, ডেইজিস, দ্য ফায়ারম্যান'স বল, দ্য জোক-র মতো চলচ্চিত্র। কৌতূকচ্ছলে, এক চিমটি পরাবাস্তবতার মিশেলে এসব চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মূলত উঠে এসেছে তৎকালীন কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রের কপটতা।
ব্রিটিশ নবকল্লোল (১৯৫৯-১৯৬৩):
ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ ব্রিটিশ শিল্পী টনি রিচার্ডসন, লিন্ডসে অ্যান্ডারসন, কেন লোচ, জন শ্লেসিঙ্গাররা মিলে গড়ে তুলেছিলেন অঘোষিত এ আন্দোলন। এ ধারার অধিকাংশ ছবিই সাদা-কালো। স্যুডো-ডকুমেন্টারি স্টাইলে ধারণ করা এসব চলচ্চিত্র শ্যুট করা হয়েছে সত্যিকার স্থানে; এক্সট্রার বদলে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা। জীবন যেখানে যেমন সেভাবেই ধারণ করার চেষ্টা লক্ষ্যণীয় এখানে। রুম অ্যাট দ্য টপ, স্যাটারডে নাইট অ্যান্ড সানডে মর্নিং, আ টেস্ট অভ হানি, বিলি লায়ার, কেস-র মতো ছবিতে উঠে এসেছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের আশা-আকাঙ্খা, স্বপ্ন ও অপূর্ণতার কথা।
সিনেমা নোভো (১৯৬০-১৯৭২):
ব্রাজিলে তরুণ পরিচালকদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন সিনেমার এ আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ গ্লবার রোশা। গৎবাধা বাণিজ্যিক সিনেমার বিরোধিতা করে রোশা, নেলসন পেরেইরা দো সান্তোস, জোয়াকিম পেদ্রোরা তৈরি করতে চেয়েছিলেন চিন্তাশীল ও বিকল্পধারার চলচ্চিত্র।সেখানে উঠে এসেছে মানুষের দুর্দশার চিত্র; গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সামাজিক সাম্যের প্রতি। ব্ল্যাক গড, হোয়াইট ডেভিল, এনট্রান্সড আর্থ, ব্যারেন লাইভ, দ্য গানস সেসময়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলচ্চিত্র।
থার্ড সিনেমা (১৯৬০-১৯৭০ এর দশক):
রাজনৈতিক চলচ্চিত্রকে ঘিরে লাতিন আমেরিকায় গড়ে ওঠা এ ধারার সংজ্ঞা দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন দুই চলচ্চিত্রকার ও তাত্ত্বিক ফার্নান্দো সোলানাস ও অক্টাভিও গেটিনো। হলিউডের বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রকে ফার্স্ট সিনেমা এবং ইউরোপীয় আর্ট ফিল্মকে সেকেন্ড সিনেমা বলে গণ্য করেছিলেন তাঁরা। ঔপনিবেশিকতা, স্বৈরশাসন, ব্যক্তিগত সত্ত্বা, জাতীয়তা, বিপ্লব, পুঁজিবাদের মতো বিষয়গুলো এসব চলচ্চিত্রে বারবার লক্ষ করা গেছে।
অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দর্শক-শ্রোতাকে জাগানো, ভাবতে শেখানো এবং পদক্ষেপ তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ করাই এসব চলচ্চিত্রের মূল উদ্দেশ্য। জিল্লো পন্টেকর্ভোর দ্য ব্যাটল অভ আলজিয়ার্স, সোলানাস ও গেটিনোর দ্য আওয়ার অভ দ্য ফারনেসেস, টমাস গ্যেতিরেজ আলিয়ার মেমোরিজ অভ আন্ডারডেভেলপমেন্ট, ওসমান সেমবেনের হাল্লা বিখ্যাত কয়েকটি থার্ড সিনেমা।
জাপানি নবকল্লোল (১৯৫০-১৯৭০ এর দশক):
জাপানের সমাজে যখন উত্তাল পরিস্থিতি, চারপাশে বিরাজ করছে এক ধরনের অস্থিরতা, সেরকম ক্রান্তিকালে শুরু হয় এই আন্দোলন। হিরোশি তেশিগাহারা, সেইজুন সুজুকি, সুসুমু হানি, শোহেই ইমামুরা আর নাগিসা ওশিমা-র মতো চলচ্চিত্রকাররা গতানুগতিক ধারার নির্মাণশৈলীকে প্রত্যাখ্যান করে এগোলেন প্রথাবিরোধী পথে। তাঁদের চলচ্চিত্রে উঠে এল সমাজের অব্যক্ত মানুষের কথা; বলা হলো নৈতিকভাবে স্খলিত চরিত্রগুলোর গল্প। অপরাধীই সেখানে হয়ে ওঠেছে প্রধান চরিত্র।উইমেন ইন দ্য ডুনস, দ্য ফেস অভ অ্যানাদার, ব্যাড বয়েজ, ক্রুয়েল স্টোরি অভ ইয়ুথ, ব্র্যান্ডেড টু কিল, ফিউনেরাল প্যারেড অভ রোজেস সেসময়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র।
ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে চলচ্চিত্র-তাত্ত্বিকরা নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন যে কীভাবে চলচ্চিত্রকে আরো আকর্ষণীয় করা যায়, চলচ্চিত্রকাররা সংযোজন করেছেন উদ্ভাবনী কৌশল, বাস্তবায়ন করেছেন সৃষ্টিশীল-নান্দনিক চলচ্চিত্র। তৈরি করেছেন নতুন কিছু ধারা ও আন্দোলন। এদের মধ্যে আপনার প্রিয় কোনটি?