ভারত বিশ্বকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চায়, তার বিপুল জনগোষ্ঠীর সবাই কি পাবে?
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/09/03/139160-vekcyivyru-1585498637.jpg)
প্রতিদিনই সার্স কোভ-২ নামক নতুন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম টিকা তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান। আর পশ্চিমা নানা দেশের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ উৎপাদনের চুক্তি থাকায় আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলোও। কার্যকর, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর ভারতের মতো কিছু দেশে ব্যাপক মাত্রায় উৎপাদনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে এটি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, এমনটাই পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কিন্তু গবেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের আশঙ্কা, টিকা উৎপাদনে ভারতের যে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা- তা নিয়ে স্থানীয় কোম্পানিগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করে দেশটির বিপুল সংখ্যক ভাইরাস সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতেই হিমশিম খাবে। তার ওপর আবার আছে বিশাল দেশের দুর্গম সকল প্রান্তের মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে প্রতিটি গ্রামে টিকার চালান পৌঁছে দেওয়াটা হবে অনেক কঠিন কাজ।
ভারতে টিকা উৎপাদনের প্রেক্ষাপট:
বিশ্বব্যাপী যেসব ভ্যাকসিন বণ্টন হয়, তার একটি বড় অংশই উৎপাদন করে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য অধিকাংশ উৎপাদন করা হয়। একারণে ভারত উন্নয়নশীল বিশ্বের ৬০ শতাংশ টিকা সরবরাহের উৎস।
তাছাড়া, ভারতের নিজস্ব জনগোষ্ঠীর জন্যেও নানা প্রকার রোগ মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই সিংহভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত বিশ্বের আবিষ্কৃত ফর্মুলায় ভারতেই উৎপাদনে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলো শুরু হয় দেশটির স্বাধীনতার পর থেকেই।
ফলে ভারত কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য টিকার ফর্মুলা অন্য দেশের আগে পাবে, বলে মনে করেন পুনের সিপিসি অ্যানালিটিক্স সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাহিল দেও। তার তথ্য বিশ্লেষণী সংস্থাটি সারা ভারতে কিভাবে টিকা পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছে।
সাহিল জানান, আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রার্থী ভ্যাকসিন সফল হলে, ইতোমধ্যেই সেগুলো ভারতে ব্যাপক উৎপাদনের লক্ষ্যে চুক্তি করেছে বেশকিছু কোম্পানি। অবশ্য, স্থানীয়ভাবেও কিছু টিকা উৎপাদনের প্রচেষ্টা চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, উৎপাদিত ভ্যাকসিনের একটি অংশ নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে কেউ সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী উৎপাদনে যেতে চাইলে তার অনুমতি পাবে না।
বৈশ্বিক ভ্যাকসিন সরবরাহে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তুলে ধরেন লন্ডন স্কুল অব হাউজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন- এর পরিচালক পিটার পিয়ট। গত জুলাইয়ে ভারত সরকার আয়োজিত এক অনলাইন সিম্পোজিয়ামে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ভারতকে ছাড়া বিশ্বকে বাঁচানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব নয়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2020/09/03/118623035_667349403873537_4772802024103338626_n_0.png)
স্থানীয় চাহিদা:
ভারতে করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ন্ত্রণে অতি-দরকারি একটি ফলদায়ক টিকা। ব্যাপক উৎপাদন ও বিপণনও অপরিহার্য। গত ৩০ আগস্ট দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মোট ৭৯ হাজার জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায়, যা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণের ঘটনা। আগামী বছর নাগাদ, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে ভারতেই সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী থাকবে, বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জীবাণু সৃষ্ট রোগটি থেকে মৃতের সংখ্যা হ্রাসে প্রথমেই যাদের দেহে সংক্রমণের ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি- তাদের টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। এ তালিকায় আছেন; স্বাস্থ্য কর্মী, পুলিশ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং দীর্ঘমেয়াদি ও দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। এরা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। সংখ্যায় প্রায় ৪০ কোটি। এ তথ্য দেন ভেল্লোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের টিকা বিশেষজ্ঞ গঙ্গাদীপ কাং। নতুন একটি টিকা উৎপাদন ও বিপণনের প্রথম পর্যায়ের জন্য এ সংখ্যা অনেক বেশি, বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইতোমধ্যেই, কিভাবে সম্ভাব্য টিকা বিতরণ করা হবে তা অনুসন্ধানে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে দেশটির সরকার। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া' নামক একটি সরকারি উন্নয়ন নীতি গবেষণা সংস্থার প্রভাবশালী সদস্য ভিনোদ পল। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন; নানা রাজ্যের প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন নানা সংস্থার সদস্য।
পাশাপাশি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো যেন দ্রুত মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়; সে বিষয়েও তাদের সঙ্গে কাজ করছে ভারত সরকার।
বিশ্বের সরবরাহক:
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউড অব ইন্ডিয়া। ইতোমধ্যেই, প্রতিষ্ঠানটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইস মালিকানার ফার্মা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রার্থী ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়া মাত্রই- এর শত কোটি ডোজ উৎপাদন শুরু করার চুক্তি করেছে। বর্তমানে কার্যকারিতা যাচাইয়ে প্রার্থী ভ্যাকসিনটির তৃতীয় স্তরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল এবং যুক্তরাজ্যে।
চূড়ান্ত এ পরীক্ষায় সফল হলে ভারতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের অর্ধেক নিজ জনসংখ্যার জন্য রাখা হবে, এমন অঙ্গিকার করেছে সিরাম ইনস্টিটিউড এবং কেন্দ্রীয় সরকার- উভয়েই। টিকার বাকি ডোজ বিল গেটস ফাউন্ডেশনের গ্যাভি প্রচেষ্টার আওতায় নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে সরবরাহের অঙ্গীকার করেছেন সিরাম ইনস্টিটিউডের মুখ্য নির্বাহী আদার পুনাওয়াল্লা।
পুনেওয়াল্লা জানান, ''উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এপর্যন্ত ১১শ কোটি রুপি বা ২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি। তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলমান থাকলেও, ইতোমধ্যেই ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও পরীক্ষার জন্য উৎপাদন করা হয়েছে।''
এজন্য ভিন্ন রোগ প্রতিরোধের টিকা উৎপাদনে জড়িত দুটি কারখানাকে কোভিড-১৯ টিকা প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়। এমনতর পূর্ণ সক্ষমতায় প্রতি মাসে টিকার ৬-৭ কোটি ডোজ উৎপাদন করা সম্ভব হবে, বলেও জানান তিনি।
''আগে থেকেই টিকাটি মজুদের সিদ্ধান্ত এজন্য নেওয়া হয়েছে যে, যাতে ট্রায়ালে সফল প্রমাণিত হলে- এর ব্যাপক উৎপাদন নিশ্চিত হয় এবং পর্যাপ্ত টিকার ডোজ আমাদের হাতের নাগালেই থাকে। অক্সফোর্ডের সম্ভাব্য টিকা ব্যর্থ প্রমাণিত হলে আমরা অন্যদের আবিষ্কৃত প্রার্থী ভ্যাকসিন তৈরিতে মনোযোগ দেব'' পুনেওয়াল্লা যোগ করেন।
তিনি জানান, ইতোমধ্যেই আরো চারটি প্রার্থী ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করছে তার কোম্পানি। এর মধ্যে দুটি তাদের নিজস্ব। যার একটি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের গাইথার্সবার্গে অবস্থিত জৈব-প্রযুক্তি কোম্পানি নভোভ্যাক্সের সহায়তায় গবেষণা করা হছে। অপরটি গবেষণায় সাহায্য করছে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত আরেক মার্কিন কোম্পানি- কোডাজেনিক্স।
এছাড়া, হায়দেরাবাদ ভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক বায়োলজিক্যালস ই- বেলজিয়ামের জানসেন ফার্মাটিকার সঙ্গে যৌথ ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ভ্যাকসিনটি এখনও প্রাথমিক সুরক্ষা পরীক্ষার স্তরেই আছে। এছাড়াও, হিউস্টনের বেলর কলেজ অব মেডিসিনের তৈরি একটি প্রার্থী ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যাপারেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বায়োলজিক্যালস ই।
ইন্ডিয়ান ইম্যিউনোলজিক্যালস নামক হায়দ্রাবাদ ভিত্তিক আরেকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে অবস্থিত গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
আরও দুইটি ভারতীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক এবং জায়ডাস ক্যাডিলা তাদের প্রার্থী ভ্যাকসিন নিয়ে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের পরীক্ষা করছে।
চিকিৎসা ও জীব বিজ্ঞানীরা ভারত সরকারের কিছু ভ্যাকসিন রপ্তানি করার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশ যখন ভ্যাকসিনের চালান শুরু থেকেই নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য মজুদ রাখার পদক্ষেপ নিয়েছে। গবেষণাধীন ও সম্ভবনাময় সকল ভ্যাকসিনের এত চালান (উৎপাদনের আগেই) তারা অগ্রিম কিনেছে যা দিয়ে তাদের নিজ দেশের জনসংখ্যাকে কয়েকবার টিকা দেওয়া যাবে।
একারণেই ভারতের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হচ্ছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এ হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন যে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত প্রতিষেধক চলানের একটি অংশ দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দরকার এমন ৪০ কোটি মানুষের চাহিদা পূরণে অনেকটা সময় লাগবে। তারপর থাকবে বাকি ৯০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়। আর প্রতিমুহূর্তেই বাড়ছে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি ও দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মানুষদের কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি। যেটুকু দেরি হবে, তার মধ্যেই প্রধান প্রধান নগর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে করোনার সংক্রমণ। এসব অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
বিতরণের কঠিন চ্যালেঞ্জ:
সাহিল দেও জানান, গ্রামে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করা মানে সমগ্র ভারতকে টিকার আওতায় আনতে হবে প্রথম থেকেই। 'এটা অনেক বড় এক চ্যালেঞ্জ' বলছিলেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউড অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক রাজদীপ গুলেরিয়া। সরকারের গঠিত জাতীয় ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের এ সদস্য বলেন, 'ভারত অনেক বড় এক দেশ। আমাদের যেমন বিপুল জনসংখ্যা, তেমনি আছে অনেক দুর্গম অঞ্চল। যেমন; দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চল এবং লাদাখ- যেখানে হিমালয় পর্বতমালার ভূ-প্রাকৃতিক বাঁধা রয়েছে।
এব্যাপারে টিকা বিশেষজ্ঞ গঙ্গাদীপ কাং বলেন, সমগ্র জনগোষ্ঠীর দেহে নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধী স্থায়ী প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে অনেক বছর লেগে যেতে পারে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ অতীতের টিকাদান কর্মসূচি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সবচেয়ে বড় টিকা প্রকল্প ছিল রুবেলা-হাম প্রতিরোধী ভ্যাকসিন প্রদান। সাড়ে ৪০ কোটি শিশু-কিশোরকে টিকাদানের এ উদ্যোগ ২০১৭ সালে শুরু হয়ে তিন বছর পর শেষ হয়েছে চলতি বছরেই।
গুলেরিয়া বলেন, গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্যাকসিন ডোজ বিতরণে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা কাজে লাগাতে হবে। এজন্য জাতীয় নির্বাচন কার্যক্রম থেকে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা সম্ভব, বলে তিনি মনে করেন। ২০১৯ সালে এক কোটি ১০ লাখ নির্বাচন কর্মী সারা ভারতজুরে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার কাজ করেছেন। এর ফলে কাউকেই দুই কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়নি। ভোটকেন্দ্রের এ বিশাল জালের আওতায় আসেন ৯০ কোটি ভোটার। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে যায় এ সুবিধা। মাত্র ৬ সপ্তাহের ভেতর এ সুবিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়। গুলেরিয়ার পরামর্শ, একইভাবে স্বাস্থ্য কর্মীরা সারা দেশের মানুষের কাছে গিয়ে তাদের জন্য সুবিধাজনক টিকাকেন্দ্র স্থাপন করতে পারেন।
গঙ্গাদীপ কাং অবশ্য বলছেন, মানুষের দ্বারে দ্বারে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া এত সহজ হবে না। এখানে সংরক্ষণের প্রভাব তুলে ধরেন তিনি।
''ভ্যাকসিন শীতল পরিবেশে সংরক্ষণ করতে হয়। এটি দেওয়ার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত বিপুল কর্মী বাহিনী। তাছাড়া, ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য দামি সিরিঞ্জ আর সূচ কিনতে হবে। সরকারকে ভ্যাকসিন ক্রয়েও বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। তবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে দুর্গম অঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে ভ্যাকসিন সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার বিষয়টি। বাস্তবতা এটাই অনেক ভ্যাকসিন পরিবহনের সময়েই নষ্ট হয়ে যাবে'' তিনি যোগ করেন।
সেরাম ইনস্টিটিউড জানিয়েছে, তারা অক্সফোর্ডের প্রার্থী ভ্যাকসিন উৎপাদনে গেলে তার দাম ডোজপ্রতি ২২৫ রুপি রাখতে পারবে। টিকাটির এক ডোজ করেও যদি যথেষ্ট হয়- তাহলেই সবার আগে প্রয়োজন এমন ৪০ কোটি মানুষের জন্য খরচ হবে; নুন্যতম ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। সরকার ইতোপূর্বে অন্যান্য ব্যাধির যেসব ভ্যাকসিন কিনেছে তার কোনটার মূল্য ৬০ রুপি বা এক বোতল পানির দামের চাইতে বেশি ছিল না। একটি ভ্যাকসিনের পেছনে এই প্রথম আমরা ৩ ডলারের বেশি ব্যয় করতে চলেছি, কাং বলছিলেন।
''এর আরো অর্থ দাঁড়ায়, সরকার থেকে বিনামূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা না করা হলে, দেশটির বিপুল দরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী টিকাটি পাবে না। এজন্য দরিদ্রদের টিকার ব্যয় সরকারকেই বহন করতে হবে আর স্বচ্ছলদের নিজ নিজ টিকা কেনার কথা বলা যেতে পারে'' পরামর্শ দেন সাহিল দেও।
তাছাড়া, জাতপাতের ভেদাভেদ, ধর্মীয় বৈষম্য, রাজনৈতিক বিবেচনায় বিঘ্নিত হতে পারে অনেক অঞ্চলের টিকাদান কর্মসূচি।
- সূত্র: নেচার ডটকম