মশা কেন মানুষ পছন্দ করে!
বিশ্বের প্রাণঘাতী প্রাণীদের তালিকায় প্রথম সারিতে আছে মশা। এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি অত্যন্ত ভয়ংকর হতে পারে। এমনকি মশাবাহিত কোনো রোগ নির্মূল করতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োজন হতে পারে।
তবে সব প্রজাতির মশা রোগ ছড়ায় না বা মানুষকেও কামড়ায় না। কয়েক হাজার প্রজাতির মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি এর জন্য দায়ী। একই প্রজাতির মশার মধ্যেও জায়গাভেদে ভিন্নতা দেখা যায়।
অল্প কিছু প্রজাতির এই পার্থক্যের কারণ খুঁজতে গবেষণা করেছেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী। জিকা, ডেঙ্গু ও পীতজ্বরের বাহক অফ্রিকার এডিস এজিপ্টি প্রজাতির মশা নিয়ে গবেষণাটি করেন তারা।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, মূলত ঘনবসতিপূর্ণ শুষ্ক অঞ্চলের মশা মানুষকে কামড়ায়। প্রজননের জন্য মশার আর্দ্রতা প্রয়োজন। আর এই ব্যাপারটি এখন শুধু ধারণা পর্যায়ে নেই, রীতিমতো প্রমাণিত হয়েছে- এমনটা বলেন স্নায়ুবিজ্ঞানী লিন্ডি ম্যাকব্রাইড।
গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায়, প্রতি বর্গ মাইলে ৫০০০ এর বেশি মানুষ বাস করে এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মশার খাদ্যাভ্যাস মানুষের রক্ত নির্ভর। আর এই রক্ত খাওয়ার জন্যই মানুষের আশেপাশে থাকতে চায় মশা।
আবহাওয়া এক্ষেত্রে বড় আরেকটি প্রভাবক। যেসব দেশে দীর্ঘ ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালের পর বর্ষা আসে, এসকল অঞ্চলের মশাও প্রজননের জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল। মশার প্রজননকাল মূলত বর্ষাকাল। গ্রীষ্মকালে শুষ্ক অঞ্চলে পানির অভাবের জন্যই মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কিছু প্রজাতির মশা মানুষের আশেপাশে বসবাস শুরু করে, এবং বিবর্তিত হয় এই অবস্থায় টিকে থাকার জন্য।
জিনোম সিকুয়েন্স থেকে দেখা যায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর নির্ভরশীল দুই ধরনের মশা জেনেটিক্যালি আলাদা। মানুষের উপর নির্ভরশীল এমন প্রজাতি বিবর্তিত হয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে যায়।
গবেষণাটি বিবর্তন কেন্দ্রিক হলেও এর ফলাফল জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখবে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ এধরণের মশার সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাবে, প্রধানত শহরায়নের কারণে।
বিজ্ঞানী লিন্ডি বলেন, "এসব অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন না হলেও শহরায়ণ হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। বড় শহর গুলোতে রোগের প্রাদুর্ভাবে এর প্রভাব স্পষ্ট।"
ড. রোজ জানান তারা এর পরবর্তী ধাপের গবেষণার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, "মশার ইতিহাস আমাদের সাথে জড়িত। সমসাময়িক বিশ্বে মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক বোঝার জন্য মশা একটি কৌতূহলোদ্দীপক মাধ্যম।