যন্ত্রে মিলবে হেঁচকি থেকে মুক্তি!
নিঃশ্বাস আটকে ধরে রাখা থেকে শুরু করে ভয় দেখাতে কোনো বন্ধুর জোরে 'বু' বলে চিৎকার করে উঠা- হেঁচকি থেকে মুক্তির এরকম বহু সমাধানই এসেছে এযাবৎ। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি, তারা এসবের চাইতেও ভালো ও কার্যকরী এক সমাধান আবিষ্কার করেছেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় 'সিঙ্গুলটাস' বা আমাদের বহুল পরিচিত হেঁচকি দেবার সময় আমাদের মধ্যচ্ছদা ও পাঁজরের মধ্যবর্তী পেশী হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে যায়। পরে আকস্মিকভাবে বাতাস ঢুকে পড়ায় ভোকাল ফোল্ড তথা 'শ্বাসরন্ধ্র' খুলে যায়। আর এটি বন্ধ করার জন্যই সে সময় 'হিক' এর মতো শব্দ হতে থাকে যা প্রায়শই আপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় কিংবা বন্ধুদের আমোদের কারণ হয়।
তবে অন্যসব ঘরোয়া টোটকার পাশাপাশি এবার একদল বিজ্ঞানী হেঁচকি বন্ধের নতুন ও আধুনিক এক উপায় নিয়ে হাজির হয়েছেন।
'দ্য ফোর্সড ইন্সপিরেটরি সাকশন অ্যান্ড সোয়ালো টুল' (এফআইএসএসটি) নামের এই যন্ত্রটির পেটেন্ট নেয়া হয়েছে 'হিকএওয়ে' নামে। মাত্র ১৪ ডলার মূল্যের, প্লাস্টিকের তৈরি এই যন্ত্রটি এল-আকৃতির শক্ত একটি স্ট্র যার এক মাথায় একটি মাউথপিস থাকবে এবং অন্য প্রান্তে থাকবে ছোট্ট ছিদ্র আকৃতির প্রেসার ভাল্ভযুক্ত একটি অ্যাডজাস্টেবল ক্যাপ। কোনো ব্যক্তির হেঁচকি উঠতে থাকলে এক গ্লাস পানির মধ্যে এই ডিভাইসটি বসিয়ে দিয়ে এতে চুমুক দিতে হবে।
ডিভাইসটির আবিষ্কারকদের মতে, ট্রায়ালে দেখা গেছে এ 'হিকএওয়ে' ডিভাইসের শ্বাসগ্রহণ সংক্রান্ত শোষণ টুল ৯২ শতাংশ পর্যন্ত হেঁচকি কমাতে সক্ষম।
মূল বিষয়টি হলো, ডিভাইসের মাধ্যমে যখন কেউ পানি খাবে তখন মধ্যচ্ছদীয় স্নায়ু দ্বারা পাতলা ঝিল্লী সংকুচিত হতে বাধ্য করবে। একই সময়ে পানি ভেতরে যাওয়ার ফলে ভেগাস নার্ভ কাজ করতে শুরু করবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই দুটি নার্ভই যেহেতু হেঁচকি উঠার জন্য দায়ী, তাই এগুলো যখন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবে তখন হেঁচকি তোলার প্রক্রিয়া সংঘটিত হবে না। গবেষণার সহ-লেখক, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ সায়েন্স সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আলি সাইফি বলেন, 'এটা তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে এবং কয়েক ঘন্টা এর প্রভাব থাকে।'
ডিভাইসটি মূল্যায়ন করতে গবেষক দল ২৪৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মতামত নিয়েছেন এবং তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ জানিয়েছেন যে, বিগত এক মাসে তাদের অন্তত একবার হেঁচকির সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই জানিয়েছেন যে তারা এই ডিভাইসকে ঘরোয়া পদ্ধতির চাইতে বেশি কার্যকরী মনে করছেন।
তবে এই গবেষণার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গবেষকরা জানান, এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং ফলাফলগুলো সব অংশগ্রহণকারীরা নিজে থেকেই জানিয়েছেন।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান