লিঙ্গবৈষম্য দূর হতে আরও অতিরিক্ত ৩৬ বছর লাগবে: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম
এর আগে একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বিশ্বব্যাপী লৈঙ্গিক সমতা অর্জন করতে ১০০ বছরের কাছাকাছি লেগে যাবে। এবার নতুন একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) জানাল, তাদের ধারণা এ লক্ষ্য অর্জনে নতুন আরও ৩৬ বছর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ সাকল্যে লাগবে ১৩৬ বছর!
ডব্লিউইএফ চারটি সূচকে লৈঙ্গিক সমতার মান নির্ণয় করে থাকে- অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও সুযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। সংস্থাটি দ্বারা পরীক্ষিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২০ সালের পর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সূচকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যবধান বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের সূচক বেড়েছে সামান্যই।
ডব্লিউইএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া জাহিদী প্রতিবেদনে লিখেছেন, "এই প্রতিবেদনটি লিঙ্গ সমতাকে সমন্বয় করে এমন নীতিমালা অনুশীলনের জন্য রাষ্ট্রনেতাদের প্রতি আহবান জানাবে; একই সাথে এটি মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং আমাদের অর্থনীতি এবং সমাজের উপকারের জন্য অবদান রাখবে"।
এছাড়া সংস্থাটির অনুমান, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে লিঙ্গীয় ব্যবধান রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আরও ২৬৮ সময় লাগবে। এই ডেটায় এখনো মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি প্রতিফলিত করা হয়নি, ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও খারাপ কিছুর ইংগিতই দিচ্ছে।
ডব্লিউইএফ সতর্ক করে বলে, " কয়েকটি বড় অর্থনীতি ও শিল্পখাতে লৈঙ্গিক সমতার অগ্রগতি থমকে আছে। কর্মক্ষেত্রে সচল অনেক নারীকেই মহামারীর ফলে গৃহবন্দী হয়ে ঘরে অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে"।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দক্ষ পেশাদারদের মধ্যে নারীদের অনুপাত বাড়লেও, আয়ের বৈষম্য এবং ব্যবস্থাপক পদে নারীদের স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতি এখনও প্রকট এবং একটি সমস্যার শামিল।
মহামারীর সময়ে নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি মাত্রায় চাকরি হারিয়েছেন এবং এখন যখন আস্তে আস্তে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার সাধিত হচ্ছে, তখনো পুরুষদের তুলনায় নারীদের পুনরায় চাকরিতে ফেরার প্রবণতা কম। মহামারীতে বাচ্চাদের স্কুল এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সীমিত হয়ে আসায় নারীদেরকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পেছনে অতিরিক্ত সময় এবং শ্রম দিতে হচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর ফলে অনেক শিল্পক্ষেত্র ডিজিটাইলেশন গ্রহণ করেছে;প্রযুক্তির বিভিন্ন সুবিধা লাভ করেছে। এখানেও নারীরা অবহেলিত। ক্লাউড কম্পিউটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো ক্ষেত্রগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম।
চাকরিক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের এ বিশ্লেষণে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো লিঙ্কডইন।
লিঙ্কডইনের গ্লোবাল পাবলিক পলিসির প্রধান স্যু ডিউক বলেছেন, "দ্রুতগতিতে নতুন নতুন যেসব ভূমিকা কর্মক্ষেত্রে আবর্তিত হচ্ছে, সেখানে নারীদের যথাযথ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হচ্ছে না। বরং মহামারীর সাথে একই সময়ে আমরা লৈঙ্গিক প্রতিনিধিত্বমূলক সমস্যাগুলোও বাড়িয়ে তুলছি"।
তবে সব দেশে লিঙ্গ বৈষম্যের চেহারা এক নয়। নর্ডিক দেশগুলিতে সামগ্রিক লিঙ্গ ব্যবধান সবচেয়ে কম। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড প্রভৃতি। তালিকায় লিঙ্গ সমতায় আমেরিকার স্থান ৩০তম।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্ববর্তী গবেষণায় উত্থাপিত উদ্বেগের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে এই প্রতিবেদনেও। জাতিসংঘ গত সেপ্টেম্বরে অনুমান করেছিল যে, মহামারী থেকে উদ্ভুত সমস্যা ৪৭ মিলিয়ন নারীকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি মেলিন্ডা গেটস বলেন, "এই জনসংখ্যা তো পুরো স্পেনের দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যাওয়ার সমতুল্য"।
- সূত্র-সিএনএন বিজনেস