শিশুদের টিকা পেতে আরো অপেক্ষা
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হয়তো ফাইজারের তৈরি কোভিড-১৯ টিকার জরুরি প্রয়োগ অনুমোদন দেবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। তার কিছুদিনের মধ্যে মডের্নার টিকাও এমন সবুজ সংকেত পেতে পারে।
এসব টিকা উন্নত দেশের বাজারে এলেও, সেগুলো শিশুদের জন্য সহজলভ্য হবে না। এর প্রধান কারণ, টিকা গবেষণার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে শিশুদের অংশগ্রহণ ছিল একেবারেই কম। ফাইজার ট্রায়ালে কিছুসংখ্যক ১২ বছরের শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তাদের সহ অন্যান্য বয়সী শিশুদের মধ্যে টিকাটি কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে- তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাছাড়া অল্প-বয়সীদের মৃত্যুহারও কম যেকারণে তুলনামূলক বয়স্কদের জন্য ফলপ্রসূ টিকা তৈরিতে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মাসেই আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স গবেষকদের প্রতি চলমান ট্রায়ালের পরিধি বাড়িয়ে সেখানে আরও শিশু স্বেচ্ছাসেবী অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানায়। পদক্ষেপটি নিতে দেরি করা হলে শিশুরা অনেক দেরিতে টিকা পাবে, এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করে শিশু চিকিৎসকদের সংস্থাটি।
এব্যাপারে ডিউক ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের অণুজীব বিজ্ঞান ও টিকা গবেষক অধ্যাপক স্যালি পার্মার বলেন, ''শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো নয়। তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অন্য বয়সীদের থেকে অনেকটা আলাদা। এজন্যেই কিছু টিকা বয়স্কদের চাইতে তাদের শরীরে বেশি কার্যকর হয়। ঠিক একইভাবে, অন্যান্য বয়সের ব্যক্তির দেহে ফলপ্রসূ হয় এমন টিকা শিশুদের মধ্যে কাজ করে না। এজন্যেই কম বয়সী (পেডিয়াট্রিক) জনসংখ্যার মধ্যে আলাদা গবেষণা চালাতে হবে।''
এনপিআর'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ:
এনপিআর: বয়স্কদের যে প্রতিষেধক দেওয়া হবে, শিশুদের দেহে কী তার কম পরিমাণে ডোজ দিলেই কাজ করবে বলে আপনি মনে করেন নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন ফর্মুলা দরকার?
স্যালি পার্মার: কোন বিশেষ টিকার ক্ষেত্রে এমনভাবে ডোজ দেওয়া ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। সেই অনুসারে শিশুর বয়স মাফিক পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। টিকার ডোজ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, সেজন্য শিশু জনসংখ্যার মধ্যে আগে তা পরীক্ষা করে নেওয়ার প্রয়োজন আছে।
প্রশ্ন: বয়স্কদের মধ্যে যেভাবে বড় আকারের ট্রায়াল চালানো হয়েছে, শিশুদের জন্যেও কী তবে আমরা একই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে দেখতে পাব?
পার্মার: কিছু ভ্যাকসিন বয়স্কদের মধ্যে চমৎকার কাজ করেছে। এটা একটা ভালো সংবাদ। তাই শিশু জনসংখ্যায় করা পরীক্ষায় একই রকম বা বেশি ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। তাছাড়া, পূর্ণবয়স্কদের ট্রায়ালের তথ্য থেকেও অনেক সহায়তা পাওয়া যাবে। যেমন; সংক্রমণের বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়- সেব্যাপারেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে, ফলে শিশুদের জন্য খুব বড় ট্রায়াল অনুষ্ঠানের হয়তো দরকার হবে না।
প্রশ্ন:কবে নাগাদ শিশুদের জন্য নিরাপদ ও ফলপ্রসূ টিকা বাজারে পাওয়া যাবে বলে আপনি অনুমান করছেন?
পার্মার: ঠিক কতটা সময় লাগবে তা আন্দাজ করা বেশ কঠিন। তবে আমি আশাবাদী। বয়স্কদের মধ্যে যেভাবে রোগ প্রতিরোধে দ্রুত সফলতা এসেছে তা অর্থপূর্ণ ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারপরও আমি টিকা উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে শিশুদের জন্য কাজ করার উৎসাহ দিতে চাই। একইকথা বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যেও বলব। এখন কালক্ষেপণ করার সময় নেই। এখন অবহেলা করা হলে হয়তো আরও কয়েক মাস বেশি সময় লাগবে। এখন ট্রায়ালের উদ্যোগ নেওয়া হলে ২০২১ সালের শেষদিকে শিশুদের জন্য টিকা বিষয়ক পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাবে। তারপর অনুমোদনের প্রক্রিয়া তো আছেই।
- সূত্র: এনপিআর