৯/১১ ঘটনায় ফ্লাইট রুট বদলে যাওয়ায় যেভাবে তাদের প্রেম হলো!
২০ বছর আগে, কন্টিনেন্টাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫-এ করে লন্ডনের গ্যাটউইক থেকে টেক্সাসের হিউস্টন যাচ্ছিলেন নিক মারসন এবং ডায়ান কিরশ্কে। যাত্রাপথে তারা ছিলেন একে অপরের অপরিচিত দু'জন মানুষ।
ফ্লাইটের চার ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় পরে, বিমানের পাইলট ইন্টারকমে ঘোষণা করেন যে তাদের বিমানটি কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডে ডাইভার্ট করা হবে।
কোনো বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে তিনি বলেছিলেন, "মার্কিন আকাশসীমায় সমস্যা আছে"।
বয়স পঞ্চাশের ঘরে থাকা নিক ছিলেন তেল শিল্পে কাজ করা একজন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী। তিনি তার কাজের জন্য টেক্সাস যাচ্ছিলেন।নিউফাউন্ডল্যান্ড কোথায় ছিল সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না।
সিএনএন ট্রাভেল টুডে'কে নিক বলেন, "তার ঘোষণার পর আমি জানালার বাইরে তাকাই। আমি ভেবেছিলাম পাইলট হয়তো আমাদের সত্য বলছেন না। সম্ভবত একটি ইঞ্জিনে আগুন লেগে গেছে এমনটা ভাবছিলাম আমি"।
বিমানটির ঠিক অপর প্রান্তে ছিলেন ডায়ান। ৬০ বছর বয়সী মার্কিন এ নারী তার ছেলের সাথে দেখা করে ফিরছিলেন। ডায়ানের ছেলে মার্কিন বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। সেসময় ইংল্যান্ডে ছিলেন তার ছেলে।
দিনটির কথা মনে করে তিনি বলেন, "আমি ভেবেছিলাম, আমি কখনো কানাডায় যাইনি। এটি একটি অ্যাডভেঞ্চারের মতো মনে হচ্ছিল আমার কাছে"।
দিনটি ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে সন্ত্রাসী হামলার পর সেদিন মার্কিন আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ অবস্থায়, অপারেশন ইয়েলো রিবন নামে একটি প্রচেষ্টার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া দুই শতাধিক বাণিজ্যিক বিমান মোড় নেয় কানাডায়।
তাদের বিমান নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে আসার সাথে সাথে নিক দেখলেন কয়েক ডজন প্লেন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। "অবতরণ করা মোট ৩৮ টি বিমানের মধ্যে আমাদের বিমানটি ছিল ৩৬তম," জানান নিক।
কন্টিনেন্টাল-৫ অবতরণ করার পর, বিমানের ক্যাপ্টেন যাত্রীদের বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এবং কিছু বিমান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং দ্য পেন্টাগন বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে উড়ে গেছে।
"এটি তখন ভয়াবহ মনে হলেও কেউ বুঝতে পারেনি যে তা আসলে কতটা ধ্বংসাত্মক ছিল," বলেন নিক।
২০০১ সালে মানুষ তাদের মুঠোফোনে এ খবর জানতে পারেনি। তখন কারো মুঠোফোনে ছিল না ইন্টারনেট, এবং ফোনগুলোতে আন্তর্জাতিক কভারেজও ছিল না। এমনকি অনেকের কাছে মোবাইল ফোনও ছিল না।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার পরিবার সম্পর্কে চিন্তিত ছিলেন ডায়ান। তাদেরকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারেননি ভেবে দুশ্চিন্তা করছিলেন তিনি।
অনিশ্চয়তার এই অবস্থা চলতে থাকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
যখন বিমানগুলো রানওয়েতে আটকে ছিল, তখন গ্যান্ডার (নিউফাউন্ডল্যান্ডের শহর) এবং তার আশেপাশের শহরগুলোতে স্বেচ্ছাসেবীরা জেটদের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিচ্ছিল। এছাড়া, বিমানের যাত্রীদের জন্য সে অঞ্চলের স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছিল।
গ্যান্ডারে প্রায় ৭ হাজার মানুষ অবতরণ করেছিল, যা শহরটির মোট জনসংখ্যারও প্রায় দ্বিগুণ।
তবে, বিমানগুলো সেখানে ১১ সেপ্টম্বর পৌঁছালেও যাত্রীদেরক বিমান থেকে নামতে দেওয়া হয় ১২ সেপ্টেম্বর। কোনো প্রকারের লাগেজ ছাড়াই বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন যাত্রীরা।
শহরটির স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ডায়ান বলেন, "তারা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল…আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তারা আমাদের যথাযথ যত্ন নিয়েছিল"।
গ্যান্ডার থেকে প্রায় ৩০ মাইল দূরে গাম্বোর একটি ছোট্ট আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিককে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে ডায়ানও সেখানে আশ্রয় নেন।
অবশেষে এ আশ্রয়কেন্দ্রেই বিমানের যাত্রীরা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা সে ভয়াবহ হামলার ফুটেজ দেখে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার সত্যিকারের মাত্রা বুঝতে পেরেছিল।
আশ্রয়কেন্দ্রে কম্বল সংগ্রহের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো লাইনে প্রথম কথা হয় নিক এবং ডায়ানের। সেই অচেনা, অথচ বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গায়, তাদের এ কাকতালীয় ঘটনাটি ছিল মনে রাখার মতই।
"আমি ডায়ানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে আমি তার পাশে বিছানাটি নিতে পারি কিনা, এবং সে বলেছিল 'অবশ্যই'," জানান নিক।
অনারারি নিউফাউন্ডল্যান্ডার্স
পরের দিন সকালে, নিক এবং ডায়ান মুক্ত বাতাসে হাঁটতে বাইরে বের হন।
"আমরা আড্ডা দিয়ে সময় পার করছিলাম। একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করছিলাম আমরা," নিক স্মরণ করেন।
ডায়ানকে একজন সুদর্শনা ভাবা নিক তার সঙ্গে আড্ডা দেওয়া উপভোগ করছিলেন। এদিকে ডায়ানও নিক'কে একজন আকর্ষণীয় ব্যক্তি এবং প্রকৃত ভদ্রলোক হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।
কানাডায় থাকা অবস্থায় তাদের অনেক কথা হয়। উভয়েই ছিলেন তালাকপ্রাপ্ত, এবং উভয়ের সন্তানসন্ততিই ছিল প্রাপ্তবয়স্ক। সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকলেও বেশ মিল ছিল তাদের চিন্তাধারায়।
যখন তারা আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে আসেন, তখন তারা দেখতে পান যে বিছানাগুলো সাময়িকভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সন্ধ্যার বিনোদন অনুষ্ঠান চলছে।
'অনারারি নিউফাউন্ডল্যান্ডার্স' নামক সে অনুষ্ঠানেই তাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যখন তাদেরকে তাদের বৈবাহিক জীবন নিয়ে প্রশ্ন করেন, তখন তারা বুঝতে পারে যে সেখানে উপস্থিত সবাই তাদেরকে বিবাহিত হিসেবে ধরে নিয়েছিল।
উপস্থাপক যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে তারা বিয়ে করতে চান কিনা, তখন ডায়ান হেসে বলেছিলেন, "কেন নয়?"
যদিও ডায়ানের কাছে বিষয়টি ছিল, এক অচেনা জায়গায় স্বাধীন একজন মানুষ হিসেবে নিজের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, কিন্তু তার এই উত্তরটি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছিলেন নিক।
পরের দিন, স্থানীয়রা তাদেরকে সেখানকার একটি দর্শনীয় স্থান, ডোভার ফল্টে নিয়ে যান।
"জায়গাটি ছিল বেশ সুন্দর। নদী ও মহাসাগর মিলিত হওয়ার প্রায় ২০০ ফুট উপরে অবস্থিত সেটি," বলেন ডায়ান।
সেসময় নিকের সাথে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ছিল। সে ক্যামেরায় নিক ইতোমধ্যেই বিমান থেকে যাত্রী নামার মুহূর্তের ছবির পাশাপাশি আশ্রয়স্থলের ছবিও ধারণ করেছিলেন।
কিন্তু তার সে যাত্রায় তিনি চেয়েছিলেন একজন মানুষের ছবি, ডায়ানের ছবি।
নিক বলেন, "আমি যে সে দিনগুলোতে স্বপ্ন দেখছিলাম না, বরং সেসব বাস্তবিকভাবেই ঘটেছিল, তা মনে করানোর জন্য একটি ছবির দরকার ছিল আমার"।
"নিক ক্যামেরা তাক করার পর আমি তার সামনে থেকে সরে যাচ্ছিলাম, কারণ আমি ভেবেছিলাম সে এই সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে চাইছে," ডায়ান স্মরণ করেন।
কিন্তু নিক জানান যে, প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতি কোন আগ্রহ ছিল না তার।
"পরক্ষণেই আমি বুঝতে পারি যে সে আমার প্রতি আগ্রহী ছিল," ডায়ান বলেন।
কিন্তু সে জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা উভয়েই বুঝতে পারেন যে তাদের পরবর্তীতে দেখা করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
ডায়ান বলেন, "আমার একটি সাজানো জীবন ছিল। একটি সুন্দর ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট ছিল আমার।উপভোগ্য চাকরি ছিল এবং সেইসঙ্গে ছিল সহকর্মী ও বন্ধুরা।"
"আমরা রোমান্টিক সম্পর্কের আশায় সে বিমানে চড়িনি," যোগ করেন নিক।
বিদায় বেলা
বিমানগুলো গ্যান্ডারে অবতরণের পাঁচ দিন পর সেগুলো পুনরায় উড্ডয়নের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়।
দিনটির কথা মনে করে ডায়ান বলেন, "আমরা স্কুল বাসে চড়ে যাচ্ছিলাম। সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি যে এসকল অসাধারণ মানুষদের ছেড়ে যাচ্ছিলাম তা ভেবে খারাপ লাগছিল আমার। আমি জানতাম যে আমি তাদের আর কখনও দেখতে পাব না। এবং আমি এটাও জানতাম যে সম্ভবত নিককেও আমি আর কখনো দেখতে পাব না। এসব ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম আমি"।
বিমানে নিক এবং ডায়ান বসেছিলেন একে অপরের পাশে। সেসময় নিক কয়েকদিনের জন্য হিউস্টনে অবস্থান করেন। তিনি হিউস্টন ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে তারা নিজেদের ই-মেইল ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বর বিনিময় করেন।
"ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়া খুব কঠিন ছিল আমার জন্য। এটি ছিল একটি সত্যিকারে বিষণ্ণ অবস্থা," নিক বলেন।
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
নিজ নিজ দেশে ফিরে একে অপরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছিলেন তারা। আটলান্টিকের দু'প্রান্তে বসে নিজেদের রোজকার অনুভূতি ও জীবন সম্পর্কে দীর্ঘ ইমেইল পাঠাতেন নিক এবং ডায়ান।
২০০১ সালের অক্টোবরে, নিক তার অফিসকে মানিয়ে একটি প্রকল্পের কাজ পরীক্ষা করতে হিউস্টনে ফিরে আসেন।
তার এই সফর তাদের উভয়ের মনেই এ বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলেছিল যে তারা একসাথে থাকতে চান।
এক মাস পর, নভেম্বরের গোড়ার দিকে নিক তার গাড়ি থেকে ডায়ানকে ফোন করে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে প্রস্তাবে তৎক্ষণাৎ সম্মতি জানিয়েছিলেন ডায়ান।
তিনি বলেন, "আমরা ভাবলাম যে এটিই ছিল আমাদের ভাগ্যে। আর ভাগ্যের বিরুদ্ধে কে যেতে পারে?"
পরবর্তীতে তারা একসাথে নিজেদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শুরু করেন। ডায়ান তার এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টটি বিক্রি করে একটি বড় বাড়ি কিনে নেন এবং ডিসেম্বরেই নিক তার কোম্পানিকে মানিয়ে বদলি হয়ে হিউস্টনে আসেন।
২০০২ সালের মার্চে নিজের পরিবারের সাথে নিককে পরিচয় করিয়ে দেন ডায়ান। তার পরিবার সাদরেই নিককে গ্রহণ করে নিয়েছিল। প্রথমে অবাক হলেও তাদের এ সম্পর্কটিকে সমর্থন জানিয়েছিল তারা।
২০০২ সালের সেপ্টেম্বর, তাদের প্রথম সাক্ষাতের ঠিক এক বছর পর বিয়ে করেন নিক এবং ডায়ান। তারা হয়ে ওঠেন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মারসন।
এমনকি হানিমুনের জন্য তারা বেছে নিয়েছিলেন নিউফাউন্ডল্যান্ডকেই ।
এক বছর আগে নিউফাউন্ডল্যান্ডবাসীদের আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে একটি ছোট্ আয়োজন করতে চেয়েছিলেন এ দম্পতি। কিন্তু তাদেরকে চমকে দিয়ে সেখানকার অধিবাসীরা অভ্যর্থনা জানায় তাদেরকে।
কয়েক স্তরের বিয়ের কেক, উপহার, এবং মোমবাতির আলোয়" পরিপূর্ণ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তাদের জন্য। এমনকি তাদের জন্য একটি গানও রচনা করেন গাম্বোর মেয়র।
তাদের গল্প প্রকাশ
২০০২ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ডে তাদের ভ্রমণের সময়, এই কথা ছড়িয়ে পড়ে যে "বিমানের লোকদের" মধ্যে দুজন প্রেমে পড়েছে।
সেসময় কয়েকটি গণমাধ্যম নিক এবং ডায়ানের সাথে যোগাযোগ করলেও নিজেদের গল্প প্রকাশের ইচ্ছা ছিল না তখন তাদের।
নিক বলেন, "আমরা 'সারভাইভার্স গিল্টে' ভুগছিলাম। এতগুলো বিপর্যয়ের পর আমরা যা পেয়েছিলাম তাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম না আমরা।"
"যেখানে তিন হাজার পরিবার কাউকে না কাউকে হারিয়েছে, সেখানে আমরা নিজেদের জন্য সুখ খুঁজে পেয়েছিলাম," বলেন ডায়ান ।
অবশেষে, অপারেশন ইয়েলো রিবন সম্পর্কে মার্কিন নিউজকাস্টার টম ব্রোকোর ডকুমেন্টারির অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে তারা নিজেদের গল্প প্রকাশ করেন।
কয়েক বছর পর, নাইন ইলেভেনের দশম বার্ষিকীতে, নিক এবং ডায়ান গ্যান্ডার পরিদর্শনে যান। সেসময় সুরকার-গীতিকার আইরিন সানকফ এবং ডেভিড হেইন তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার সময় নিউফাউন্ডল্যান্ডে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে একটি শো তৈরির জন্য কানাডিয়ান সরকার থেকে পাওয়া অনুদানের কথা জানান তারা।
এভাবেই নিক এবং ডায়ানের গল্পটি 'টনি এবং অলিভিয়ের' পুরস্কার বিজয়ী মিউজিকাল "কাম ফ্রম অ্যাওয়ে"-তে জায়গা করে নেয়।
২০১৩ সালে কানাডায় প্রথমবারের মতো তাদের শো দেখার ঘটনাটি ছিল এ দম্পতির জন্য একটি আবেগঘন অভিজ্ঞতা। তারা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, মিউজিকালটি তাদের গল্পকে কতটা সঠিকভাবে তুলে ধরেছিল এবং ১৩ বছর আগের সে সপ্তাহে নিউফাউন্ডল্যান্ডের পরিবেশকে ধারণ করতে পেরেছিল।
"এটি কেবলই নিউফাউন্ডল্যান্ডের মানুষের উদারতা ও বন্ধুত্বের সাক্ষ্য। এটি একটি ৯/১২ গল্প। ৯/১১ এ যা ঘটেছিল তার পরিণতি ছিল এটি," বলেন ডায়ান।
প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই "কাম ফ্রম অ্যাওয়ে" বিশ্বজুড়ে প্রচারিত হয়েছে এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শো-এর একটি ফিল্মড সংস্করণ গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) অ্যাপল টিভি+ তে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
তারা এ অনুষ্ঠানটি ১১৮ বার দেখেছেন বলে জানান নিক। "ডায়ান বলে, আমরা যতবার এটি দেখি ততবারই নিজেদের বিয়ের সময়কার শপথগুলোকে নতুন জীবন দেই," বলেন নিক।
"জীবনের প্রতিটি দিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন"
৯/১১ এর ঘটনার ২০ বছর পর আজ বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন তখনকার ঘটনাগুলো স্মরণ করছে, তখন নিক এবং ডায়ানের দেখার হওয়ারও দুই দশক পেরিয়ে গেছে। এমনকি তাদের দাম্পত্য জীবনের এখন চলছে ১৯ বছর।
গত দুই দশক ধরে তাদের এই প্রেমের কাহিনী বিশ্বজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রচারিত হওয়ার সময়কালে আলাদা সংস্কৃতির এ দু'জন মানুষ একে অপরের পাশে ছিলেন।
"যদিও আমাদের সংস্কৃতি, এবং বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে পার্থক্য ছিল, কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল। আমরা জানতাম যে আমরা একে অপরকে খুঁজছি। আমাদের মধ্যে ছিল অগাধ বিশ্বাস," বলেন ডায়ান।
নিউফাউন্ডল্যান্ডে পাঁচ দিনের জন্য আটকে থাকা নিক এবং ডায়ান বুঝতে পেরেছিলেন যে, জীবনের প্রতিটি দিন গুরুত্ব সহকারে বেঁচে থাকা উচিত। সে সময় তৈরি হওয়া এ মানসিকতা এখন পর্যন্ত ধারণ করে চলেছেন তারা।
ডায়ান বলেন, "প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে বাঁচুন। কার জীবনে কত দিন বাকি আছে তা কে জানে।"
- সূত্র: সিএনএন