পার্ক, সঙ্গীত ও জিভে জল আনা কেক: বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর ভিয়েনা
আরো একবার বিশ্বের সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করলো অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বার্ষিক র্যাংকিং অনুযায়ী, ৪১৪.৬ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরটিই মানুষের বসবাসের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
এর আগে গত বছর কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে ১২তম স্থানে ছিটকে গিয়েছিল ভিয়েনা। কিন্তু এবছর আবারও নিজগুণে শীর্ষস্থানে চলে এসেছে এটি। বলে রাখা ভালো, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও সবচেয়ে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল ভিয়েনা।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স গ্লোবাল লিভেবিলিটি সূচক ২০২২ অনুযায়ী সেরা দশের বাকি শহরগুলো হলো- কোপেনহেগেন, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ও কানাদার ক্যালগরি (যৌথভাবে তৃতীয়), ভ্যাংকুয়েভার, জেনেভা, ফ্রাংকফুর্ট, টরন্টো, আমস্টারডাম, জাপানের ওসাকা ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন (যৌথভাবে দশম)। জার্মান শহরগুলো নিজেদের অবস্থান সামনের সারিতে নিয়ে এসেছে চলতি বছরের সূচকে। অন্যদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে এবার কিয়েভ পুরোপুরি বাদ গেছে এই তালিকা থেকে।
কিন্তু পাঠকের নিশ্চয়ই জানার আগ্রহ হচ্ছে, কী আছে ভিয়েনা শহরে যা এটিকে শ্রেষ্ঠদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠতম করে তুললো? এখানে বলে রাখা ভালো, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যে বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে একটি শহরের বাসযোগ্যতা নির্ধারণ করে তা হলো- স্থিতিস্থাপকতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো। একজন অভিবাসী হিসেবে যখন আপনি কোনো শহরে থাকার কথা ভাববেন, তখন এই বিষয়গুলোকেই প্রথম বিবেচনায় রাখবেন আপনি।
কিন্তু আপনার হাতে যদি মাত্র এক সপ্তাহও সময় থাকে, ভিয়েনা ওই স্বল্প সময়েই তার নিজ জাদুতে আপনাকে মুগ্ধ করবে! ভিয়েনার সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, হাঁটাচলা করার মতো সুন্দর সিটি সেন্টার ও নান্দনিক ক্যাফেগুলো আপনার উপর প্রভাব ফেলবেই।
কুনসথিসটোরিশেস মিউজিয়াম
ভিয়েনার কুনসথিসটোরিশেস জাদুঘরে একটা পুরো বিকেল কাটিয়ে দিলে আপনার মন্দ লাগবে না। সেখানে দেখতে পারেন হাজার হাজার বছরের পুরনো শিল্প সংগ্রহ। শুধু তাই নয়, শহরের বিশ্বনন্দিত সঙ্গীতের আসরও দেখে নিতে পারবেন সেখানে। মাত্র এক ইউরোর বিনিময়ে টিকিট কিনে আপনি ভিয়েনা স্টেট অপেরা দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন।
কেক চাই! কেক!
কেক খেলে মন ভালো হয়, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়তো নেই। কিন্তু ভিয়েনার বিখ্যাত স্যাশেরটর্টে খেলে অল্প সময়ের জন্য হলেও জীবনটা আরেকটু বেশি সুন্দর মনে হতেই পারে! অ্যাপ্রিকট জ্যামভর্তি এই চকোলেট কেকের আবিষ্কারই হয়েছে যেন আপনার মুখে হাসি ফোটাতে! এর স্বাদ নিতে আপনি স্যাশের বা ডেমেল হোটেলে যেতে পারেন। আবার ক্যাফে ল্যান্ডটমান বা কাফে অল্ট উইয়েনেও পাবেন এই কেক।
তবে সবচেয়ে খুশির কথা হলো, ভিয়েনার জনসাধারণ পর্যটকদের প্রতি খুবই আন্তরিক। ২০১৯ সালে ভিয়েনার তিন হাজারেরও বেশি অধিবাসীর উপর চালানো এক জরিপ অনুযায়ী, নব্বই ভাগেরও বেশি মানুষ জানিয়েছে, ভিয়েনা শহর, এর বাসিন্দা ও অর্থনীতি পর্যটন শিল্প থেকে উপকৃত। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, পর্যটকদের দ্বারা তাদের দৈনন্দিন জীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।
স্থানীয়দের মতো করে ভিয়েনাকে উপভোগ করতে চাইলে সোজা চলে যেতে হবে ভিয়েনার সবুজ বন-বনানীতে। সাধারণত পর্যটকেরা কম যান, এমন একটি জায়গা হলো অগার্টেন, যেখানে রয়েছে পোর্সেলিন জাদুঘর এবং মুথ কনসার্ট হল; এবং সেখানে ভিয়েনা বয়েজ কয়ার নিয়মিতই পারফর্ম করে। তাই এক ঢিলে অনেক পাখি মারার একটি উপায় হচ্ছে এখানে ভ্রমণ!
সূত্র: এমএসএন