বসতবাড়ি বিক্রির দুই ঘণ্টা আগে লটারিতে কোটি রূপি পেলেন ঋণের দায়ে ডুবে থাকা এক ভারতীয়!
ভারতের কেরালা রাজ্যের কাসারগড় শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ বাভাকে যখন তার বন্ধু গণেশ ফোন দিয়ে জানালেন তিনি লটারিতে এক কোটি রূপি জিতেছেন, তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলেন বাভা। লটারি জিতে ভাগ্য ফেরানোর খবর নতুন কিছু নয়, কিন্তু বাভা ও তার পরিবারের কাছে এটা ছিল প্রায় অলৌকিক ব্যাপার! কারণ এই সুখবর পাওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই নিজের একমাত্র বসতবাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ছিল ঋণের ভারে জর্জরিত বাভার!
গত ২৫ জুলাই বাভার বন্ধু গণেশ যখন তাকে ফোন করে লটারি জেতার খবর জানান, এক মুহূর্তে সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গিয়েছিল তার। কারণ সেদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় একজন ক্রেতার সাথে দেখা করার কথা ছিল তার। কথা ছিল, সেদিনই বাড়ি বিক্রির কথা পাকাপাকি হবে এবং অগ্রিম বায়নার টাকা পাবেন বাভা। কিন্তু তখনো তিনি জানতেন না, একটা ফোন কলেই বদলে যাবে তার ভাগ্য!
একসময় ঋণের দায়মুক্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারই ছিল বাভার। তখন ভবন নির্মাণকাজে কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেখানে মন্দা চলায় এবং ২০২০ সালের শুরুতে ভারতসহ সারা বিশ্বে কোভিড মহামারির ভয়াল থাবায় আরো শোচনীয় অবস্থা হয় বাভার।
এরপর কনট্রাক্টরের কাজ ছেড়ে অন্যান্য কাজ খুঁজতে থাকেন তিনি, সেই সাথে ঋণের পাহাড়ও উঁচু হতে থাকে। কারণ মানুষের কাছে থেকে ধার-দেনা করেই এতদিন সংসার চালাতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। বাভার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুজনের সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও সন্তানদের বিয়ের খরচ বহন করতে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, ভালো চাকরির আশায় এক ছেলে কাতার যাওয়ার সময় তাকেও ঋণ করে টাকা দিয়েছেন বাভা।
বাভার মনে আশা ছিল, শীঘ্রই তিনি ভালো চাকরি পাবেন এবং ঋণ পরিশোধ করে ফেলবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি, বরং চলতি বছরের জুলাইয়ে তার ঋণের পরিমান দাঁড়ায় ৫০ লাখ রূপি!
"সন্তানদের বিয়ের খরচের জন্য আমার ১০-১৫ লাখ রূপি ধার করতে হয়েছে। বহু মানুষ আমার কাছে টাকা পেত, কিন্তু সেগুলো পরিশোধের উপায় ছিল না আমার", বলেন মোহাম্মদ বাভা।
অবশেষে কোনো উপায় না দেখে বাড়ি বিক্রির কঠিন সিদ্ধান্তটি নিতে হয় বাভার পরিবারকে। এমনকি বাড়ি বিক্রির পর থাকার জন্য ভাড়া বাসাও দেখে রেখেছিলেন বাভা।
বন্ধু গণেশের ফোন করার মুহূর্তটা কোনদিনও ভুলতে পারবেন না বাভা। সেদিন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে গণেশের ম্যাসেজ পান তিনি। গণেশ তাকে সেদিনের লটারির ফলাফল জানাচ্ছিলেন। এরপরেই আসে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত! বাভা বলেন, "লটারির খবর শুনে আমার এত স্বস্তি লাগছিল! আমি যে কতটা আনন্দিত হয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।"
এদিকে লটারিতে এক কোটি রূপি জিতলেও তার পুরোটা হাতে পাচ্ছেন না বাভা। কর কেটে নেওয়ার পর ৬৩ লাখ রূপি পাবেন তিনি। যদিও ঠিক কবে তিনি সেই টাকা হাতে পাবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে লটারি জেতার সাথেসাথেই নিজ মহল্লায় তারকা বনে গেছেন বাভা! পাওনাদারদের তাগাদা-গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে না ভেবেই তিনি খুশি। তার ভাষ্যে, "আমি লটারি জেতার পর পাওনাদাররা চুপ হয়ে গেছে। যখন আপনার কাছে টাকা থাকে না, তখন মানুষ বারবার টাকা দাবি করতে থাকে। কিন্তু যখন জেনে যায় যে আপনার কাছে টাকা আছে, তখন তারা চুপ হয়ে থাকে।"
ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে লটারি অবৈধ হলেও, কেরালায় কঠোর নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে এখনো লটারি কেনাবেচা হয়। বহুদিন যাবতই লটারির মাধ্যমে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে চাইছিলেন বাভা। তিনি জানান, একটা লটারি জিততে তিনি মরিয়া হয়ে ছিলেন। কিন্তু তা হচ্ছে না দেখে শেষ পর্যন্ত বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
বন্ধু গণেশের ছোট্ট দোকান থেকে নিয়মিত লটারির টিকিট কিনতেন বাভা। পুরো এক বছর ধরে প্রতিদিন লটারির ফলাফলের খোঁজ নিতেন বাভা, কিন্তু প্রতিদিনই হতাশ হতে হতো তাকে। তারপর কিছুদিন আগে যখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে, তখন গণেশও বন্ধুর জয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন! সাথেসাথে বাভাকে ফোন দিয়ে বলেন, 'অবশেষে তুমি বেঁচে গেছো!"
হ্যাঁ, ঠিক এই কথাই বলেছিলেন গণেশ। আর সত্যিই তো, বাড়ি বিক্রির কয়েক ঘন্টা আগে লটারি জিতে তো বেঁচেই গিয়েছেন বাভা!
লটারির টাকার অংক বেশি হলেও ঋণ পরিশোধের পর বাভার হাতে খুব বেশি টাকা অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু বাকি টাকাটা ভালো কাজে ব্যয় করতে চান তিনি। বন্ধু গণেশকে একটি বাড়ি কিনতে সাহায্য করতে চান তিনি।
"গণেশ নিজেও অনেক কষ্ট করছে কারণ তারও নিজের বাড়ি নেই", বলেন বাভা। আর সেই সাথে কিছু টাকা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন কেরালার এই বাসিন্দা।
সূত্র: বিবিসি