দেশীয় সরঞ্জাম আর গ্রামীণ কারিগরদের হাতে তৈরি যে দৃষ্টিনন্দন স্কুল
বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের পাশে মাটি রঙা দোতলা দালানের স্কুলঘর। ঘাসে ঢাকা শান্ত মাঠ পেরিয়ে ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই কানে আসে ক্ষুদে কণ্ঠে সুর করে নামতা পড়ার শব্দ। দুষ্ট চোখে কেউ কেউ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে জানলা দিয়ে। বৃহস্পতিবারে হাফ স্কুল, তাই আগেভাগেই ছুটির ঘণ্টা শোনার তাড়া মনে। ভর দুপুরের নির্জনতা খুন করে সেই ঘণ্টা বেজে উঠতেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে সবাই এক ছুটে মাঠে। দৌড়ঝাঁপ, খুনসুটি আর খেলার শেষে বাড়ি ফেরার পথে পা বাড়ায় তারা।
চাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া বাজারের পাশে অবস্থিত অনন্য শিক্ষাপীঠ শাহাবুদ্দিনন স্কুল এন্ড কলেজের চিত্র এটি। স্থাপত্যশৈলীর অবদানে যে বিদ্যালয়টি কয়েকবছর ধরেই চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্থানের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে। আর দশটি সাধারণ স্কুল থেকে শুধু দর্শনধারীই নয়, গুণবিচারেও আলাদা শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের এই বিদ্যাপীঠ।
বিদ্যালয়ের নার্সারি পড়ুয়া শিক্ষার্থী মরিয়মের কাছে এই স্কুলের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হলো "কেলাসরুম"। হলুদ, সবুজ, কমলা আর মেটে রঙের জানলায় ঘেরা রঙিন ক্লাসরুমগুলো বেশ খোলামেলা। জানলার উপর দেয়াল না তুলে ফাঁকা নেটের ব্যবস্থা করায় ক্লাসে সারাক্ষণই চলে আলো-হাওয়ার খেলা।
কেজি ক্লাসের শিক্ষার্থী আবরারও মরিয়মের সাথে তাদের "কেলাসরুম"-এর শ্রেষ্ঠতা নিয়ে একমত। তবে স্কুলঘরের বারান্দা আর সিঁড়ির ফাঁকে লুকোচুরির জায়গাটাও তার খুব প্রিয়। স্কুল নিয়ে তাদের গর্বের শেষ নেই।
দেশের অন্যতম স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ডের স্থপতি লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজের নকশায় ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের এই স্কুলটি। স্থপতিদের দলে আরো ছিলেন নবী নেওয়াজ খান, জুবায়ের হাসান, তাহলিল বিন রেজা, কাফিল সাদ্দাম হোসেন ও মেহনাজ চৌধুরী। স্থাপনাটির স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ছিলেন মীর মোশারফ হোশেন চৌধুরী।
লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজের নিজের প্রিয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই স্কুলটি। স্কুলের কাজ শেষ হওয়ার পর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অঢেল প্রশংসাগুলো তার সেরা প্রাপ্তি হিসেবে মনে করেন। স্কুল বানানোর নানা অভিজ্ঞতা তিনি জানিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে।
প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান
কাজের সূত্রে আগে থেকেই পরিচয় ছিল ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন আর স্থপতি রিয়াজের। শাহাবুদ্দিনের গ্রামের বাচ্চাদের জন্য স্কুল তৈরি করতে ভরসার জায়গা ছিল তাই আর্কিগ্রাউন্ড। স্থপতি রিয়াজের ভাষ্যে, "প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতর স্কুলের জন্য নির্ধারিত জায়গাটা ছিল পুরোটাই সবুজে ঢাকা। সেখানে একটা ইট-পাথরের সাধারণ দোতলা বিল্ডিং বানালে জায়গাটার আবহটাই নষ্ট হয়ে যেত।
"প্রকৃতিকে ডিস্টার্ব করে বিল্ডিং না বানিয়ে এমন কিছু বানাতে চাচ্ছিলাম যেটা নেচারের সাথে ব্লেন্ড হিয়ে যাবে। এখানে সাদা বা লাল রঙের কোনো দালান করলে তা আলাদা হয়ে চোখে পড়তো। কিন্তু আমি তা চাইনি। আমার কাজের মাধ্যেমে প্রকৃতির মাঝে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইনি।"
গ্রামের প্রকৃতির সাথে মিলিয়েই স্কুলঘরের রঙ করেছেন মাটির রঙে। ইট-পাথরের ভবন হলেও তাই প্রকৃতির সাথে বৈপরীত্য সৃষ্টি করেনা স্থাপনাটি।
"শিশুদের জন্য রঙিন পরিবেশ তৈরি করতে আমরা প্রকৃতির রঙ দিয়ে সাজাতে চেয়েছি স্কুলটিকে। শিশুরা পরিবেশ থেকে যেসব রঙের সাথে আগে থেকেই পরিচিত সেগুলোই ব্যবহার করেছি। যেমন- পাতার জীবনচক্রের রঙ অনুসারে রেখেছি জানলা আর প্যানেলগুলোর রঙ। একটি পাতা যখন কুড়ি অবস্থায় থাকে তখন এর রঙ হয় লেমন, এরপর আস্তে আস্তে সবুজ হয়, হলদে হয় আবার লালচে হয়ে ঝড়ে পড়ে। এইসব রং-ই প্রাধান্য পেয়েছে স্কুলটিতে।"
উপরতলায় ঢালাই ছাদের ব্যবস্থা না করে গ্রামীণ আবহ অনুযায়ী টিনের ছাদ দেওয়া হয়েছে। কাঁচের স্লাইডের জানলা ব্যবহার না করে এদেশের আবহাওয়ার উপযোগী খোলা জানালা রাখা হয়েছে স্কুলঘরে। উত্তর-দক্ষিণমুখী ভবনটিতে তাই আলো বাতাসের কমতি হয় না কখনো।
শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের ১১৬ শতাংশ জায়গার ভেতর ৬০০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে স্কুলভবনটি অবস্থিত। নিচতলায় চারটি ক্লাসরুম আর টিচার্সরুম, দোতলায় আছে আরো চারটি ক্লাসরুম। স্কুল মাঠের একপাশে অবস্থিত শহীদ মিনার।
প্রশস্ত বারান্দা
গ্রামের শিশুদের কাছে অনেকটাই অচেনা মনে হতে পারে দোতলা স্থাপনা। উপরের তলার ক্লাসরুমে বসে তারা যেন মাটি থেকে নিজেদের খুব একটা দূরে না ভাবে সে চিন্তায় ক্লাসরুমের চারদিকে লাগোয়া প্রশস্ত বারান্দা রাখা হয়েছে।
বারান্দায় থাকা বেঞ্চে বসে আড্ডা দেওয়া কিংবা ছোটাছুটি করে খেলার সময় একে মাঠের অংশ বলেই মনে হয় তাই। বারান্দার সিলিঙয়ের সাথে বাঁশের ঝুড়ির ভেতর বৈদ্যুতিক বাতি ঝুলানোর ব্যবস্থা কর হয়েছে। যা প্রাকৃতিক আবহের সাথে নান্দনিক দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
ছুটির সিঁড়ি
দোতলায় ওঠা-নামার জন্য স্কুল ভবনে রয়েছে দুইটি আলাদা সিঁড়ি। একটি ভবনের ভেতর দিকে, আরেকটি দোতলার এক পাশের করিডোর থেকে সরাসরি নেমে গেছে মাঠের উপর। স্থপতি লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ এই সিঁড়িকে নামকরণ করেছেন "ছুটির সিঁড়ি"।
"খোলা এই সিঁড়ি দিয়ে ছেলে-মেয়েরা এক ছুটে মাঠে নামতে পারবে, আবার ক্লাসের জন্য দৌড়ে উপরেও উঠে যেতে পারবে। দোতলার সাথে মাঠের দূরত্ব আরো কমে আসে এই সিঁড়ির জন্য। ছুটির ঘন্টা শুনেই বাচ্চারা এই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে বাড়ি যেতে পারবে। একটা স্বাধীনতা বোধ জড়িয়ে আছে এর সাথে।
সিঁড়ি কিন্তু বাচ্চাদের একটা খেলার অনুষঙ্গও। তারা সিঁড়ি দিয়ে উঠবে, নামবে, খেলবে-সেই চিন্তা থেকে আমরা এই ছুটির সিঁড়ির নিচে গুহার মতো একটা খোলা জায়গা রেখেছি। সিঁড়ির গায়ে দুইটা রাউন্ড পাঞ্চও আছে। যেখানে ঢুকে বাচ্চারা খেলতে পারবে," বলছিলেন রিয়াজ।
গড়তে চেয়েছেন শেখার জায়গা হিসেবে
বিদ্যালয় শুধু ক্লাসরুম থেকে পুঁথিগত শিক্ষা অর্জনের জায়গা না। এখানকার পরিবেশও শিশুর শেখার একটা বড় মাধ্যম। তাই শাহাবুদ্দিন স্কুলের পরিবেশ যেন শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে সেভাবেই একে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা ছিল আর্কিগ্রাউন্ডের স্থপতিদের।
রিয়াজ বলেন, "প্রকৃতিকে অসম্মান করে তো আমরা টিকে থাকতে পারব না। কোনো জায়গায় প্রাকৃতিক কোনো সম্পদ থাকলে সেটিকেই সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাকৃতিক সম্পদ সরিয়ে মানুষের স্থাপনা করা যাবে না। প্রকৃতিকে সম্মান করার এই ধারণাটা শিশুদের মনে গেঁথে দিতেই আমরা স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগিয়েছি।
স্কুল ভবনের ভেতর এই গাছ প্রকৃতির সাথে সহাবস্থানের ধারণাকে আরো দৃঢ় করে। শিশুদের প্যাসিভ লার্নিং-এর জায়গা হিসেবে স্কুলের পরিবেশটা সাজাতে চেয়েছি আমরা।"
স্কুলের মাঠেই মসজিদ
"সাধারণত ছুটির পর বিকেল বেলায় স্কুল কম্পাউন্ড একটা ডেড স্পেসে পরিণত হয়। গ্রামের স্কুলের মাঠে হাটের দিনে বাজার বসে। এতে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। শাহাবুদ্দিন স্কুল কম্পাউন্ডেই তাই একটা মসজিদ নির্মাণ করেছি আমরা।
৩০০০ বর্গফুটের মসজিদটি খোলামেলা করে বানাতে চেয়েছি। পাঁচ ওয়াক্ত গ্রামের মুসল্লিরা নামাজ পড়তে আসলে স্কুলের পরিবেশটা খালি থাকবে না আর। এতে গ্রামের মানুষও স্কুলটিকে তাদের নিজের বলে ভাবতে পারবে।
"মসজিদে বেশি মুসল্লি হলে স্কুলের মাঠেও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা যাবে। খেলার মাঠ আর মসজিদের আশেপাশে বসে আড্ডা দেওয়ার জায়গাও রাখা হয়েছে। যেন গ্রামের মানুষ অবসরে এসে গল্প করতে পারেন এখানে," বলেন স্থপতি রিয়াজ।
দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির সামনের অংশে আছে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখার ব্যবস্থা। এই পানিতে মুসল্লিরা ওযু থেকে শুরু করে গোসলের কাজও সারেন অনেক সময়!
দেশীয় সরঞ্জাম আর গ্রামীণ কারিগর
স্কুলের নকশা থেকে শুরু করে তৈরির সরঞ্জামাদিতে দেশীয় সংস্কৃতি প্রাধান্য পেয়েছে সব ক্ষেত্রেই। ইট, মেটালের পাশাপাশি কাঠ, বাঁশ আর টিনের ব্যবহার হয়েছে সরঞ্জামে। দেশীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করায় ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের খরচও কম রাখতে সমর্থ্য হয়েছে আর্কিগ্রাউন্ড।
স্থপতির ভাষ্যে, "আমরা এমন কোনো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতে চাইনি যেটা গ্রামের বাচ্চারা দেখে অভ্যস্ত না। ধরুন, মধ্যবিত্ত মানুষ হিসেবে আমাকে দুবাইয়ের ফাইভ স্টার হোটেলে নিয়ে গেলে আমি কিন্তু কমফোর্টেবল ফিল করবো না। গ্রামের বাচ্চারা যেসব ম্যাটেরিয়ালের সাথে পরিচিত, যেগুলোতে তারা কমফোর্টেবল থাকবে সেগুলোই ব্যবহার করেছি আমরা।
গ্রামের টিনের বাড়ির মতো পরিবেশ রাখতে চেয়েছি পুরো স্কুল জুড়েই। স্কুলে কোথাও কোনো টাইলস, গ্লাস কিছুই ব্যবহার করা হয়নি। এমন কোনো অপরিচিত পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাইনি যা দেখে স্কুলে পড়তে আসা কোনো শিশু হীনম্মন্যতায় ভুগবে।"
বাইরে থেকে কোনো কারিগর বা মিস্ত্রি না নিয়ে গ্রামের স্থানীয় মিস্ত্রিদের দিয়ে স্কুল নির্মাণের সব কাজ করানো হয়েছে। রিয়াজের মতে, "এদের কারো কারো বাচ্চাও হয়তো এই স্কুলে পড়বে। নিজ হাতে এই নির্মাণের সাথে জড়িত থাকলে তাদের গর্ববোধও থাকবে স্কুলটি নিয়ে।"
বর্তমান অবস্থা
স্কুল কম্পাউন্ডেই দেখা হয় প্রধান শিক্ষক শঙ্কর কুমার সাহার সাথে। ঢাকা নামকরা বিভিন্ন সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা শেষে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে স্কুল নির্মাণ শেষ হওয়ার পর থেকেই এই স্কুলের দায়িত্বে আছেন।
স্কুলের স্থাপত্যশৈলী নিয়ে জানতে চাইলে কিছুটা আক্ষেপের সুরেই তিনি বলেন, "এরকম নকশার স্কুল বানিয়ে দিয়েই তো রিয়াজ সাহেব আমাদের বিপদে ফেললেন। ছুটির দিনগুলোতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে ভিড় করে স্কুল দেখতে। ছুটির দিন ছাড়াও দর্শনার্থীরা এসে অনেক সময় শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়। স্কুলের বারান্দা, মাঠে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রেখে যায় অনেকেই। বাচ্চাদের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হয় এভাবে।"
বৃষ্টির পানি ঢুকে যায় বলে কয়েকটি রুমে সিলিঙয়ের নিচের খোলা জায়গা টিন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্কুল বন্ধের সময় স্থানীয় দুর্বৃত্তরা এসে স্কুল ভবনে অসামাজিক নানা কার্যকলাপ করে বলেও অভিযোগ জানান তিনি। প্রাইমারি স্কুল থেকে ধীরে ধীরে হাইস্কুল ও কলেজে পরিণত করার পরিকল্পনা ছিল প্রতিষ্ঠাতা শাহাবুদ্দিনের।
সে উদ্দ্যেশ্যে করোনার আগে ক্লাস সিক্স, সেভেনও চালু হয়েছিল। হাইস্কুলের জন্য নতুন ভবন নকশা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আর্কিগ্রাউন্ডকে। আনা হয়েছিল নতুন ভবনের জন্য দরকারি ইট-বালুও।
কিন্তু স্কুলের পেছনেই "চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়"-এর একাডেমিক ভবন তৈরির স্থান নির্ধারণ করায় নতুন ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখনো মাঠের কোণে পড়ে আছে সেই ইট-বালু।
শিক্ষা ব্যবস্থা
বর্তমানে স্কুলটিতে নার্সারি থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সর্বমোট শিক্ষার্থী আছে ১৬১ জন। করোনার বন্ধে স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে গেছে বলে জানান শঙ্কর কুমার সাহা। প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক আছেন ১২ জন।
নার্সারির প্রতিটি ক্লাসে উপস্থিত থাকেন তিনজন শিক্ষক। একজন পড়া বুঝিয়ে দেন আর বাকিরা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে তদারকি করেন। ক্লাস টু পর্যন্ত এভাবে প্রতি ক্লাসে অন্তত দুইজন শিক্ষক দেখভাল করেন শিক্ষার্থীদের।
ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ পর্যন্ত প্রতি ক্লাসের জন্যই বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়ের পর অতিরিক্ত দুই ঘন্টা বিনামূল্যে কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন প্রধান শিক্ষক।
"গ্রামের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেবার কেউ নেই। তারা যা শেখে স্কুল থেকেই কমপ্লিট করে যেতে হয়। তাই স্কুলের সময়ের বাইরেও এই অতিরিক্ত সময়টা ওদের পরিচর্যায় দেই আমরা।"
বেসরকারি হলেও এই স্কুলে পড়াশোনার খরচ নামমাত্র। শাহাবুদ্দিন স্কুলে ভর্তি হতে লাগে ৩৫০ টাকা আর প্রতি মাসের বেতন মাত্র ৫০ টাকা। কোনো মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থী আবেদন করলে বিনা খরচেও পড়ালেখার সুযোগ পায় এখানে।
বিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ চলে শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে। বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ইতোমধ্যে আশেপাশের পুরোনো স্কুলগুলোকে টেক্কা দিচ্ছে শাহাবুদ্দিন।
স্থপতির অনুভূতি
লুৎফুল্লাহিল মজিদ রিয়াজ মনে করেন "আর্কিটেকচার হলো সাধারণ মানুষের জন্য। আমার এই কাজটা সাধারণ মানুষ শুরু থেকেই অনেক বেশি পছন্দ করেছে। অনেক অপরিচিত মানুষও আমাকে নক দিয়ে এই কাজের প্রশংসা করেছে।
এখানেই আমার সার্থকতা মনে করি। সাধারণ মানুষ যদি নিজেদের সম্পদ ভেবে জায়গাটার দেখভাল করে, স্কুলের পরিবেশ নিয়ে সচেতন থাকে তাহলেই এই নান্দনিক স্থাপনাটি তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে অনেকদিন টিকে থাকতে পারবে।"