যে জীবন বাস কন্ডাক্টরের: দিন শুরু যার বচসায়, ভাড়ার বিবাদে!
বেশ কয়েকটি রুটের বাসের জিরানোর জায়গা মিরপুর ১২ নম্বর। এর মধ্যে নাম করা যায় নারায়ণগঞ্জগামী হিমাচল, মাওয়াগামী স্বাধীন, যাত্রাবাড়িগামী শিকড়, কালিয়াকৈরগামী রাজধানী, মতিঝিলগামী বিকল্প বা আজিমপুরগামী সুপার লিংকের। ঢাকার মধ্যে চলা বাসগুলো জিরানোর সময় বেশি পায় না, তবে নারায়ণগঞ্জ বা আরেকটু দূরে যারা যায় তারা কিছু বেশি সময় পায়। মিরপুর সিরামিকস থেকে কালশী যাওয়ার পথটিই মূলত বাসগুলোর বিশ্রামখানা। তাই এপাশে ওপাশে ফুটপাথের ওপর চায়ের দোকান, ভাতের দোকানও বসেছে কয়েকটি।
শিকড় পরিবহনের কন্ডাক্টর জুম্মনের বয়স ৩৪। পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন। ৯৬ সালের দিকে মা ও মামার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেট যেতেন। সেখানে ১৮ টাকা শয়ে ইট ভাঙতেন। তারপর নিরানব্বই সালে পরিবহন লাইনে আসেন। পাড়াতো ভাই বন্ধুরা ছিল লাইনে, তাদের মাধ্যমেই গাড়ির হেলপার হন। তার একটি মেয়ে ছিল, নাম রেখেছিলেন সাজিয়া, নিউমোনিয়ায় মারা গেছে ১৩ বছর আগে। জুম্মনকে দেখতে অবশ্য ২০-২২ বছরের মনে হয়। হাল আমলের ছেলেদের মতো ত্যারচা করে চুল কাটা তার। গলাটা বেশ ভারী। গাড়ির ভিতর বসেই ওস্তাদের সঙ্গে ভাত খাচ্ছিলেন গরুর সালুন দিয়ে। দুই বেলায় খোরাকি বাবদ ৭০ টাকা করে পান প্রতিজন। তাতে সবসময় কুলায় না, বিশেষ করে যেদিন গরুর তরকারি দিয়ে ভাত খেতে মন চায়। তখন নিজের পকেট থেকে ভরতে হয়।
জুম্মন বলছিলেন, 'কাউকাউ (ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি) কি সাধে করি? কিছু মানুষ আছে, খাইসলতই খারাপ। ভাড়া কম দিতে পারলেই মনে করে বিরাট কিছু হয়া গেল। আমাগো তো চলতে হয়, নাকি? গাড়ি একবার রাস্তায় বের করলে সাত-আটশ টাকা খরচ আছে। এরপর ভেজাল আছে বহুত। চান্দাবাজি আছে, ভাই-বেরাদরগো খুশি রাখতে হয়, কত কত যে কাহিনী রাস্তায়! আমরা তিনজন স্টাফ, তারপর মহাজনরেও লাভ দিতে হয়। লাইনের কাগজ নিতে দিনে দিতে হয় ৫৭০ টাকা।
'এমনও দিন যায়, চারটা ট্রিপও (টু ওয়ে) দিতে পারি না। কাজিপাড়া-শ্যাওড়াপাড়া, ফার্মগেট-কাওরানবাজার, প্রেসক্লাব-পল্টনে জাম লাইগাই থাকে। তয় কোনো কোনো দিন ছয় ট্রিপও দেই। তেমন সব দিনে কমপক্ষে ১,৫০০ মানুষের সঙ্গে কথা চালাইতে হয়। এই ১,৫০০ জনের মধ্যে অর্ধেক পাই ভালো। বাকিরা কেমনে ছুইট্যা (ফাঁকি দিব) যাইব হেই তালে থাকে। আজকে যেমন একজন ছাত্র উঠছে তার মাকে নিয়ে। বলে, ইনভারসিটি পড়ে। ঠিক আছে ভালো কথা, একজনের হাফ দেন। না, কাউকাউ কইরা দুইজনের ভাড়াই হাফ দিয়া নাইমা গেল। মাথাটা ক্যারাব্যাড়া (গরম) হয়া গেল। ভাবছিলাম, ছাড়ুম না, মাইর খাইলে খামু। শেষে ওস্তাদে বুঝাইয়া আমারে থামাইছে।'
জুম্মনের ওস্তাদ আব্বাস আলী। তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে, আলিম ও মীম। তাঁর ২০ বছর হয়ে গেলো গাড়ির লাইনে। শুরুর দিকে একুশে (গুলশান রুটে) পরিবহনের গাড়ি চালাতেন।
তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম: কেমন লাগে গাড়ির লাইন?
আব্বাস আলী: কোনো দিকে সুবিধা নাই। খুব ঝামেলার লাইন। সবার লগেই কাউকাউ করতে হয়। মহাজনের লগে, যাত্রীর লগে, লাইনম্যানের লগে...সবার লগেই কাউকাউ। যাত্রীরা আমাগো মানুষই মনে করে না। আত্মীয়-স্বজনের লগেও মিলমিশ নাই।
দশ বছর আগে আর এখনকার মধ্যে ফারাক আছে?
আব্বাস আলী: আকাশ-পাতাল ফারাক। আগে কইত, ড্রাইভার সাব একটু থামান, নামমু। এহন কয়, ওই গাড়ি থামা, নামমু। কোলের বাইচ্চাও মনে লয় বোঝে যে আমাগো কোনো দাম নাই। তারপর আগে গাড়ি বেশি আছিল না রাস্তায়। সন্ধ্যার আগেই চার ট্রিপ হয়া যাইত। এহন চার ট্রিপ দিতেই কোনো কোনোদিন রাইত দশটা বাজে।
মাথা ঠান্ডা রাখেন কীভাবে?
আব্বাস আলী: বাড়ি থিকা বের হওয়ার সময় মন ঠিক করে বাইর হই, যতই যা হোক মাথা গরম করমু না। আমাগো এটা রুটি-রুজির ব্যাপার। যাত্রীরা ওঠে ১৫-২০ মিনিটের জন্য, বেশিরতে বেশি এক-দেড় ঘণ্টার লেগা। আমরা দিন-রাইত এটাতেই থাকি। গাড়িই আমাগো সব। অনেক দিন তো গাড়িতেই ঘুম যাই। তয় সবাই কইলাম খারাপ হয় না। অনেকরেই বুঝের মানুষ পাই। তাগো ভালোবাসার কথা মনে রাখি, খারাপ ব্যবহার মাথায় নিয়ে ঘুরলে দিনে অ্যাকসিডেন্ট হইব পাঁচবার।
সমাজে ওঠা-বসা কেমন আপনাদের?
আব্বাস আলী: আমাগো কি সমাজ আছে? গাড়ির লাইনের লোকজনই বন্ধু-বান্ধব। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা গাড়ির লগেই যায়। সপ্তাহে ৪ দিন গাড়িতে থাকি। যেদিন গাড়িত থাকি না, ঘরেই শুয়ে-বসে কাটাই। আমাগো লগে বাইরের বেশি লোকের ওঠাবসা নাই।
আব্বাস ও জুম্মনের খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিলেন। বলে গেলেন, সরি ভাই, আর বসনের উপায় নাই। এখন ট্রিপে না বাইর হইলে মহাজনের চোপা (বকা-ঝকা) থিকা বাঁচতে পারুম না।
সবুজ মাঝেমধ্যে গেইম খেলেন
আব্বাস ও জুম্মন চলে গেলে পরে সবুজকে পেলাম। স্বাধীন পরিবহনের কন্ডাক্টর । বয়স ২২। বিয়ে করেননি। সবুজের থাকা-খাওয়া-ঘুম সব এই গাড়ির ভিতরই। অবসরে মোবাইলে গেইম খেলেন বা ছবি দেখেন। তাঁর স্বপ্ন ড্রাইভার হওয়ার। ৭-৮ বছর হয়ে গেল তাঁর গাড়ির লাইনে। বাড়ি কুমিল্লা। তাঁরা তিন ভাই এক বোন। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, সবুজ সবার ছোট। বড় দুই ভাইও স্বাধীন গাড়ির ড্রাইভার। একেবারে বড় ভাই, যার বয়স ৩৪ বছর, অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে, সবুজকে খাটতে হচ্ছে বেশি।
বড় ভাইয়ের কী অসুখ করেছে?
সবুজ: গাড়িতে বসতে বসতে কোমড়ের হাড় ক্ষয়ে গেছে। ছয়টা রিং পরাইতে হইছে। ডাক্তার বলছে, এক বছর বিশ্রামে থাকতে। এতে সংসারে ইনকাম কইমা গেছে। আমি তাই প্রতিদিন ডিউটি দেই। সেই রমজানে একবার বাড়ি গেছিলাম, আর যাই নাই।
ঝগড়াঝাঁটি বাধে যাত্রীদের সঙ্গে?
সবুজ: আসলে ভাই মাথা ঠান্ডা রাইখা যদি চলতে পারেন তবে ঝগড়াঝাঁটি হয় না। যাত্রীরা আমাগো দিকটা কিছুই বুঝতে চায় না। আমরা (স্বাধীন পরিবহন) এখন পদ্মা ব্রিজ পার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত যাই। একটা ট্রিপে খরচ আছে ৮,০০০ টাকা। গাড়ি সিটিং না হইলে এই টাকা ওঠে কীভাবে? তিনটা সিঙ্গেল ট্রিপ দিতে পারি দিনে। ৩০ হাজার টাকা উঠলে মহাজনরে কিছু দিতে পারি, আমরা তিনজন স্টাফও কিছু কিছু নিতে পারি। যাত্রীরে এইটা তো বুঝাইতে পারি না।
প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টার ট্রিপ আপনাদের। গরমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে কেমন লাগে?
সবুজ: আসলে ভাই রুটি রুজির ব্যাপার। আমরা মাইন্যা লইছি, এভাবেই চলতে হবে। অভ্যাস কইরা ফালাইছি। গরমে মাঝে-মইধ্যে সর্দি-গর্মি হয়। আর বইলা লাভ নাই, এইটাই আমাগো কপাল।
সুপারভাইজার মোজাম্মেল
নিজেকে কন্ডাক্টর বলতে চান না মোজাম্মেল, যদিও ভাড়া তোলার দায়িত্বটা তাঁরই। চল্লিশ বছর বয়স তাঁর। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে। নিজেকে পরিচয় দিলেন স্বাধীন পরিবহনের সুপারভাইজার বলে। প্রায় ২৫ বছর হতে যাচ্ছে তাঁর গাড়ির লাইনে। শুরু করেছিলেন গাঙচিল পরিবহনের বাসে। লৌহজং-গুলিস্তান রুটে গাঙচিল চলে। কেন গাঙচিল ছাড়লেন, জানতে চাইলে মোজাম্মেল বললেন, বাড়ির ওপর দিয়া গাড়ি যায়, যখন-তখন নাইমা পড়তাম, আইলসামি ধইরা গেছিল। তাই পোলাপাইনের মুখ চাইয়া ছাইড়া দিছি গাঙচিল।'
মোজাম্মেলের তিন মেয়ে। বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন। বাকি দুই মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। মোজাম্মেলদের সংসার আলাদা। তাঁর বড় ভাই অনেকদিন সৌদি আরবে কাটিয়ে এসেছেন। প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। সেগুলো চাষবাস আর বর্গা দিয়ে ভালোই আছেন। ছোট ভাইয়ের গরু আছে ১০টির বেশি। 'কেবল আমিই আছি দৌড়ের ওপর। প্রতিদিন দৌড়াইতে আর ভালো লাগে না এখন। ছোট দুই মাইয়ার বিয়ে দিতে পারলে বাঁচি। তারপর এই লাইন ছাইড়া দিমু। এতো কাউকাউ আর ভালো লাগে না। মহাজন, যাত্রী, ড্রাইভার—সবারই গালি খাই,' বলছিলেন মোজাম্মেল।
মোজাম্মেলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, প্রথম প্রথম যখন গাড়ির লাইনে আসলেন তখনকার তুলনায় এখন ফারাক কেমন?
উত্তরে বললেন, রাইত-দিন ফারাক। তখন ৫০০ টাকাই ছিল অনেক কিছু। এখন দুই হাজার টাকায়ও চলে না। আগে এক-দুইদিন কামাই দিলেও চলত, এখন কামাই দিলে না খাইয়া থাকা লাগে।
দিনে বারো-চৌদ্দশ টাকা থাকে মোজ্জাম্মেলের, তবে সপ্তাহে ডিউটি করার সুযোগ পান তিন-চার দিন। আর বছর কয় পর গাড়ির লাইন ছেড়ে দিতে চান মোজাম্মেল। ঠিক করেছেন, ছোট মেয়েটার বিয়ে দেওয়ার পর বাড়িতে গরু পালবেন আর মুদির দোকান দেবেন।
রাজধানীর সুলতান
কিছু দূর পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিলেন সুলতান আলী। কিন্তু হঠাৎ এক পারিবারিক বিপর্যয় তাকে গাড়ির লাইনে নিয়ে আসে। এখন ছয় বছর ধরে নিয়মিত রোডে আছেন। রাজধানী নামের পরিবহন চলে গাবতলী, সাভার হয়ে কালিয়াকৈর পর্যন্ত।
তিনি বলছিলেন, যাত্রীরা হলেন আমাদের মেহমান। বড়জোড় দুই ঘণ্টা থাকে আমার গাড়িতে। তাদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটির প্রশ্ন আসে কোত্থেকে? কিন্তু ভাড়ার ব্যাপারে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের বেধেই যায়। কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার। ২.৩০ টাকা কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া। হিসাব করে দেখেন, ১৩০ টাকা ভাড়া আসে। আমরা ১১০ বা ১২০ টাকা নেই। কিন্তু অনেকেই দিতে চায় না। তখন আমরা কী করি? ঝগড়া তো এভাবেই বাধে।
আপনারা স্ট্যান্ডে অনেকসময়ই দেরি করেন। অনেকের অফিস ধরতে হয় বা অন্য ব্যস্ততা থাকে। আপনাদের খারাপ লাগে?
সুলতান: হ্যাঁ খারাপ লাগে। কিন্তু যাত্রী না তুললে আমরা চলমু কীভাবে? মহাজন, লাইনম্যান, প্রশাসন—মাথায় একশটা টেনশন নিয়ে ঘুরি। টাকার জন্যই তো এত কষ্ট করি ভাই, যদি দুইটা টাকার মুখই না দেখি তবে খামু কী? বাচ্চাদের খাওয়ামু কী? যেদিন খরচ তুলতে পারি না সেদিন মহাজন উল্টা বেতন থেকে কাটে। এ দুঃখ কারে বুঝামু।
সুলতানের গাড়ির হেলপার শফিক ছিলেন দুবাইতে। দেশে আসার পর অনেকদিন বাড়ি বসে ছিলেন। তারপর এলাকার ভাইকে (লাইনম্যান) ধরে গাড়ির লাইনে চলে আসেন। খুব দুঃখ করে বললেন, সারাটা দিন গাধার খাটনি দিয়া যদি এক টাকাও না পাই, কার মাথা ঠিক থাকে, বলেন?
বিকল্পের অফিসযাত্রী
ইলিয়াসকে বললাম, বাড়িতে অভাব ছিল?
উত্তর দিলেন, 'না, খুব দুষ্ট আছিলাম। পড়ালেখা করতে চাইতাম না। বাবা-মা বহুত চেষ্টা করছে আমারে পড়াইবার। শেষে না পাইরা গাড়ির লাইনে দিয়া দিল। বাড়ি শরীয়তপুর। প্রথম কয় বছর এলাকার গাড়িতে হেলপারি করছি। তারপর ঢাকায় আইসা বহুত গোত্তা খাইছি। এয়ারপোর্ট রোড, বাড্ডা রোড, গাবতলী রোডের গাড়িতেও আছিলাম। এখন বিকল্প অটো সার্ভিসের (মিরপুর টু মতিঝিল) গাড়িতে আইসা একটু ভালো লাগতেছে। কারণ এই গাড়ির বেশিরভাগ অফিসযাত্রী। তাই কাউকাউ কম।'
তবে ইলিয়াসই জানালেন, ভাড়া একবারের বেশি দুবার চাইলে আর রক্ষা থাকে না। মানে অনেকসময় ইলিয়াসের মনে থাকে না, অমুক যাত্রী ভাড়া দিছে কি না, তখন ইলিয়াস আবার চাইতে গেলে ঝাড়ি খান।
আরেকটা ঝামেলা হলো, অফিস টাইমে দেরি করলে যাত্রীরা আগুন হয়ে যায়।
ইলিয়াস বললেন, 'কিছু বুড়া আছে, একেবারে বিখাউজ, মানে অনেক গ্যাঞ্জাম করে। তারা কিছু থেকা কিছু হইলেই চেইতা যায়। আমরা উল্টা জিগাই, এই বয়সে আপনে এত গরম, বয়সকালে কেমুন আছিলেন? এই কইলাম তো মনে করেন, আরো চেইতা গিয়া গালাগালি করতে থাকে। আরো এক রহম আইটেম (লোক) আছে—তাগো অফিসের রাগ, বাসার রাগ সব ঝাড়ে কন্ডাক্টার হেলপারগো উপর। আরে ভাই তোমার বস গালি দিছে, এইটা কি আমার দোষ? ক্ষমতার লগে তো পারে না, আমাগো দুর্বলের উপর আইসা রাগ ঝাড়ে।'
গালাগালি করলে কী করেন?
ইলিয়াস: বেশিরভাগই উত্তর দেই না। আসলে এই লাইনে মাথা গরম করলেই বিপদ। মাথা ঠান্ডা রাইখা চললে আপনে হইলেন সেয়ানা। যাগো মাথা গরম, তারা বেশিদিন থাকতে পারে না এই লাইনে।
খারাপ-ভালো মিলিয়ে চলে যায়
বিজয় পরিবহনের সাহাবুদ্দিনের গাড়ি আজ রাস্তায় নেই, কিন্তু তিনি নিজে রাস্তায়, কারণ গাড়ি সারাইয়ের কাজ করাচ্ছেন। বাবার গ্রামে ছোট্ট একটা মুদি দোকান ছিল। ধারদেনায় একসময় এমন অবস্থা হয়েছিল যে, না খেয়েও থাকতে হয়েছে। বড় ছেলে হিসাবে সাহাবুদ্দিন ছোট বেলাতেই গাড়ির লাইনে চলে আসেন এবং ভাগ্যও ফিরিয়েছেন।
সাহাবুদ্দিন বললেন, 'আমি কোনো আউট (আড্ডা দেয়া ইত্যাদি) কাজে সময় নষ্ট করি না। যে কয়দিন গাড়ি চালাই না, সে কয়দিন ঘরেই থাকি। রুপনগর আবাসিকের আইডিয়াল স্কুলে ছেলেকে (১৪ বছর বয়স) ভর্তি করাইছি। ছেলেকে বুঝতেও দেই না, সারাদিন আমার কীভাবে যায়। সে পড়াশোনায় ভালো।
'বাড়িতে (শরীয়তপুর) ছোট ভাইরে একটা সিএনজি অটো গাড়ি কিনে দিছি, সেটা চালায়া বাবা-মার সঙ্গে ভালোই আছে। বোনের জামাই বিদেশ গেল, আমি দেড় লাখ টাকা জোগাড় করে দিছি। এটা সত্যি যে, গাড়ির লাইনে কষ্ট আছে, ঝামেলাও আছে, তবে একটু হিসাব কইরা চলতে পারলে একেবারে খারাপও না।'