ওরাও কম যায় না! দক্ষিণী সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য নির্মাণ করে এখন তারাও ‘হিরো’
বাণিজ্যিক সিনেমায় নায়ক ও খলনায়কের মধ্যে মারামারির দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়। যেখানে নায়কের শক্তি ও অন্যদের থেকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপনের জন্যে-একাই তাকে প্রতিপক্ষ বা ভিলেন দলের সবাইকে মেরে কাবু করতে দেখা যায়। সব দেশের সব ভাষার সিনেমায় এ ধরণের অ্যাকশন দৃশ্য অত্যন্ত কমন।
বর্তমান সময়ে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাগুলো রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনেও অন্যতম মূল কারণ , সিনেমায় দেখানো দুর্দান্ত সব অ্যাকশন দৃশ্যসমূহ। মাঝেমধ্যে অ্যাকশন দৃশ্যে দেখানো বিষয়গুলো বাস্তবিকতার ঊর্ধ্বে মনে হলেও দর্শক এগুলোকে দারুণভাবে উপভোগ করে। কারও কারও আবার মনে ইচ্ছে জাগে এইরকম মারকাটারি দৃশ্যে নিজে অভিনয় করার। কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। আর এই ইচ্ছের বশেই একদল তরুণ কোনরকম অর্থের যোগান ছাড়াই বানিয়ে ফেলছে হুবহু দক্ষিণী সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য।
সিলেটের কুলাউড়া উপজেলার এই তরুণেরা মোবাইল দিয়ে তৈরি করছে তামিল, তেলুগুসহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য। গ্রামে বসবাস করা এই তরুণরা শখের বসে এই ধরণের ভিডিও বানানো শুরু করলে তা দেখে আশেপাশের লোকজন বাহবা দিতে থাকে। ভিডিওগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এসব আনাড়ি হাতের কাজ। এদের কেউ সিনেমার ওপর কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেয়নি। তারপরেও তাদের তৈরি অ্যাকশন ভিডিওগুলো বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সিনেমার থেকেও বহুলাংশে ভালো বলে মত দিয়েছেন অনেক নেটিজেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করছেন দক্ষিণী সিনেমার আদলে বানানো এই ভিডিওগুলো।
শর্ট অ্যাকশন ভিডিওর নির্মাতা তথা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিশান কুরাইশি জানান, "প্রায় দেড় বছর আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু ও এলাকার পরিচিত ছোটভাই মিলে এইরকম ভিডিও বানানোর সিদ্ধান্ত নিই। তামিল সিনেমা দেখতে ভালো লাগতো। বিশেষ করে ওদের ফাইটিং দৃশ্যগুলো অন্যসব সিনেমার থেকে বেশী আকর্ষণীয়। তামিল, তেলুগুর বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সিনেমা, যেমন পুষ্পা, আর আর আর, কেজিএফের মতো সিনেমাগুলোতে দেখানো অ্যাকশন দৃশ্য আমরা পুনরায় নিজেরা বানিয়ে থাকি। তারপর সেগুলোতে সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ও মারামারির শব্দ যোগ করে দেই"।
নকল হাতিয়ারে দুর্দান্ত সব অ্যাকশন দৃশ্য
৫/৭ জন দৌড়ে আসছে বড় দা, হকিস্টিক আর লাঠিসোঁটা নিয়ে। যাকে উদ্দেশ্য করে মারতে এসেছিল, তার কাছেই সকলে মার খেয়ে চিতকাত হয়ে পড়ে গেছে। যেমনটি দেখানো হয় সিনেমাতে। মারামারির দৃশ্যে অভিনয় করা এরা কেউ পেশাগত অভিনেতা বা পরিচালক নয়। আর ভিডিওগুলো তে মারামারি করার জন্যে তারা যে হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করছেন, তার কোনোটিই আসল নয়। দৃশ্যগুলো দেখে মনে হতে পারে মারামারি করতে গিয়ে তাদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে ও হাত-পা ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু এগুলোর সবকিছুই নকল। খেলনা এই হাতিয়ারগুলো শুটিং-এর কাজ চালানোর জন্যে তারা নিজেদের মতো করে বানিয়ে নিয়েছেন।
তরুণদের এই দলটি নিজেদের পারদর্শিতা ও দক্ষতা দিয়ে মারামারির দৃশ্যগুলোকে সত্যি ঘটনার মতো ফুটিয়ে তুলেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এগুলো বাংলাদেশের গ্রামের কয়েকজন তরুণের অভিনয় করা ও মোবাইলে ধারণ করা। সাজ্জসজ্জা, শুটিং-এর স্থান ও মারামারি দেখে মনে হবে এগুলো দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যের অংশ।
পেশাগত দক্ষতা না থেকেও নিপুণভাবে এই কাজটি করে যাচ্ছে সিলেটের কিছু তরুণ। সিলেটের বাসিন্দা বলে তাদের দলকে বাংলাদেশের অন্যরা 'সিলেটি' বলে ডাকে। কারণ মাদারীপুরের কয়েকজনও আছেন, যারা একই ধরনের অ্যাকশন ভিডিও করেন। সিলেটের ১৩-১৫ জনের এই দলের কেউ সিনেমার সাথে যুক্ত না থাকলেও; একেকজন দক্ষিণী সিনেমার ভক্ত।
নিশান কুরাইশি পুরো দলের নির্দেশনা ও ভিডিও এডিটিং-এর যাবতীয় কাজ করেন। আবার ক্যামেরার সামনে মূল চরিত্রেও থাকেন তিনি। তার নিজের নামে খোলা ইউটিউব চ্যানেলে ১০ হাজারের কাছাকাছি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। এটিই তাদের দলের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল। একই নামে খোলা ফেসবুক পেজটিতে ২৬ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। 'ব্ল্যাকবুক এন্টারটাইনমেন্ট' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে বাংলাদেশী ছেলেদের তৈরি এ ধরণের অ্যাকশন ভিডিও নিয়মিত পোস্ট করা হয়। পেজটিতে লাখের ওপর ফলোয়ার থাকায় ভিডিওগুলো দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এবং হাজার হাজার লোক নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করেছেন। এভাবেই রাতারাতি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে অ্যাকশন ভিডিও নির্মাণ করা এই তরুণরা।
আরিয়ান আকাশ নামের নিশান কুরাইশির দলের একজন সদস্য তাদের নকল হাতিয়ার সম্পর্কে জানান, "মারামারি করার সময় সিনেমাতে মাটি থেকে ধুলা উড়তে দেখা যায়। আমরা এই কাজে সিমেন্ট ব্যবহার করি। সাধারণত ধুলা উড়লেও ভিডিও-তে এতো বোঝা যায় না। তাই মাটিতে পরে যাওয়ার দৃশ্যে এবং সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর জামাকাপড়ে সিমেন্ট লাগিয়ে দেওয়া হয়। সিমেন্ট কে ধুলার মতো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে পাশ থেকে কার্টন কাগজ দিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। আহত হয়ে রক্ত বের হচ্ছে বোঝাতে আলতা ব্যবহার করা হয়। আর মারামারি করার জন্যে চাইনিজ কুড়াল, হকিস্টিক, ছুরি ও গাছের তৈরি মোটা লাঠি ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বেশিরভাগই নকল অস্ত্র, যেগুলোতে তেমন ধার নেই। ক্লোজআপ শট অর্থাৎ যখন কাছ থেকে ক্যামেরা করা হয়, তখন আসল হাতিয়ার রাখা হয়"।
'ফ্রেন্ডস ফরেভার' দলের মূল নির্দেশক সুফিয়ান খান মাহবুব ও তার দলের সদস্যরা মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার 'সমিতির হাট' নামক গ্রাম ও তার আশেপাশে বাস করেন। সেখান থেকেই তারা অ্যাকশন ভিডিওর শুটিং শুরু করেছিলেন। পলিটেকনিকে পড়াশোনার পাশাপাশি সুফিয়ান অ্যাকশন ভিডিওর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শুরু থেকে তার বেশিরভাগ ভিডিওর শুট করা হয়েছে নিজ গ্রামে। কিন্তু পড়াশোনার জন্য বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং পরবর্তী কিছু ভিডিও তিনি ঢাকায় শুট করেছেন। সুফিয়ানের দলের সদস্যদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগ স্কুল, কলেজে পড়াশোনা করছেন।
নিশান কুরাইশী ও তার দলের সদস্যরা সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া শহরে বাস করে। জয়পাশা নামক শহরের ছোট একটি এলাকা ও এর আশপাশেই দলের সদস্যরা থাকেন। তবে ভিডিও করার জন্য তারা ছুটে যান শহরের আশপাশের গ্রামগুলোতে। সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যের সঙ্গে মিল রাখতে বেছে নিতে হয় গ্রামীণ ও গাছগাছালি আছে এমন পরিবেশ।
সদস্যদের বেশিরভাগ পড়াশোনার ইতি টেনেছেন মাঝপথ থেকে। কেউ কেউ উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কাজে লেগে পড়েছেন।
নিশান কুরাইশী উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়াশোনা করেননি। একটি প্রতিষ্ঠানে মোবাইলের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কাজে নিযুক্ত আছেন তিনি। দলের আরেক সদস্য আরিয়ান আকাশের এলাকায় ছোট্ট একটি মোবাইলের দোকান রয়েছে।
প্রতিভা থাকলে কম বাজেটেই সেরা সিনেমা সম্ভব
"আমাদের দেশে এতো এতো বিশাল বাজেটের সিনেমা বানানো হয়, কিন্তু অ্যাকশন দেখলে মনে হবে এগুলো একেবারেই নিম্নমানের। দুমদাম সাউন্ড দিয়ে দিলেই অ্যাকশন হয়ে যায় না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও আশেপাশের পরিচিতদের অনেকেই বলেছেন, আমাদের অ্যাকশন ভিডিও বাংলাদেশে তৈরি হওয়া সিনেমার থেকেও ভালো হয়। প্রথমদিকে ভিডিও ধারণ থেকে এডিট সবকিছুই মোবাইল ব্যবহার করে করা হতো। প্রতিটি ভিডিও শুট করতে আমাদের ৪/৫ ঘণ্টা লেগে যায়। আর ২ মিনিটের একটি অ্যাকশন ভিডিও এডিট করতে প্রায় ২ দিন সময় লাগে। কারণ এগুলো তে স্লো মোশন, ইফেক্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকসহ আরও বিভিন্ন কাজ করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে নির্মিত সিনেমাগুলো তে বেশী সময় নিয়ে এসব কাজ করা হয় না। অনেক সময় পরিকল্পনার অভাব থাকে, যা সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যগুলো দেখলেই বোঝা যায়। তাইতো বিগ বাজেট, এতো নামী-দামী ক্যামেরা ও উন্নত সব প্রযুক্তি থাকার পরেও আমাদের বাংলা সিনেমার মান এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। অনেকেই মনে করে অনেক বাজেট ছাড়া ভালো অ্যাকশন সিনেমা তৈরি করা সম্ভব না। এই ধারণা কে আমরা ভুল প্রমাণ করে দিতে পেরেছি", একটানে কথাগুলো বলছিলেন নিশান।
কোনো বাজেট ছাড়া শখের বশে অ্যাকশন ভিডিও বানানো এই তরুণদের প্রায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও ভিডিও থেকে এখনও কোনো উপার্জন করতে পারেনি। অন্য পেজ থেকে তাদের নির্মিত ভিডিওগুলো আপলোড করে মিলিয়ন ভিউ হওয়ার পরেও- সেখান থেকে কোনোপ্রকার অর্থ পায়নি এই তরুণরা। তবুও তারা নিজেদের কপিরাইট দাবির চেয়ে মানুষের কাছে পরিচিতি পাওয়ার জন্যে বেশি আগ্রহী। মারামারির দৃশ্য করতে গিয়ে এদের অনেকেই হাত-পায়ে প্রায়সময় আঘাত ও চোট পেয়ে থাকে। তবুও শখের এই কাজ থেকে সরে যায়নি। তাদের বিশ্বাস তারা একদিন ভালো মানের অ্যাকশন দৃশ্যে নেতৃত্ব দিবে। বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করার ডাক পাবে।
নিশান কুরাইশি আরও বলেন, "মারামারির করতে গিয়ে একটু আধটু আঘাত আমাদের পেতে হয়। তারপর কিছুদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে হাত-পা কেটে গেলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে আসতে হয়। জানেন তো 'নো পেইন, নো গেইন'। তাই ব্যথা পেলেও এই কাজটা করতে আমরা আনন্দ পাই। কয়েকদিন আগে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ওয়াচ টাইম পূরণ হয়েছে। কপিরাইট স্ট্রাইক এড়াতে ইউটিউবে যে মিউজিক পাওয়া যায় ওগুলো ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি সিনেমার ক্ষেত্রে ইউটিউবে কিছু ফ্রি মিউজিক পাওয়া যায়। তাই ভিডিও'র ব্যাকগ্রাউন্ডে ওগুলো ব্যবহার করলে চ্যানেল ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না"।
মাদারীপুরের সুফিয়ান খান মাহমুব দক্ষিণী সিনেমার আদলে একইরকম স্বল্প দৈর্ঘ্যের অ্যাকশন ভিডিও বানান। ১০/১২ জন নিয়ে গঠিত তাদের দলের নাম 'ফ্রেন্ডস ফরেভার'। এই দলের বেশিরভাগ সদস্য স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী। করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় বন্ধুরা মিলে দক্ষিণী সিনেমার মারামারি দেখে ভিডিও বানানো শুরু করেন। তারাও শুরুতে মোবাইল দিয়েই ভিডিও ধারণ ও এডিটের কাজ করতেন। তারপর নিজেদের তৈরি করা ভিডিও থেকে উপার্জন আসতে শুরু করলে তা দিয়ে ক্যামেরা ও ল্যাপটপ কিনে নেয়।
এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নিজের কাজ নিয়ে জানান, "১টা ক্যামেরায় শুট করা হয় বিধায় বারবার এঙ্গেল পরিবর্তন করতে হয়। আর এভাবে কাজ করতে গিয়ে ২ দিনের মতো সময় দিতে হয় শুটিং-এর পেছনে। তারপর সেটা এডিট করতে আরও ২/৩ দিন তো লাগেই। তাই অ্যাকশন দৃশ্যের ভিডিওগুলো ছোট হলেও-এটা করতে আমাদের প্রায় ১ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। মাদারীপুরে বসে আমরা নিজ থেকে অ্যাকশন ও এডিটের সবকিছু শিখতে পারলে-আমাদের দেশের বড় বড় অ্যাকশন পরিচালকরা কেন পারছেন না, তা হয়তো অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে। তাই আমরা যদি সঠিক নির্দেশনা ও অর্থ সহায়তা পাই তাহলে ভালো অ্যাকশন সিনেমা বানাতে পারবো বলে মনে করি"।
সুফিয়ানের মতো নিশান কুরাইশি ও তার দলের সদস্যদের ইচ্ছে তারাও একদিন বড় পর্দায় দিক নির্দেশনার কাজের জন্যে ডাক পাবে। সেদিন হয়তো গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে এই তরুণেরা নিজেদের প্রতিভা সকলের কাছে তুলে ধরতে পারবে। ভিডিও নির্মাণ করা এই তরুণদের বিশ্বাস, ভালো মানের অ্যাকশন দৃশ্যের জন্যে প্রচুর অর্থের দরকার পরে না। প্রয়োজন ব্যক্তির প্রতিভা ও ভালো মানের কাজ উপহার দেওয়ার ইচ্ছা। তাইতো ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণেরা।