পাখিদেরও খেলনা হয়! যেভাবে তৈরি হয় দোলনা, চেয়ার, মই…
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/323439492_557018462990848_7356813986952140385_n_0.jpg)
পাখি পোষার শখ আমাদের দেশে একেবারে নতুন নয়। বাহারি রঙের বিভিন্ন পাখি কেউ পোষে মনের খোরাকে আবার কেউবা বিপুল প্রসন্নতার উদ্দেশ্যে। আবার অনেকের কাছে পাখি অবসরে সময় কাটানোর উৎসও বটে। সে যাই হোক, পাখির সাথে মানুষের বন্ধন বরাবরই অবিচ্ছেদ্য। তা সে প্রকৃতি রক্ষাই হোক কিংবা আনন্দ প্রদান করাই হোক না কেন।
মানুষের ক্লান্তি ও হতাশা দূর করতে পাখি দারুণ কার্যকরী। পাখির সাথে কাটানো সময় যেমন মানুষের জন্য বিনোদন সম, তেমনি পাখিকে বিনোদন দেয়াও মানুষের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। আর সেই জায়গা থেকেই পাখিদের জন্য খেলনা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন নাবিলা হক। বাহারি নানা রকমের খেলনা পাখিদের যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি তাদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াতেও সাহায্য করে।
শুরু করতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধা কাজ করলেও এরপর আর থেমে যাননি নাবিলা। চালিয়ে যাচ্ছেন পাখিদের জন্য খেলনা তৈরির ব্যবসায়, নাম দিয়েছেন- ফেদার ফ্রেন্ড'স ফানহাউজ।
'পুচু'র মাধ্যমেই শুরু হয় যাত্রা!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/paakhir_jny_khaattchbi-_naabilaa_hk.jpeg)
নাবিলার সাথে যখন কথা শুরু করেছিলাম, তখনও পেছন থেকে পাখিরা কিচিরমিচির করে ডেকেই যাচ্ছিলো। বুঝতে পারলাম, পাখিদের সাথে নাবিলার বেশ সখ্যতা। আর হবেই বা না কেন, পাখিদের যে তাদের মতো করেই বোঝার চেষ্টা করেন নাবিলা।
নাবিলার প্রথম কক্যাটিল পাখি 'পুচু' তার ভীষণ আদরের। নাবিলার খেলনা বানানোর দুনিয়ায় প্রবেশ করানোর কৃতিত্বও পুচুরই। তার জন্য খেলনা বানাতে গিয়েই নাবিলা উন্মোচন করেন নতুন শৈল্পিক দুনিয়া।
ফেদার ফ্রেন্ড'স ফানহাউজ নামকরণের উৎস জানতে চাইলে নাবিলা বলেন, 'ওরা হচ্ছে টেম বার্ড। ওদের যেহেতু পালক আছে আর ওরা আমাদের বন্ধু। টেম বার্ডেরা একদম হাতে-কাঁধে বসে থাকে। আপনি যা করছেন, ওরা তাই করবে। আমরা ওদেরকে বন্ধুর মতো করে পালন করি। সে হিসেবে ওরা ফেদার ফ্রেন্ড; ফান হাউজ কারণ পাখিদের জন্য যেসব খেলনা আমি তৈরি করে দিচ্ছি সেগুলো ওদের জীবনে ফান যুক্ত করছে। এগুলো পেয়ে ওরা খুব খুশি থাকছে।'
টেম বার্ড শব্দটি অনেকের কাছেই নতুন হতে পারে। টেম বার্ড বা টেম পাখি হলো সেসব পাখি- যেগুলো ডাকলেই সাড়া দেয় এবং মানুষের কথা ও কাজ অনুসরণ করে।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নাবিলার পাখির জন্য খেলনা বানানোর পরিকল্পনা আসে পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকেই। প্রথম বানাতেন নিজের পাখির জন্য। বাজরিগর, কক্যাটিল পাখির মেলা সবসময়ই ছিলো নাবিলার বাসাতে। সেসময় পোষাপাখি 'পুচু'র জন্য নানারকমের খেলনা প্রয়োজন হতো, যেগুলো বাইরে থেকে কেনা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য ছিলো। ফলে নিজেই 'ডু ইট ইওরসেলফ' প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তৈরি করে দিতেন নানান রঙের খেলনা এবং সেগুলো ঝুলিয়ে দিতেন খাঁচার ভেতর।
নাবিলার পরিচয় এখন 'টয় মেকার আপু'!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/kkyaattil_paakhi_pucur_saathe_naabilaa_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
ফেসবুকে বিভিন্ন পাখির গ্রুপে যুক্ত থাকার কারণে খেলারত পাখির বিভিন্ন মুহূর্ত ছড়িয়ে দিতেন। সেখানে অনেকেই পাখিদের জন্য খেলনা দেখে প্রশংসা করতেন। ব্যস, সেখান থেকেই নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দীপনা পান। সেই থেকে ঠিক করলেন শুধু নিজের পাখির জন্য নয়- সবার পাখির জন্যই খেলনা বানানো শুরু করবেন।
এই সময় তাকে সঙ্গ দেয় করোনা মহামারিকালের অফুরন্ত সময়। পাখি বরাবরই নাবিলার কাছে ভীষণ আদরের- তার উপর পাখি পালার পূর্ব অভিজ্ঞতা তো ছিলোই। এই দুয়ের সমন্বয়ে কাজ শুরু করে আর থেমে থাকেননি।
পাখিদের জন্য খেলনা বানানোর বিষয়টি আমাদের দেশে অপেক্ষাকৃত নতুন। সাধারণত আমাদের এখানে শিশুদের জন্যই বেশি খেলনা প্রস্তুত করা হয়। দীর্ঘদিন পাখি পালার অভিজ্ঞতা থেকে নাবিলার মনে হয়েছে, পাখিদের সময় কাটানোর জন্যও খেলনা প্রয়োজন। তাই নিয়েছেন এই উদ্যোগ। নাবিলা হেসে জানান, 'শুধু নাবিলা থেকে এখন আমি "টয় মেকার আপু" হয়ে গিয়েছি।'
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিম কাঠ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/khelnaa_saamgrii_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
নাবিলার সংগ্রহে থাকা পাখিগুলো মূলত বিদেশি পাখি; আমাদের দেশের স্থানীয় পোষ্য পাখি নয়। তাই তাদের আদর-যত্নের বিষয়টিও নাবিলাকে সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। নাবিলার মতে, এই ধরনের টেম বার্ডগুলো অধিক সংবেদনশীল।
নাবিলাকে পাখিদের জন্য খেলনা প্রস্তুত করতে গিয়ে বিস্তর গবেষণা করতে হয়েছে। কোনটি পাখিদের জন্য ভালো বা কোনটি পাখিদের জন্য অনুপযোগী সেটি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছেন নাবিলা।
খেলনা বানাতে গিয়েও নাবিলাকে রাখতে হয় জোর সতর্কতা। যে উপাদানগুলো পাখিদের জন্য নিরাপদ সেগুলো নিয়েই কাজ করতে হয় তাকে। রশি, কাঠ, খড়, নারকেলের খোল, প্লাস্টিকের বল দিয়েই বেশিরভাগ সময় খেলনা বানান তিনি। তবে সবরকমের কাঠ দিয়ে খেলনা বানানো যায় না। প্রয়োজন হয় নিমের কাঠ। বলে রাখা ভালো, নিম গাছের কাঠ ও ইউক্যালিপটাস গাছের কাঠ পাখিদের খেলনার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ কাঠ।
খেলনার বিভিন্ন উপাদান ঢাকায় বসে সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপুল হ্যাঁপা পোহাতে হয় নাবিলাকে। মূলত গ্রাম থেকেই বিভিন্ন উপাদান ঢাকায় আনান নাবিলা। নাবিলা বলেন, 'মানুষ যেমন চায়না থেকে শিপমেন্ট নিয়ে আসে, আমার ক্ষেত্রে রীতিমত গাছের ডালের শিপমেন্ট নিতে হয়। ঢাকায় আসলে গাছ খুবই কম। গ্রামে দেখা যায় গাছের পর গাছ নিয়ে জঙ্গল হয়ে আছে। অনেকে সেসব গাছ ছেঁটে দেয়, কেটে ফেলে দেয়। সেখানে বিভিন্ন লোকদের সাথে চুক্তি করা থাকে। তারা অর্থের বিনিময়ে সেসব ডাল বিক্রি করে।'
গ্রাহকদের ভরসার জায়গা ফেদার ফ্রেন্ড'স ফানহাউজ
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/khelnaa_niye_kkyaattiler_khelaa_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
১৫০০ টাকা দিয়ে নাবিলা শুরু করেছিলেন এই ব্যবসায়। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয় নাবিলার। অর্ডার আসার ক্ষেত্রে উত্থান পতন থাকলেও প্রতি মাসে গড়ে ৩৫-৪০ টি অর্ডার আসে নাবিলার ফেদার ফ্রেন্ড'স ফানহাউজে।
যারা পাখি পালেন তারাই মূলত নাবিলার মূল গ্রাহক। নাবিলা বলেন, 'আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন খুবই কনফিউজড ছিলাম। আমার ধারণা ছিলো, বাংলাদেশে হয়তো বেশি মানুষ পাখি পালেন না। আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কিছু একটা হবে- কিন্তু এতটাও হবে সেটা আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। স্টেপ বাই স্টেপ আগানোর পর এত বেশি রেসপন্স আসে, তখন আমি বুঝতে পারি যে বাংলাদেশে এত মানুষ পাখি পালেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমি বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি যে পাখির জন্য কেবল খাঁচা, পানির বাটি আর খাবারের বাটি পর্যাপ্ত না। ওদের জন্য আরো অনেক কিছু দরকার।'
মাত্র ৮টি খেলনা দিয়ে শুরু করা নাবিলার ভাণ্ডারে বর্তমানে প্রায় ১০০ ধরনের ভিন্ন ডিজাইনের খেলনা রয়েছে। খেলনা বানানোর ক্ষেত্রে সময়কালও ভিন্নরকম হয়। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যেই একেকটি খেলনা প্রস্তুত করে ফেলতে পারেন নাবিলা।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/khelnaay_bse_absr_yaapn_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
বর্তমানে নাবিলার কাছে পাখিদের জন্য দোলনা, চিউয়িং টয়, হ্যাংগিং টয়, ক্লাইম্বিং টয়, মই, চেয়ার, ব্রিজ, শব্দ করে এমন খেলনা রয়েছে। নাবিলার চেষ্টা থাকে বিদেশের মতো করে দেশীয় পাখিদের যত্ন করার। তিনি বলেন, 'আমি পাখির জন্য শুরু থেকেই বিভিন্ন ফরেন গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। সেখান থেকেই আমি বিভিন্ন টিপস অ্যান্ড ট্রিক্স পাই। কোনো সমস্যা হলে সমাধান কী হবে তা বোঝার চেষ্টা করতাম। তখন দেখতাম বিদেশীরা অনেক সুন্দর করে পাখি পালছে। খেলনা থেকে শুরু করে খাবারদাবার সবকিছুই থাকতো সেখানে।'
পাখিদের খেলনার যত দাম
পাখির খেলনা তৈরি করতে গিয়ে নাবিলা চেষ্টা করেন কম খরচে মানুষের কাছে খেলনা পৌঁছে দিতে। তাই শুরু থেকেই পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন রকমের নতুন ডিজাইনের খেলনা বানাবেন কিন্তু দাম সে অনুপাতে যতটা সম্ভব কম রাখা যায় তার চেষ্টা করবেন। যাতে সবার হাতে খেলনা পৌঁছানো সম্ভব হয়।
বর্তমানে ২০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে খেলনা পাওয়া যায়। স্টুডেন্ট বাজেট হিসেবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ভালো মানের খেলনা পাওয়া যায় এখানে। আফ্রিকান বা অ্যামাজনের টিয়া পাখির জন্য যেসব খেলনা পাওয়া যায় সেগুলো মূলত ৬৫০ টাকা হয়। বড় পাখিরা অনেকসময় খেলনা ভেঙ্গে ফেলে- তাই তাদের জন্য খুব ভালো উপাদান দিয়ে খেলনা প্রস্তুত করে দিতে হয় নাবিলাকে। তার জন্য দামটাও একটু বেশি পড়ে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/paakhider_khaatt_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরেও পাখিদের জন্য খেলনা পাঠানোর অভিজ্ঞতা নাবিলার হয়েছে। কানাডা, আমেরিকা, মালয়েশিয়া থেকে বেশ কিছু গ্রাহক একাধিকবার খেলনা নিয়েছেন। বাংলাদেশের বাইরে ২০ থেকে ২৫ বার খেলনা পাঠিয়েছেন তিনি। দেশের মধ্যে জেলা-উপজেলা সহ সব জায়গা থেকেই খেলনার অর্ডার আসে।
ডিজাইনের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনা নাবিলার অন্যতম লক্ষ্য। তিনি বলেন, 'আমি অবসর সময়ে বসে নতুন ডিজাইনের বিষয়ে চিন্তা করি। এমন কিছু ট্রাই করেছি, যেগুলো আসলে বাংলাদেশে খুঁজেও পাওয়া যায় না বা কেউ চিন্তাও করে না। সেগুলো বাইরের দেশে অনেক সহজলভ্য কিন্তু আমাদের দেশে পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। তাই আমি পাহাড়ের মানুষদের সাথে যুক্ত থাকি, যাতে তাদের থেকে পাখিদের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসা যায়।'
পরিবারের সংশয় দূর করা ছিলো মূল চ্যালেঞ্জ
পাখির জন্য খেলনা তৈরির শুরুতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে নাবিলাকে। মানুষ তার কাজের ধরন বুঝবে কি-না তা নিয়ে শুরুতেই সন্দিহান ছিলেন তিনি। তাছাড়া, পরিবার থেকেও শুরুতে সবার সংশয় ছিলো। নাবিলা বলেন, 'শুরুতে আমার মা বলতো, এই খেলনাগুলো যে বানাচ্ছো সেগুলো আসলে কি মানুষ নিবে নাকি পুচুই খেলবে। এই লাইনটাতে এক মুহূর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলাম। তারপর একটু বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার শুরু করি। প্রথম দিনের অর্ডারে একসাথে তিনটি অর্ডার আসে। আমার প্রাথমিক বিনিয়োগ ছিলো ১৫০০ টাকা আর প্রথম দিনের অর্ডারেই ২০০০ টাকার বেশি আসে। এটাই আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর সবচেয়ে বড় গিফট।'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/paakhir_jny_khelnaa_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
এখন অবশ্য আর এই সমস্যা নেই। পরিবারের সদস্যদের থেকেই এখন সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পান নাবিলা।
উপাদান সংগ্রহ নাবিলার জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। নিম কাঠ খেলনা তৈরির প্রধান উপাদান হওয়ায় সেটা ঢাকার বাইরে থেকে সংগ্রহ করাটাও নাবিলার জন্য অনেক সমস্যার ছিলো। নাবিলা যেহেতু সবসময় তার গ্রাহকদের উন্নতমানের খেলনা পৌঁছে দিতে চান। তাই অনেকসময় খেলনা প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে যায়, যেটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
পড়াশোনা সামলে প্রথম ছয়মাস কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে নাবিলার। কিন্তু দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ নাবিলা নতুন কিছু দাঁড় করাতে এতটুকু শ্রম দিতে রাজিই ছিলেন। নাবিলার মতে, গ্রাহকদের কাছ থেকে শুরু থেকেই এত ভালোবাসা পেয়েছেন যে তার জন্য কোনো বাধাই আর বাধা নয়।
পাখির খেলনার জন্য তৈরি করতে চান শো-রুম
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/paakhir_dolnaa_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
প্রথম দেড় বছর নাবিলা একা হাতেই সব কাজ করেছেন। বর্তমানে তাকে সাহায্য করার জন্য আরেকজন রয়েছেন। এখন নাবিলা হাতে বানানোর পাশাপাশি কিছু খেলনা চায়না থেকেও আমদানি করছেন।
পাখিদের খেলনা নিয়ে নাবিলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক। পাখিদের খেলনা নিয়ে শো-রুম করার ইচ্ছা আছে তার। তাছাড়া খেলনা নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরির করার ইচ্ছাও তার রয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু পাখির জন্যই নয়, বিড়ালের জন্য খেলনা প্রস্তুত করার ইচ্ছা রয়েছে তার। আমাদের দেশে বিড়ালদের খেলনা এখনো রপ্তানি নির্ভর হওয়ায় গ্রাহকদের কাছ থেকে এ ধরনের খেলনার অনুরোধও পান তিনি।
বর্তমানে কারো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি দেশের বাইরে খেলনা পাঠাতে পারেন না নাবিলা। তবে ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে হাতে বানানো খেলনা সরাসরি দেশের বাইরে রপ্তানি করবেন। সে অনুযায়ীই কাজ চলছে বর্তমানে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/01/05/prstut_kraa_hy_bdd_dhrnner_khelnaa_chbi-_naabilaa_hk.jpeg)
নতুন কেউ খেলনা বানানোর জগতে আসতে চাইলে তার জন্য কেমন উপদেশ থাকবে জানতে চাইলে নাবিলা বলেন, 'আমাকে যদি কোনোদিন থেমে যেতে হয়, কোনো না কোনো সময় এমন ফানহাউজ আবার হবে। নাহলে পাখিদের কী হবে? প্রথমত, খেলনা তৈরিকে ব্যবসায় হিসেবে নেয়া যাবে না। লাভ-লোকসানকে এক পাশে রেখে মাথায় রাখতে হবে, যাতে কোনো রকমের ক্ষতিকর জিনিস পাখির জন্য ব্যবহার না করা হয়। কারণ ছোট অসাবধানতায় পাখির জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, দামকে যতটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, শিক্ষার্থীরাই পাখি বেশি নেয়। তাদের বাজেট কম থাকায় দামকেও হাতের নাগালে রাখতে হবে। সবশেষে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেদার ফ্রেন্ড'স ফানহাউজ নামে একটি পেজ রয়েছে। ৮,২০০ ফলোয়ারযুক্ত পেজটিতে গেলেই পাওয়া যাবে নানান রকমের খেলনা।
পাখির খেলনা নিয়ে নাবিলার সাথে যতক্ষণ কথা বলছিলাম, পাখিরাও নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা চালিয়েই যাচ্ছিলো। তারাও যে নাবিলাকে ভালোবাসে, তা তাদের হাল-হকিকত দেখেই বোঝা যায়। এই পাখিদের ভালোবেসেই খেলনা নিয়ে বহুদূর যেতে চান নাবিলা।