ডুবুরি আবদুল গণির জলজ জীবন
'নদী আমারে কখনো ফেরায় নাই। যখন অসহায় হয়ে নদীর কাছে কিছু চাইতে আসছি আর ডুব দিছি, কিছু না কিছু নদীর থেকে পাইছি', ছলছল নয়নে নদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন মোহাম্মদ আবদুল গণি। পেশায় তিনি একজন ডুবুরি। সুদীর্ঘ ৪০ বছর নদীর সঙ্গে সন্ধি করেই কাটিয়ে দিয়েছেন। গত তিন বছর ধরে পেশাদার ডুবুরির মতো কাজকর্ম না করলেও নদীর প্রতি সেই পুরোনো টান রয়েই গেছে। তাই বর্তমান অবস্থান কেরানিগঞ্জের চড়াইলে হলেও সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন বুড়িগঙ্গার পাড়ে।
ঋতু বদলের পালায় চৈত্র মাস পাগলা ঘোড়ার মতো। কখনো রোদের উষ্ণতা খেলা করে, আবার কখনো মেঘের নিনাদে ফেটে পড়ে আকাশ। এমনই কোনো এক মেঘলা দিনে বুড়িগঙ্গার ধারে সাক্ষাৎ হয় আবদুল গণির সাথে। মাথার কাঁচা-পাকা চুল, হাতের কুঁচকানো চামড়া আর মুখ ভরা হাসি- এই তিনই যেন আবদুল গণিকে স্বতন্ত্র করেছে বাকিদের থেকে। তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়েও গণি মামা কিংবা গণি চাচার মতো হাঁকডাক আশপাশ থেকে শোনা যায়।
'আমি অখন মেশিন ছাড়াই পানিতে ডুব দিতে পারি,' আবদুল গণির মুখে 'মেশিনের' কথা শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম সেসময়। পরে বুঝলাম, মেশিন বলতে অক্সিজেন সিলিন্ডারকে বুঝিয়েছেন তিনি। অক্সিজেন সিলিন্ডার কিংবা মাস্ক ছাড়াই দিব্যি কয়েক মিনিট ৪০ হাত জলের তলায় কাটিয়ে দিতে পারেন। তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার যে একেবারেই তিনি ব্যবহার করেন না, তা নয়। নিজের মতো করে অক্সিজেন মাস্ক তৈরি করে নিয়েছেন। এই চল্লিশ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আবদুল গণিকে করে তুলেছে একজন দক্ষ ডুবুরি।
'আমার মাথায় অত চুলও নাই, এই চল্লিশ বছরে নদী থেকে যত লাশ উঠায়ে দাফন-কাফন করছি,' নদী থেকে কী কী তুলেছেন জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে বলেন আবদুল গণি। মৃত লাশ ছাড়াও জাহাজের পাখা, জাহাজ, স্টিমার থেকে ডুবে যাওয়া মালামাল, চাল-গম সমেত জাহাজ এবং বিভিন্ন দূর্ঘটনায় উদ্ধারকাজ করে থাকেন আবদুল গণি। নদীভিত্তিক বিভিন্ন দূর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যেসকল ডুবুরি সাহায্য করেন, আবদুল গণি তাদেরই একজন।
ঢাকায় এসে উঠেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের বাড়িতে
শরীয়তপুরের সুরেশ্বরে পদ্মার পাড়ে আবদুল গণির আদি বাড়ি। ১৯৭১ সালে মাকে সাথে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। উঠেছিলেন প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের বাড়িতে। সেসময় আবদুল গণির আনুমানিক বয়স ছিল আট কি দশ। প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের বাড়িতেই কাজ করতেন তার মা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রয়াত মেয়রের স্ত্রী ১৫ কেজি চাল, ৫ কেজি ডাল এবং ১৫ টাকা সমেত তাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন দেশের বাড়িতে। যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ঢাকায় থাকার কারণে রেসকোর্স ময়দানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণও শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো আবদুল গণির।
আবদুল গণি বলেন, 'হাইকোর্টের পিছে রেসকোর্স ময়দানে গিয়া ভাষণ শুনছি। নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, আলুবাজারের মানুষের লগে গেছিলাম। গণ্ডগোলের সময় ঢাকায় ছিলাম না। নয় মাস যুদ্ধ হওয়ার পর দেশ যেদিন স্বাধীন হইলো, সেদিন আমার মামা আর মা-সহ পদ্মা পার হয়ে দিঘলী দিয়া হাঁইটা আসছি। তখন নদীর মধ্যে কোনো লাশের অভাব ছিলো না। লাশ দেইখা আমার মা ২০ বছর নদীর মাছই খায় নাই।'
যুদ্ধের পর ঢাকায় ফিরে আবারো ওঠেন নাজিরাবাজারের ওই বাড়িতে। এরপরেই শুরু হয় আবদুল গণির নতুন জীবনের সংগ্রাম। নদী থেকে লাশ খুঁজে ট্রাকে তুলে রাখা থেকে শুরু করে যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র খুঁজে জমা দেওয়া- সবই করেছিলেন সেসময়। তারও প্রায় ছয়-সাত বছর পর শুরু করেন আনুষ্ঠানিকভাবে ডুবুরির কাজ।
শৈশবের কথা বলতে গিয়ে আবদুল গণি বলেন, 'ছোটবেলায় বাবা মইরা গেছে। বাবা আর দাদারে এক জানাজায় মাটি দিছি। একলগে মারা গেছে দুইজন। দাদার গলা দিয়া খালি রক্ত পড়তো আর বাবার পেট ফুলতো।'
আবদুল গণি কবে কাজ শুরু করেন তা বলতে গিয়ে হাত বাড়িয়ে কোনো এক জেটি দেখানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, 'এই যে নতুন জেটিটা যখন বানাইছে, তখন কাজ শুরু করি। এখানে অনেক জাহাজ এসে ভিড়তো। পোর্ট বানানোর সময় বড় বড় মাল পইড়া যাইতো। পরে ডুবারু [ডুবুরি] হিসাবে পোস্তগোলা ব্রিজে কাজ করছি পাঁচ বছর চায়নাগো লগে। দাউদকান্দি ব্রিজে কাজ করছি পাঁচ বছর।'
কাজ হয় চুক্তিভিত্তিক
ডুবুরিদের সাথে মালিকপক্ষের কাজের হিসেবটা হয় চুক্তিভিত্তিক। মালামাল সমেত কোনো জাহাজ বা নৌকা ডুবে গেলে চুক্তি অনুসারে মালিকপক্ষ থেকেই ডুবুরিদের দায়িত্ব দেওয়া হয় মালামাল বা জাহাজ তুলে দেওয়ার জন্য। আবদুল গণি জানান, 'মাল বুইঝ্যা টাকা দেয়। এক লাখ টাকার মাল পইড়া গেলে দশ-বিশ হাজার টাকা দেয়। তুলে দিতে পারলে টাকা, না পারলে জরিমানা।'
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোই মূলত ডুবুরি হিসেবে তাদের নিযুক্ত করেন। কোথাও কোনো জাহাজ ডুবলে কোম্পানি থেকেই যোগাযোগ করা হয় তাদের সাথে।
বিভিন্ন সেতুতে কাজ চলাকালীন আবদুল গণি টাকা পেতেন চুক্তি ও দিনের হিসেবে। কাজ বুঝে কোনো কোনো দিন দুই-পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্তও পেতেন। তবে এখানে থাকতো দলের হিসেব। বড় কাজ হলে আগে কয়েকজন মিলে দল প্রস্তুত করে নিতেন। দলে যতজন মানুষ থাকতো সেই অনুসারেই টাকা দেওয়া হতো। পরে তারা টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন।
চুক্তি অনুসারে যদি কিছু খুঁজতে পানিতে নামেন এবং তা যদি খুঁজে না পান, তাহলেও মালিকপক্ষ থেকে টাকা পান তারা। তবে সেই অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
নদীর তলে পেয়েছেন কষ্টি পাথরের মনসা
নদীর নিচে অফুরন্ত ভাণ্ডারের কথা একাধিকবার উল্লেখ করেন আবদুল গণি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আট মণ ওজনের কষ্টি পাথরের মনসার মূর্তি! নবাব বাড়ির সিঁড়ি বরাবর বুড়িগঙ্গার মাঝখানে পেয়েছিলেন সেই মূর্তি। তিনি বলেন, 'কামরুল দারোগা যে সময় কেরানিগঞ্জে ছিলো, সেই সময় আট মণ ওজনের মনসার মূর্তি জাদুঘরে নিয়ে রাখছে। একটা হাত ভাঙ্গা মনসার মূর্তি ছিলো।'
এই মূর্তি খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল গণি বলেন, '৮৮ এর বন্যার পরে বুড়িগঙ্গার ময়লা সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ঐটা এরপর মাটির নিচ থেকে উইঠা আসছিলো। আমরা ডুবাইতে গিয়া পাইসি। গাঙ্গে তো মালের [জিনিসের] অভাব নাই।'
নদীর তলের সম্ভারের কথা বলতে গিয়ে গণি আরো বলেন, 'যুদ্ধের সময় যা ডুবছে, ওগুলাই এখনো তোলা হয় নাই। ভৈরব নদে যুদ্ধের জাহাজ ডুবছে, আজ পর্যন্ত ওইটারে তুলতে পারে নাই। ঐখানে পানি আছে দেড়শ হাত।'
সোনা, রূপা, তামা, কাঁসা, লোহা সবকিছুই পেয়েছেন নদী থেকে। নদীর তলদেশ থেকে একবার ৯০ ভরি সোনার গয়নাও পেয়েছিলেন আবদুল গণি ও তার দল। পরে সেই গয়না পাঁচজন ডুবুরি ভাগ করে নেন।
চুক্তি ছাড়া নদীর নিচে কিছু পাওয়া গেলে তার মালিক ডুবুরিরাই হন। মালিক পাওয়া না গেলে নদীর নিচ থেকে সংগ্রহীত জিনিস বিক্রি করে দেন বাজারে। যা অর্থ পান দলের কেউ সাথে থাকলে ভাগাভাগি করে নেন।
নদীর প্রতি অগাধ ভরসা আবদুল গণির। কেউ বেইমানি করলে নদীই তার শাস্তি দেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আবদুল গণির মতে, 'পানির মালিক' সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। পানির মালিক কে জানতে চাইলে বলেন, 'পানির মালিক জিন্দা পীর খিজির (আঃ)। নদীর তলে গুপ্তধন আর মালামাল সবকিছু খিজির (আঃ) এর কাছে আছে। মনে করেন, কেউ স্টাফের বেতন ঠিকমতো দিলো না, পরে ওর জিনিসটা নদী দিয়া গেলে এক্সিডেন্ট হইবো; নাহলে পাঙ্খা ভেঙ্গে যাইবো আর নাহলে জাহাজ ডুইবা যাইবো। পানির উপরে যেমন থানা-ফাঁড়ি আছে, পানির নিচেও তেমন থানা-ফাঁড়ি আছে।'
পানির মালিককে সন্তুষ্ট রাখার জন্য তারা আয়োজন করেন মিলাদ মাহফিল। লক্ষ্য তাদের একটাই, পানির নিচ থেকে যেন নিরাপদে ফেরত আসতে পারেন।
পাড়ি দিয়েছেন অজস্র নদী
এখন পর্যন্ত দেশের ভেতর বুড়িগঙ্গা, কালিগঙ্গা, ইছামতি, শীতলক্ষ্যা, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ধলেশ্বরী, আড়িয়াল খাঁ, তুরাগ, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী প্রভৃতি নদীতে ডুবুরি হিসেবে কাজ করেছেন আবদুল গণি। এমনকি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে ভারতের আংটিহারা নদীতেও গিয়েছেন ডুবুরি হিসেবে কাজ করতে।
চাঁদপুরের তিন নদীর মোহনাকে সবচেয়ে ভয়ংকর বলে অভিহিত করেন আবদুল গণি। মোহনার তীব্র স্রোতে নৌযান হারিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আবদুল গণি বলেন, 'তিন নদীর ঘূর্ণায় পড়লে বাঁচে না কেউ, যত বড় জাহাজই হোক। ভয়ংকর জায়গা। ওখান থেকে কিছু উঠানো যায় না। পাড়েই দুই-আড়াইশ হাত পানি। মাঝখানে যে কত হাত পানি!'
বুড়িগঙ্গা নদীতে কত হাত পানি আছে জানতে চাইলে আবদুল গণি বলেন, 'জায়গায় জায়গায় পানি আছে ৩০ হাত, ২০ হাত, ২৫ হাত আবার ৫০ হাত। বাবু বাজারের দিকে পানি আছে ৬০ হাত। মিটফোর্ডের পিছে আছে ৩০-৩৫ হাত।'
অনেক নদী মরে গিয়েছে- এমন কথাও বলেন আবদুল গণি। তার ভাষ্যে, সিরাজদিখানে যমুনা নদী মরে গিয়েছে। এমনকি পদ্মাও আর আগের মতো প্রাণবন্ত নেই। পাশাপাশি তুরাগ, বুড়িগঙ্গা তো আছেই।
বুড়িগঙ্গা নদীকে নিয়ে আবদুল গণি বলেন, 'বুড়িগঙ্গা মইরা গেছেগা। বুড়িগঙ্গার এই পাড় থেকে ওই পাড়ে পাড়ি দিতে গেলে মনে করেন পরাণ কাঁপে। এই পানি আগে টলটলা আছিলো। ডুব দিলে দেখা যাইতো- মোটা মোটা চিংড়ি মাছ, আইড় মাছ। এখন ময়লা পানিতে কিছু নাই।'
নদীতে নামলে পানিতে থাকা প্রাণীদের সাথেও সাক্ষাৎ হয় আবদুল গণির। তিনি বলেন, 'মাছদের সাথে দেখা হয়, হাতে লাগেও। যেই বড় মাছ, দামী মাছ ভালো লাগে সেটা ধরি। ধরে এনে খাই। আইড় মাছ, চিংড়ি মাছ, বাগাড় মাছ এগুলা ধরতাম। এখন মাছ বুড়িগঙ্গায় নাই। পদ্মায় গেলে মাছ পাই।'
কত সময় পানিতে ডুবে থাকতে পারেন জানতে চাইলে আবদুল গণি বলেন, 'যতক্ষণ হিট থাকে ততক্ষণ পানিতে থাকতে পারি। এক-দুই ঘণ্টা থাকা যায়। পরবর্তী সময়ে আরেকজন নামে। আমি উঠে আসলে তারে কাজ বুঝায়ে দেই। সিরিয়াল অনুসারে আবার যদি পড়ি, তখন আবার নামি।'
'জাহাজ বালু লইয়া ডুইবা গেলে, নদীর নিচের গিয়ে বালু তোলার জন্য পাইপ ফিটিং করতে হয় আগে। পাইপের গোঁড়ায় একজনকে থাকতে হয়। বালু খালি কইরা জাহাজ তুলতে হয়। লোহা, টিন ডুইবা গেলে আগে মাল খালি কইরা জিনিস তুলতে হয়', বলেন আবদুল গণি।
সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ডুবুরির কাজ করেছেন আবদুল গণি। সিলেটের জাফলং, ছাতক, ভৈরব, চাঁদপুর, খুলনার রামপাল, চট্টগ্রাম মংলা পোর্টসহ অনেক জায়গায় কাজ করেছেন।
আবদুল গণি এখন নিজেই ওস্তাদ
ব্যক্তিজীবনে স্ত্রী, সাত সন্তান ও নাতি-নাতনী নিয়ে আবদুল গণির সংসার। তবে নদী এখনো টানে তাকে। যখনই কোনো অর্থাভাবে পড়েন, চলে আসেন নদীর কাছে। ডুবে দিয়ে যা পান তাই বিক্রি করে অভাব ঘুচান। তাছাড়া মাঝেমধ্যেই ৫/৭ দিনের জন্য দল নিয়ে ট্রলার কিংবা নৌকায় চেপে চলে যান নদীতে। সাথে থাকে হাঁড়ি পাতিল। ট্রলারেই থাকেন তখন, সেখানেই রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়া সারেন। বড় বড় কাজে গেলে দেড়-দুই মাস পর্যন্তও ট্রলারে থাকতে হয় তাদের।
প্রথম ওস্তাদের কথা বলতে গিয়ে আবদুল গণি উল্লেখ করেন লোকমান নামক একজন ব্যক্তির নাম। তিনিই হাতে ধরে আবদুল গণিকে শিখিয়েছিলেন সবকিছু। এখন আবদুল গণি নিজে অনেকের ওস্তাদ হয়েছেন। আবদুল গণির ছাত্ররা যখন ডুবুরি হিসেবে সফলতা অর্জন করে, সেটি নিয়েও গর্ব করেন অনেক।
আবদুল গণি বলেন, 'বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই আমার ছাত্র আছে। তাদের লগে লইয়া ডুব দিয়া সব শিখাইছি। আমার ওস্তাদও আমারে এমনেই শিখাইছে। আমি তো আগে ডরাইতাম। ওস্তাদ কইতো, পানির নিচে গিয়া দেখবি তুই আর উপরে আইসাও দেখবি তুই।'
অনেক ডুবুরি কন্ট্রাক্টর হয়ে যাওয়ার পর নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বলে অনুযোগ করেন আবদুল গণি। তিনি বলেন, 'কন্ট্রাক্টর হয়ে ওরা অনেক বড়লোক হইয়া গেলো। বাড়িঘর এইটা ওইটা কইরা ফেললো। সেলিম আজিজের জাহাজ উঠাইলো তিন চারটা, আওলাদ মিয়ার জাহাজ উঠাইলো। মতিঝিলের বড় বড় কোম্পানির কাজ লইয়া নিলো। আর আমাগোরে কইলো কাজ করলে রোজ ৫০০ টাকা দিবো।'
দুর্যোগ পাড়ি দিয়েও আবদুল গণি নদীতে নেমেছেন বহুবার। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা ভয়, সবকিছুকে উপেক্ষা করে ডুব দিয়েছেন নদীতে। মুখে একটাই কথা, 'ভয় করলে কি পানির নিচে যাওয়া যায়?'
'সবাই সব কাজ পারে না আর সব জিনিস সবারে দিয়ে হয় না। আল্লাহপাক এটা আমার কপালে লিখে দিসে যে আমি এই কর্ম করবো। রিজিক আমার পানির নিচে। তিন বছর ধইরা আমি এই কাজ করি না। কারণ সবাই বেইমান। কাজ হাসিল করায়ে পরবর্তী সময়ে দেখে না। এখন ঘুরি আর খাই। ভাই-ব্রাদারদের দেখতে মন চাইলে চইলা আসি বুড়িগঙ্গার ধারে।'