আপনার সন্তান কি সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? যেভাবে বুঝবেন
গত দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল ও আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন উভয়ই তরুণদের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছে। এ নিয়ে মা-বাবাদের কী করা উচিত তার পরামর্শের জন্য মনস্তাত্ত্বিকদের পরামর্শ নিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
হ্যাকেনস্যাক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের মনস্তত্ত্ব বিভাগের চেয়ার ড. গ্যারি স্মল বলেন, 'পরিবারগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।' তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সহজাতভাবে কখনোই ভালো বা খারাপ কিছু ছিল না। কিন্তু মা-বাবাকে দেখতে হবে এ মাধ্যম তাদের সন্তানদের ওপর কীরকম প্রভাব ফেলছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস গ্যারি স্মলসহ আরও কয়েকজন মনোবিদের সামনে এ বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে।
আপনার সন্তান কি 'বৈচিত্র্যময় ও অর্থবহ' কর্মকাণ্ডে দৈনিক অংশগ্রহণ করে?
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অভ পেডিয়াট্রিক্স-এর বিশেষজ্ঞ ড. জেনি রেডস্কি বলেন, মা-বাবাকে দেখতে হবে, তাদের সন্তান ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে অন্য কাজগুলো করে আনন্দ পাচ্ছে কি না।
তারা বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করছে কি না, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিচ্ছে কি না এসব নিয়ে মা-বাবাকে ভাবতে পরামর্শ দিয়েছেন চাইল্ড মাইন্ড ইনস্টিটিউট-এর প্রেসিডেন্ট ড. হ্যারল্ড এস. কোপলউইজ।
কোনো কিশোর স্কুলে যাওয়া ও ডিজিটাল পর্দায় সময় কাটানোর পাশাপাশি অন্য কোনো কাজে সময় ব্যয় করলে, তারা প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করলেও এটির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন ড. হ্যারল্ড।
ড. রেডস্কি বলেন, বাচ্চাদের আবেগের চর্চার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই প্রাথমিক আউটলেট হয়ে উঠছে কি না সেদিকটাও মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে।
সারাদিনের চাপের পর সন্তান যদি কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় শান্তি খুঁজে পায়, তাহলে সেক্ষেত্রে মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। এসব পরিস্থিতিতে মা-বাবা সন্তানদেরকে ভিন্ন কোনো বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার সক্রিয় চেষ্টা করতে পারেন।
আপনার সন্তান দৈনিক কত ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্য়য় করছে?
বালক ও কিশোরদের দৈনিক কত ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করাটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের, তার কোনো প্রমাণসিদ্ধ সীমানা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইয়ুথ মেন্টাল হেলথ-এর সহ-ক্লিনিক্যাল পরিচালক অ্যান ম্যারি আলবানো বলেন, সন্তান কতটুকু সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ এবং মা-বাবাকে এ সময় নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
ড. কোপলউইজ বয়সন্ধিকালে প্রতিদিন চার ঘণ্টার বেশি ডিজিটাল পর্দায় সময় কাটানোর পক্ষে নন। অন্যদিকে ড. আলবানোর মতে, পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তানের প্রতি এক ঘণ্টার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য গড়ে দৈনিক ৩-৫ ঘণ্টা সরাসরি সামাজিকীকরণে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
অন্যদিকে ড. স্মল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্করা দৈনিক কত ঘণ্টা পর্দায় সময় কাটাচ্ছেন সেটা যেন তারা ভুলে না যান। বরং অফলাইনে কীভাবে সময় কাটাতে হয়, তার জন্য তারা সন্তানদের জন্য মডেল হতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থামাতে পারছে না সন্তান?
হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিলে সন্তানের একটু রাগ করা বা মন খারাপ করাটা প্রত্যাশিত বলে জানান ড. আলবানো।
'কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে না দিলে তারা যদি কান্না করে, বেশি রাগ দেখায়, বা আপনার প্রতি চেঁচামেচি করে, তাহলে এগুলোকে বিপদ সংকেত হিসেবে দেখতে হবে,' বলেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়া কি তাদের ঘুম ও কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে?
মা-বাবা চাইলে ঘুমানোর সময় সব ডিভাইস বিছানা থেকে সরিয়ে রাখতে পারেন।
এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সন্তানের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, তাদের মুড বা খাবারের রুচিতে বদল ঘটছে কি না ইত্যাতি বিষয়ে মা-বাবাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমান সভ্যতার একটি অংশ হয়ে উঠেছে। তাই সন্তানকে এ থেকে পুরোপুরি দূরে রাখার চেষ্টা করাটা অর্থহীন। বরং তারা যেন এর ক্ষতিকর ব্যবহার না করে, সেদিকটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেই মঙ্গল।