আশি-নব্বইয়ের দশকের তুমুল জনপ্রিয় সিডি-ক্যাসেটের যে দোকানগুলোকে আজও খুঁজে পাবেন
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_145156_0.jpg)
হালের স্পটিফাই, ইউটিউবের যুগে সিডি, ক্যাসেট কিংবা ভিসিডি শব্দ গুলো কেমন অচেনা শোনায়, তাই না? ইন্টারনেটের উৎকর্ষে যেখানে বহু আগেই প্রয়োজন ফুরিয়েছে রেডিওর, টেলিভিশন পরিণত হতে যাচ্ছে অপ্রয়োজনীয় এক বাক্সে, সেখানে সিডি-ক্যাসেট বা ক্যাসেট প্লেয়ার শব্দগুলোকে যে প্রাগৈতিহাসিক মনে হচ্ছে না, এই ঢের।
অথচ আশি-নব্বইয়ের দশকে বিনোদনের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল এসব যন্ত্র। একসময় তো গান শোনার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছিলো ক্যাসেট। এরপর এলো সিডি। এমপিথ্রি নামক যন্ত্রের আগমনে মধ্যে দিয়ে সেই যে সিডি-ক্যাসেটের দিন শেষ হলো, আর মাথা তুলতে পারেনি এ ব্যবসা। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সিডি ক্যাসেট এখন অনেকটাই শৌখিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
একসময় ঢাকার বেশ কিছু দোকানে পাওয়া যেত বিদেশি ব্যান্ড সংগীতের সিডি-ক্যাসেট। তারাই তৈরি করেছিল একটি মননশীল সংগীতপ্রেমী প্রজন্ম, যাদের কল্যাণে দেশের ব্যান্ড সংগীত আজ পেয়েছে এই বিপুল গ্রহণযোগ্যতা। শুধু বিদেশি গান নয়, দেশীয় শিল্পীদের গানের অ্যালবাম বিক্রি করতো এমন দোকানের সংখ্যাও ছিলো অগণিত। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আলাদাভাবে গড়ে উঠেছিল সিডি-ক্যাসেটের মার্কেট। বিপণন ও বিক্রিই নয় শুধু, কোন কোন মার্কেটে ব্যবস্থা ছিলো গান রেকর্ডিং করারও।
অডিও ইন্ডাস্ট্রির সেসব সুদিন ফুরিয়েছে অনেক আগে। তবুও ঢাকার অনেক জায়গায় এমন কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে যারা এখনও সিডি-ক্যাসেট বিক্রি করছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির যুগে কীভাবে আর কেনই বা টিকে রইলেন তারা, সে এক রহস্য।
এলিফ্যান্ট রোড, 'রেইনবো' এবং কবীর ভাই
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_125310.jpg)
সময়টা আশি কিংবা নব্বইয়ের দশক। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড তখন আজকের মত এত জরাজীর্ণ নয়। এই রোডের পাশ ধরে যে কফি হাউজের গলি, সেখানেও তখন গজিয়ে ওঠেনি ভূঁইফোড় সব খাবারের দোকান। যে সময়ের কথা বলছি, সাইন্সল্যাবের ওই গলিটা তখন আজকের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। গলির সম্মুখে দাঁড়ালে এত এত গাড়ির হর্ন শোনা যেত না, এর বদলে ভেসে আসতো নানা ধরনের বিদেশি সংগীতের সুর। কখনো ডিলান, কখনো এয়ার সাপ্লাই, কখনো বাজতো বিটলস। এসব গানের উৎস ধরে সামনে এগুলে দেখতে পাওয়া যেত এমন কয়েকটি দোকান, যেগুলো সেসময়কার সংগীত প্রেমিদের কাছে ছিলো স্বর্গরাজ্য!
বলছিলাম এলিফ্যান্ট রোডে কফি হাউজ গলির সেই তিনটি বিখ্যাত দোকানের কথা, শুরুর দিকে যাদের দোকানেই পাওয়া যেত বিদেশি গানের সিডি-ক্যাসেট। রিদম, সুর বিচিত্রা আর রেইনবো। সে সময়ের স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের প্রিয় জায়গা ছিলো এ তিনটি দোকান। সুর বিচিত্রা ও রিদম নামের দোকান দুটি আর নেই। তবে এখনও কফি হাইজ গলিতে ঢুকলে খুঁজে পাওয়া যায় 'রেইনবো'কে।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_143107.jpg)
'রেইনবো'র প্রতিষ্ঠা দুই সংগীতপ্রেমীর হাত ধরে। একজনের নাম আব্দুল কাদের মুরাদ, অন্যজন হুমায়ুন কবীর। এই শেষের জনই একসময় হয়ে উঠেছিলেন একটি গোটা প্রজন্মের প্রিয় কবীর ভাই। তারা দুজনই ছিলেন পশ্চিমা সংগীতের অনুরাগী। নিজেদের মতো শ্রোতাদের কথা ভেবেই মুরাদ পশ্চিমা শিল্পীদের গানের একটি সংগ্রহ গড়ে তুলতে চাইছিলেন। এই ভাবনা থেকে ১৯৮১ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করে রেইনবো।
'রেইনবো'র শুরুটা হয়েছিলো এলপি (লংপ্লে) থেকে গান কপি করার মধ্যে দিয়ে। সেসময় এলপি'র দাম এত বেশি ছিলো যে সাধারণ শ্রোতাদের অনেকেই তা কিনতে পারতেন না। প্রথমে ক্যাসেটে কপি করা হলেও নব্বই দশকে চলে আসে সিডি। সিডির কপিগুলো ক্যাসেটের তুলনায় একটু ভালো মানের হতো। তবে অরিজিনাল সিডিও বিক্রি করতো রেইনবো।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_134412.jpg)
আশির দশকে একটি প্রজন্ম পশ্চিমা সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকগুলো দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছিলো। রেইনবো সে প্রজন্মের চাহিদা বুঝে বিদেশি গানের এলপি নিয়ে আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক, পপ, রক, কান্ট্রি, জ্যাজ, ব্লুজ, হার্ড রক, কী ছিলো না তাদের সংগ্রহে? তবে সেসময় যাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিলো দোকানটিতে, তাদের কাছে গানের মতই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো একজন মানুষ। কবীর ভাই।
হুমায়ুন কবীরের সংগীতজ্ঞান ছিলো অগাধ। শ্রোতাদের সংগীত বিষয় যে কোন প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত থাকতো তার কাছে। এখনকার মতো ইন্টারনেট, গুগল না থাকলেও ছিলেন কবীর ভাই। কোন ব্যান্ডের অ্যালবাম রিলিজ হচ্ছে, কে কোন ব্যান্ডে বাজায়, কোন ব্যান্ড ভেঙ্গে গেলো, সব তথ্যই পাওয়া যেত তার কাছে। ক্রেতারা অ্যালবাম কপি করাতে দিলে সবগুলো গান দেওয়ার পর যদি ক্যাসেটে ফাঁকা জায়গা থাকতে, তাতে নিজের পছন্দমতো গান দিয়ে দিতেন কবীর। আর সেটা ছিলো রেইনবোর ক্রেতাদের জন্য একটি বাড়তি পাওয়া। তবে অনেকের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো তার বেশভূষা। তার স্টাইল ছিলো অনেকটা ৬০ এর দশকের হিপ্পিদের মতো। ছিপছিপে গড়নের দেহে পিঠ অবধি দীর্ঘ চুল, দাড়িও রাখতেন লম্বা করে। কথা বলতেন প্রমিত বাংলায়।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_141016.jpg)
রাসেল হক নামে একজন 'রেইনবো' ভক্ত ফেসবুকে লিখেছেন, "ক্লাস টু তে পড়ি, সাথে সুর বিচিত্রা, রিদমের কথাও জানতে পারি।প্রথম রেইনবোতে যাই যতদূর মনে পড়ে ১৯৮৮ সালে। কবির ভাইকে প্ৰথম দেখেই প্রচণ্ড রকমের প্রভাবিত হয়েছিলাম। চুল, দাড়ি, বেশভূষা, কথা বলার স্টাইল, ব্যাক্তিত্ব - সবমিলিয়ে অন্যকে প্রভাবিত করার মতোই মানুষ তিনি। উনি নিজে বোধহয় জিম মরিসন আর রনি জেইমস ডিও দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, অন্তত আমার তাই মনে হতো।"
হুমায়ুন কবীর এখন প্রবাসী। কফি হাউজের গলিতে 'রেইনবো' অবশ্য আছে। দোকানটি এখন সামলান মোখলেসুর রহমান মুকুল। তিনি ১৯৯৪ সালে যুক্ত হয়েছিলেন 'রেইনবো'র সাথে। তখন তার কাজ ছিলো রেকর্ড করা সিডির পেছনে গানের তালিকা লিখে দেওয়া। এখন একাই সামলান সব। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে খুলে দিলেন গল্পের ডালি।
"২০০১ সালে কবির ভাই চলে যাওয়ার পর এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে মিলে আমি দায়িত্ব নিই। পাঁচ সালের (২০০৫) দিকে সেও চলে গেলে আমিই দেখাশোনা করি এখন। ঢাকা শহরে বিদেশি গানের সিডি এখন আর কেউ বিক্রি করে না, একমাত্র আমিই টিকে আছি।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230826_161438.jpg)
একটা সময় ছিলো, যখন 'রেইনবো'তে এত বেশি ভীড় লেগে থাকতো যে ক্যাসেট অর্ডার দিলে এক থেকে দুই মাস সময় লাগতো হাতে পেতে! এখনও অরিজিনাল সিডি থেকে গান কপি করে দেন মুকুল। তবে আগের এত সময় লাগে না। সিডি প্রতি খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। পাশাপাশি অরিজিনাল সিডিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে। সেগুলোর দাম একটু বেশি, আটশো থেকে হাজার। লেড জেপলিন, পিংক ফ্লয়েডে, জুডাস প্রিস্ট, পেট শপ বয়েজ থেক শুরু করে বিটলস, ডিলান; আগেও যেমন পাওয়া যেত, এখনও যায়। তবে ভাটা পড়েছে ক্রেতাদের আগ্রহে।
বর্তমানে দোকানের ক্রেতা কারা? জিজ্ঞেস করাতে মুকুল জানালেন, আগের সে সোনালী যুগে যেসব শ্রোতা ছিলেন, তারাই মূলত এখনকার ক্রেতা। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের অনেক তারকার প্রিয় স্থান ছিলো এই রেইনবো। আইয়ুব বাচ্চু, জেমস থেকে শুরু করে গিটারিস্ট ইব্রাহিম আহমেদ কমল, অনেকেই দিনের বড় একটি অংশ কাটাতেন এই দোকানটিতে। রেইনবো ছিলো সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা তরুণদের প্রিয় জায়গা। স্কুল কলেজ শেষ করে এখানে একবার ঘুরে না গেলে অনেকেই শান্তি পেতেন না। তবে এখন নতুন প্রজন্মের কাউকে এখন খুব একটা ঢুঁ মারতে দেখা যায় না। অনেকে হয়তো দোকানটির অস্তিত্ব আছে, এটাই জানেন না।
তাহলে ব্যবসা কেমন চলছে? "লাভ কিছু তো হয়ই, নইলে তো দোকান বন্ধ করে দিতে হতো। সবচেয়ে সৌভাগ্য হলো, আমাদের কিছু শুভাকাঙ্খী আছেন, তাদের সকলের সহযোগিতায় মোটমুটিভাবে চলে যাচ্ছে। তারাই বারবার আসেন, কেনেন, সংগ্রহ করেন। এভাবেই বেশ চলছে।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230826_163456.jpg)
বাটা সিগনাল থেকে এগিয়ে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের বিপরীত দিকের গলিতে ঢুকে কফি হাউজের আসেপাশে খুঁজলেই আপনি পেয়ে যাবেন 'রেইনবো'র দেখা। বিএস ভবনের নিচতলায় অবস্থিত এ দোকানটি আগের তুলনায় কমেছে আয়তনে। তবে এখনও প্রায় হাজার দশেক অরিজিনাল সিডি এবং এলপির সংগ্রহ আছে তাদের। আগের মতই দোকানের গায়ে লেখা আছে তাদের সেই বিখ্যাত স্লোগান- 'Where Music Never Stops.'
শাহবাগে সিডি-ক্যাসেট বিক্রির শেষ প্রতিনিধি যারা
আজিজ মার্কেট যখন পুরোপুরি পোশাকের দোকানে ভরে যায়নি, এটা ছিল তখন শিল্প-সাহিত্যিকদের নিখাঁদ আড্ডাখানা। এমনও হয়েছে, আজিজের অলিতে-গলিতে একবার ঘুরলেই খুঁজে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকজন লেখক কিংবা প্রকাশককে। বইয়ের দোকান ছিল মার্কেটের প্রতিটি তলায়। বইয়ের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের অনুসঙ্গ হিসেবে ছিল একাধিক সিডি ও ক্যাসেট বিক্রির দোকান। এখন বইয়ের দোকানই যেখানে হাতেগোনা, সিডির দোকান তখন নেই বললেই চলে। তবে সেযব দোকানের সর্বশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দুটি মাত্র দোকান এখনও অন্যান্য পণ্যের পাশে তাদের শেলফে স্থান দিয়েছে কিছু সিডি-ক্যাসেট এবং লংপ্লে রেকর্ডকে!
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_130140.jpg)
এমনই একটি দোকানের নাম 'সুরের মেলা'। শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৯৭ সালে। দোকানের মালিক রিয়াজ মাহমুদ ছিলেন গান পাগল মানুষ। সারাক্ষণ মেতে থাকতেন সংগীত নিয়ে। যেখানেই যেতেন, তার প্রিয় কাজ ছিল গানের ক্যাসেট এবং সিডি সংগ্রহ। ২০১২ সালে তার আকস্মিক মৃত্যুর পর এখন দোকানটি সামলাচ্ছেন বোন শামিমা জেসমিন। দুজন কর্মচারীসহ তিনিই দেখভাল করেন সব।
দোকানটি যখন শুরু করেন, তখন এলপি'র যুগ শেষ। শুরুতে তারা সিডি-ক্যাসেট বিক্রি করতেন। দেশি-বিদেশি নানা ধরনের গানের সংগ্রহ তাদের ছিল। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পেতো ধ্রুপদী (ক্লাসিক্যাল) সংগীত। একটি প্রযোজনাও ছিলো তাদের। সেখানে দেশি শিল্পীদের গান রেকর্ড হতো।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_145108.jpg)
"আমাদের নিজস্ব প্রোডাকশনে সবচেয়ে গুরুত্ব পেতো ক্লাসিক্যাল এবং রবীন্দ্র সংগীত। সুরের মেলা কিন্তু অনেক পরিচিত ছিলো ক্লাসিক্যাল মিউজিকের জন্য। গানের আপডেটসহ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সমকালের মত পত্রিকায় প্রতি সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হতো," বলছিলেন শামিমা।
তা এখন সিডি-ক্যাসেট বিক্রির কী খবর? "২০১৫ পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই চাহিদা ছিলো। তারপর থেকেই আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। এখন তো মাসে দুই থেকে তিনজনের বেশি ক্রেতা আসেন না।" তাহলে এখনও কেন এই ক্যাসেট বিক্রির ব্যবসা? "এটা আমার এখনও চালিয়ে রেখেছি শুধুমাত্র আমার ভাইয়ের জন্য। ভাইয়ার একটা স্মৃতি। ও অনেক কষ্ট করে এটা গড়ে তুলেছিল। ক্যাসেটের পাশাপাশি আমরা স্টেশনারি পণ্য বিক্রি করি।"
আজিজ মার্কেটে অবস্থিত আরেকটি দোকানের নাম 'সুর কল্লোল'। সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ হাশেম এখনও দোকানের একপাশে রেখে দিয়েছেন কিছু সিডি এবং লংপ্লে। পণ্য আছে, কিন্তু বিক্রি নেই বলে জানালেন তিনি। 'কখনো কেউ আসলে সংগ্রহের জন্য দু'একটি নেয়। দুই একজন চাইলে দেই, বিক্রি হয়। এর বেশি কিছু না।'
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_145416.jpg)
এ মার্কেটের বিপরীত দিকে অবস্থিত 'পাঠক সমাবেশ'। মূলত বই বিক্রেতা হলেও এর এক কোণে এখনও আবিস্কার করা যায় কিছু সিডি-ডিভিডি। সিডিগুলোর মধ্যে নজরুল-রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ডিংই বেশি। কয়েকটি সিডি নাড়াচাড়া করতেই দেখা গেলো, কনক চাঁপার আধুনিক গানের পাশেই রয়েছে রথীন্দ্রনাথ রায়ের ভাওয়াউয়া গানের সিডি। এসব দেখে যে কোন সংগীতপ্রেমীরই লোভ হওয়ার কথা। কিন্তু এগুলো অনেকেই নাকি নেড়েচেড়েই রেখে দেন। অন্তত নিজের চোখে কখনো বিক্রি হতে দেখেন নি বলে জানালেন পাঠক সমাবেশের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ। "২০১৫ সালের দিকেও মাসে দুই একটা বিক্রি হতো। সিডিগুলো আমাদের কিনে রাখা। তাই একপাশে রেখে দেওয়া হয়েছে। কারো ভালো লাগলে আমাদের থেকে সংগ্রহ করতে পারে। আমাদের এখানে যে গানগুলো বাজে, আমরা কিন্তু ওই সিডিই ব্যবহার করি।"
গানের ক্যাসেট মানেই ছিল পাটুয়াটুলি
ষাটোর্ধ্ব আব্দুল জলিল এসেছেন পাটুয়াটুলির নুরুল হক মার্কেটের গীতিকা রেকর্ডিং সেন্টারে। হাতে একটি পুরনো ক্যাসেট। জানালেন, হিন্দি গানের এই ক্যাসেটটি চলতে চলতে হঠাৎ ছিঁড়ে গেছে। এখন ঠিক করাতে চান। দোকানের মালিক সন্তোষ কুমার রায় ক্যাসেটটি হাতে নিয়ে দেখলেন। তার মতে ক্যাসেটটি খুলতে হলে ভাঙতে হবে, এবং তারপর ফিতাগুলো ভরে দিতে হবে অন্য কোন ক্যাসেট, এছাড়া উপায় নেই। অগত্যা তাতেই রাজি হতে হলো আব্দুল জলিলকে। বললেন,"একশো টাকা জরিমানা গুণতে হবে এখন!"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230825_143247.jpg)
আপনি যদি সিডি বা ক্যাসেটে গান শোনা প্রজন্মের কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চই পাটুয়াটুলির নাম শুনে থাকবেন। একটা সময় এখানে সিডি ক্যাসেটের ব্যবসা এতই রমরমা ছিলো যে, পাটুয়াটুলি আর গান রেকর্ডিং হয়ে যায় একে অন্যের সমার্থক। নতুন থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, পালাগান থেকে ওয়াজ, সব কিছুর রেকর্ডিং হতো এখানে। আর পাওয়া যেত দেশ বিদেশের অগণিত গানের ক্যাসেট।
নুরুল হক মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এখনও বেশ কিছু দোকানে বিক্রি হয় গানের ক্যাসেট। আব্দুল হামিদ ২০০০ সালে শুরু করেন এ ব্যবসা। তখন ভারতীয় হিন্দি ও বাংলা গানের ক্যাসেট বিক্রি করতেন মুড়িমুড়কির কতো। "লতা, সন্ধ্যা, হেমন্ত, কুমার সানু, সতীনাথ, মান্না দে, কী বিক্রি করিনি? বাংলাদেশের ছায়াছবির গান, আব্দুল জব্বার, আব্দুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লা, সাবিনা- সব ছিলো আমাদের কালেকশনে। এখনও কেউ চাইলে আমাদের কাছ থেকে সিডি করিয়ে নিতে পারবে।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2023/08/31/20230826_163632.jpg)
এখন আর আগের মতো গানের সিডি বিক্রি হয় না। তবে রেকর্ডিং করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা ধরে রেখেছেন তারা। হামিদ রেকর্ডিং সেন্টারে এখন ওয়াজ, নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের মাইকিং, পালাগান রেকর্ড করা হয়। এছাড়াও তার দোকানের অন্যতম কাজ পুরনো ক্যাসেট, ভিসিআর, ডিভিডি থেকে আধুনিক মেমোরি কার্ডে রেকর্ডিং ও ভিডিও ট্রান্সফার করা। এ কাজে নিয়ে থাকেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। জানালেন, মার্কেটের সবাই প্রায় এসব করেই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ গানের সিডি বা ক্যাসেট আর তেমন বিক্রি হয় না। পুরাতন দিনের কিছু শ্রোতাই শুধু আসেন। তবে কেউ যদি পুরাতন কোন গানের জন্য যান- যেগুলো হয়তো পাওয়া যায় না অনলাইন কোন প্লাটফর্মে- তবে তারা সেগুলো দিতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সংগীতের সেই আবেগময় দিনগুলো অনুভব করা কঠিন। কিন্তু তার কিছুটা হলেও আঁচ পাওয়া যায় এসব দোকানে গেলে। অতীতের সেসব রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা জানতে হলেও গন্তব্য হওয়ার উচিত এসব সিডি-ক্যাসেটের দোকান।