শহরে এক ভিন্নধর্মী স্টাডি ক্যাফে!
আপনাকে যদি এমন একটি ক্যাফের কথা বলি, যেখানে চারপাশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শতশত বই, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে আপনার জন্য প্রস্তুত আছে আরামদায়ক চেয়ার-টেবিল, আর আপনি যতক্ষণ ইচ্ছে পড়তে পারছেন! শুধু তাই নয়, এমন এক ক্যাফে যেখানে কোন খাবার অর্ডার না করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকলেও কেউ আপনাকে উঠে যেতে বলছে না। এমন নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলে যাত্রা শুরু করেছে নতুন এক স্টার্টআপ- নাম 'ভাইভ স্টাডি ক্যাফে'। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মানুষের আকর্ষণ কেড়েছে ক্যাফেটি। তরুণ এক উদ্যোক্তার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এবং কয়েকজন স্বপ্নবাজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর নিরলস পরিশ্রমের ফল এ ক্যাফে।
যেভাবে শুরু…
হাতিরঝিল নির্ঝর ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে মহানগর প্রজেক্টের দুই নম্বর গেটের দিকে তাকালে যে কারো চোখে পড়বে একটি ঝলমলে হেডিং, যার ওপর আঁকা একটি ধোয়া ওঠা কফির কাপ, নিচে ইংরেজিতে লেখা- 'ভাইভ'। ক্যাফেতে গেলে যে কারো মনে হবে- ভুল করে কোন লাইব্রেরিতে চলে এলাম না তো?
কাচের গেট ঠেলে 'ভাইভ' এ ঢুকতেই চারপাশ থেকে থেকে স্বাগত জানায় বই। ঢোকার মুখে এক পাশের দেয়ালে কাঠের বুক শেলফ, এখানে কিছু বই সাজিয়ে রখা হয়েছে সারি সারি করে। এই গ্রন্থগুলোর সঙ্গ দিচ্ছে আবার কয়েকটি মানিপ্লান্ট লতা। ঠিক এর অন্যপাশের দেয়ালে বইয়ের পৃষ্ঠা সেঁটে তার ওপর আঁকা হয়েছে একটি ধোয়া ওঠা কফির মগ। এসব ফেলে সামনে এগুলোর একপাশে দুটি ছোট টেবিল, কফি তৈরির সরঞ্জাম চোখে পড়ে।
অন্যদিকটায় বড় একটি টেবিলের পাশ ঘেঁষে রাখা একটি বইয়ের তাক। টেবিলের ওপরেও বইয়ের স্তুপ। এক পাশের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে একটি হোয়াইট বোর্ড। এসব দেখে বিভ্রান্ত হবেন যে কেউ; এটি কি লাইব্রেরি নাকি কোন ক্যাফে? ভাইভ আসলে দুটোই! এটি এমন এক ক্যাফে যেখানে খাবার বিক্রির চেয়ে গুরুত্ব পায় পাঠকের জন্য পড়াশোনার মনোরম একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা।
'ভাইভ' এর প্রতিষ্ঠাতা মাহিদুল আলম পড়াশোনা করছেন আবুধাবির নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটিই তার প্রথম উদ্যোগ নয়। এর আগে অ্যাপস ভিত্তিক ইংরেজি শেখার প্লাটফর্ম 'এডভাইভ' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি, যা মূলত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমন সব এডুকেশনাল সফটওয়্যার বানায়। সেই কার্যক্রমেরই অংশ হিসেবে এবার আত্মপ্রকাশ করেছে স্টাডি ক্যাফে 'ভাইভ'।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাসপিয়া আফরোজ মৃদুলা দীর্ঘদিন হলো কাজ করছেন 'ভাইভ' এ চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে। তিনি জানালেন, 'এডভাইভ' এর অনলাইন ও এপস ভিত্তিক কাজ করতে গিয়ে তাদের মনে হয়েছিলো, মানুষ তাদের কার্যক্রম অফলাইনেও দেখতে চায়।
"মানুষ ফিজিক্যাল লার্নিং বা ফিজিক্যাল ডেমো চায়, আমাদের সাথে কানেক্ট করতে চায়। তখনই আমরা চিন্তা করলাম এমন একটি ফিজিক্যাল ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার আমরা করবো, যাতে করে মানুষজন আমাদের যাথে যোগাযোগ করতে পারে, কথা বলতে পারে। সেখান থেকেই এই স্টাডি ক্যাফের আইডিয়া আসে।" আর এভাবেই এ বছরের আগস্টে চালু হয় 'ভাইভ' এর যাত্রা।
যেসব সুবিধা রয়েছে এই ক্যাফেতে
স্টাডি ক্যাফে ধারণাটি পৃথিবীর অনেক দেশেই জনপ্রিয়। মহিদুল আলম যখন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলেন, তখন এমন অনেক রেস্টুরেন্ট দেখেছেন, যেখানে মানুষ খাবারের পাশাপাশি তাদের পড়াশোনার জন্য সময় কাটায়। সেই জায়গা থেকেই স্টাডি ক্যাফের ধারণাটি নেন তিনি। এছাড়া কোরিয়ান চলচ্চিত্রে দেখানো ক্যাফেগুলোও তার অনুপ্রেরণা ছিলো।
তার প্রতিষ্ঠিত ভাইভ ক্যাফের যেদিকেই চোখ যায়, বইয়ের সমাহার সবখানে। শেলফে সাজানো আছে দেশি-বিদেশি লেখকদের জনপ্রিয় সব গ্রন্থ। সুনীলের 'পূর্বপশ্চিম' থেকে থেকে শুরু করে এলিফ সাফাকের 'ফর্টি রুলস অফ লাভ', কী নেই? প্রায় তিন শতাধিক বই নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও মৃদুলা জানালেন, সামনে আরও বাড়বে বইয়ের পরিমাণ। যে কেউ ইচ্ছে করলে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে বই পড়ে।
ভাইভের অন্য আরেকটি কক্ষকে নাম দেয়া হয়েছে 'সাইলেন্ট জোন'। এখানে তিনটি টেবিল রাখা হয়েছে। নিবিড়ভাবে যারা পড়তে চান, কিংবা কোন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে চান- তাদের জন্যই এ কক্ষ। এখানকার চেয়ারগুলো সাধারণ কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা ক্যাফের মত নয়। ব্যক্তিগত পড়ার টেবিলে মানুষ যে মানের চেয়ার ব্যবহার করে, এখানেও ঠিক তাই। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অফিসের যে কোন কাজ অ্যাসাইনমেন্ট অনায়াসে শেষ করে ফেলা যায় এখানে বসেই।
এখানে রয়েছে উচ্চগতির ইন্টারনেট। আর শুধু তাই নয়, পড়াশোনার মাঝে যদি কোন ডকুমেন্ট প্রিন্ট করানোর প্রয়োজন হয়, তবুও উঠে যেতে হবে না বাইরে। ভাইব ক্যাফেতেই রয়েছে উন্নতমানের প্রিন্টার।
কেউ কোন খাবার অর্ডার না করেও পেতে পারে এসব সুবিধা। অফিস কিংবা ক্লাসের যে কোন মিটিং করতে চান? নিঃসঙ্কোচে চলে আসতে বলছে ভাইভে। তার জন্য নেই কোন আগাম রেজিস্ট্রেশনের বালাই।
কাসপিয়া আফরোজ মৃদুলা জালাচ্ছিলেন তাদের এসকল সুযোগ সুবিধার কথা। "বাংলাদেশের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টে গেলেই শোনা যায় বলিউডের গান, বা নানা রকমের আওয়াজ। ওখানে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিলো এমন একটি জায়গা বানানো, যেখানে মানুষ নিজের মতো করে পড়াশোনা করতে পারবে, পিনপতন নীরবতা থাকবে, গ্রুপ স্টাডি করতে পারবে। সব চেয়ে বড় জিনিস, নিজের বাসার একটা ফিল পাবে। আপনি যদি আশেপাশে দেখেন, যে চেয়ারগুলো দেখবেন, এগুলো কিন্তু সাধারণ ক্যাফেগুলোতে থাকে না। আমাদের সাইলেন্ট জোনে ফোকাস স্টাডি করার পরিবেশ আমরা তৈরি করেছি।"
ভাইভের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মুহিদুল আলমের কণ্ঠেও একই কথা শোনা গেলো। "আমাদের ফোকাস সময়ই একটা ছিল- মানুষজন আসবে, শিক্ষার্থীরা আসবে। (আমাদের) কথা হলো, আসুন, পড়ুন, কফি খেতে ইচ্ছে হলে খান, ইচ্ছে না হলে খাবেন না। কিন্তু একটা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠুক। হয়তো আস্তে আস্তে এটা ব্যবসা হয়ে উঠবে, কিন্তু এটা আপাতত আমাদের মেইন টার্গেট না।"
তবে যেহেতু এটি একটি ক্যাফে, এবং পড়াশোনা কিংবা কাজে ফাঁকে মানুষ খাবারের খোঁজ করবে, তাই সেদিকেও বেশ যত্নশীল 'ভাইভ'। এখানে পাওয়া যায় উন্নত মানের বেশ কয়েক ধরনের কফি। এগুলোর মধ্যে এসপ্রেসো ১৮০ এবং আমেরিকানো মিলবে ২০০ টাকায়। ক্যাপুচিনো রেগুলার ২৩০ এবং লার্জ পেতে খরচ করতে হবে ৩৩০ টাকা।
অন্যান্য পানীয়ের মধ্যে মিলো ও মিল্কসেক ২৫০, এপ্রিকট ও স্ট্রবেরি জুস ২২০ এবং ব্লুবেরি জুস পাওয়া যাবে ৩৮০ টাকায়। ডেজার্ট হিসেবে রয়েছে আইসক্রিম এবং ওয়াফেল, দাম ১২০ থেকে ২৫০ এর মধ্যে। এসব খাবারের বাইরে কেউ চাইলে 'এডভাইভ' সফটওয়্যারের পরিষেবাও কিনতে পারবে। এছাড়া এখানে রাখা বইগুলোর কোন একটি ভালো লাগলে অনায়াসে কিনে নেওয়া যাবে সেটি।
যে কারণে বিনামূল্যে এত কিছু
ঢাকার মতো জায়গায়, যেখানে ফ্রি-তে মেলে না এক গ্লাস পানি, সেখানে 'ভাইভ' কেন অভ্যাগতদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এতকিছু দিচ্ছে? মৃদুলা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও এ ক্যাফেতে সামলাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব। তিনি জানালেন, এ প্রশ্ন তাদের প্রতিনিয়ত শুনতে হয়।
তার মতে, তিনি এবং তার মতো যারা এখানে কাজ করেন, তারা নিজেরা সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, তাই ভালো একটি পড়ার জায়গার অভাব সবসময় বোধ করতেন। শিক্ষার্থীরা এসে যাতে ফিরে না যায়, দীর্ঘসময় ধরে পড়াশোনা করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই তাদের এমন কার্যক্রম।
মহিদুল অবশ্য আরেকটি দিকও সামনে আনলেন। যতই অনেক সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হোক, তাদের মূল উদ্দেশ্য 'এডভাইভ' এর প্রডাক্টগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। আর সেজন্যই তাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। "আমাদের মেইন বা টার্গেট বা গোল হলো এডভাইভ এর এডুকেশন প্রডাক্টগুলোকে প্রমোট করা। এটাকে আমরা ক্যাফে বা খাবারের দোকান হিসেবে চিন্তা করছি না, আমরা এটাকে ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার হিসেবে দেখছি।"
কর্মীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
'প্রমোটিং স্টুডেন্টস, বাই স্টুডেন্টস, ফর স্টুডেন্টস', ভাইভে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ করা নিয়ে এভাবেই বলছিলেন মহিদুল আলম। ক্যাফেটি যারা প্রতিষ্ঠা করেছে তারাও শিক্ষার্থী, যারা কাজ করে তারা শিক্ষার্থী, এবং এখানে মূলত শিক্ষার্থীরাই আসবে।
ভাইভ ক্যাফের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে যারা কাজ করছে প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। কর্মী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে মহিদুল জানালেন, শিক্ষার্থীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। "আপনি যদি ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোর কথা চিন্তা করেন, স্টুডেন্টদের জন্য চাকরির প্রচুর সুযোগ। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা কিন্তু এরকম কাজ করে না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে মানুষের ব্যবহার ভালো না। আমাদের জায়গা থেকে আমরা যেটা ধরে রাখতে পেরেছি, তা হলো আমরা শিক্ষার্থীদের প্রমোট করার চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নর্থ সাউথ, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী আছে আমাদের কর্মী হিসেবে।"
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র মুনতাসীর মাহমুদ। শুরু থেকেই খণ্ডকালীন কর্মী হিসেবে কাজ করছেন 'ভাইভ' এ। খাবার সার্ভ থেকে পেমেন্ট গ্রহন, অনেক কাজই করতে হয় তাকে। তবে এখানকার কাজ উপভোগ করছেন বলেই জানালেন তিনি। "এখনকার পরিবেশটা ভালো। আমারও অভিজ্ঞতা নেওয়ার ইচ্ছা ছিলো একটা স্টার্টআপ কীভাবে চলে। এখানে কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি।"
মানুষের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস
ঢাকায় মানুষের অবসর যাপনের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হাতিরঝিল। তবে মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে মূলত সন্ধ্যার পর। 'ভাইভ' এর ক্ষেত্রেও তাই। একমাসও হয়নি কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবুও সন্ধ্যার পর এখানে বেশ ভীড় লেগে যায়। ভাইভ নিয়ে আগত মানুষের উচ্ছ্বাসও চোখে পড়ার মতো। সকলেই স্বীকার করছেন, এমন উদ্যোগ কোথাও দেখেন নি।
ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিয়া আক্তার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিজেদের পরবর্তী ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি নিয়ে কথা বলতে এমন একটি স্থান খুঁজছিলেন, যেখানে আরামদায়ক পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে পারবেন। তখনই তাদের একজন প্রস্তাব করেন ভাইভ ক্যাফের নাম। এখানে এসে নাজিয়া এতই উচ্ছ্বসিত যে, দেড় ঘণ্টার ওপরে অপেক্ষা করতে হলেও তার একটুও বিরক্ত লাগে নি! এই সময়টুকুতে তিনি একটি বইয়ের অর্ধেক অংশ পড়ে ফেলেছেন। সময় কীভাবে কেটেছে বুঝতেই পারেন নি তিনি। "এটা এমন একটা ক্যাফে, যেখানে লেট করালেও রাগ হবে না। আমার তো এখন বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না!"
সাইলেন্ট জোনে বসে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাপ করছিলেন তিন বন্ধু। তাদের একজন মারুফ হাসান। শিক্ষকতা করেন রাজধানীর একটি স্কুলে। অন্যান্য দিনের মত হাতিরঝিলে অবসর যাপনে এসেছিলেন এবং আগে থেকে না জেনে, সাধারণ কোন ক্যাফে ভেবে ঢুকে পড়েছেন ভাইভ স্টাডি ক্যাফেতে।
কাছে গিয়ে এই ক্যাফে সম্পর্কে জানতে চাইলে বেশ প্রসংশা করলেন তারা। "এখানে এসে যে ম্যানেজমেন্ট দেখলাম, আগে কখনো দেখি নি। এখানে কেউ চাইলে পড়তে পারছে, খাবার খেতে পারছে, কাজ থাকতে করতে পারছে, এমন অন্য কোথাও হতো না। অন্যসব রেস্টুরেন্টে তো নিজের কাছেই কেমন যেন লাগে। এই কনসেপ্টটা আমার দারুণ লেগেছে।"
সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত কাজ করেন মুনতাসীর। এ সময়টায় বেশ ভিড় সামলাতে হয় তাকে। এখন পর্যন্ত নিজেদের আশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন বলে জানালেন তিনি। অনেক বেশি মার্কেটিং না করেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে 'ভাইভ', এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ভাইভ ছড়িয়ে দিতে চান গ্রামগঞ্জে
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজনেস কম্পিটিশনে দেশের প্রথম স্টাডি ক্যাফে হিসেবে কেস স্টাডি করা হয়েছে 'ভাইভ'কে নিয়ে। এই বিষয়টিকে বিশেষ কিছু হিসেবে দেখছেন মহিদুল আলম। "আমরা কার্যক্রম শুরু করার ১৮ দিনের মধ্যে একটা কেস স্টাডিতে যাই! প্রচুর শিক্ষার্থী এটার মাধ্যমে আমাদের সাথে কানেক্টেড হয়েছে।"
তিনি এটাও মানেন, দেশের বাজারে নতুন কিছু টিকে থাকা সহজ হবে না। এজন্য প্রয়োজন নানা ধরনের সরকারি-বেসরকারি সহায়তা। "আমরা প্রথম চালু করেছি জিনিসটা। এই মডেল বাংলাদেশে টেস্টেড না। একসময় ঢাকায় সাইবার ক্যাফের অভাব ছিলো না। কারণ মানুষের বাসায় পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ছিলো না। এখন যেমন ঢাকায় সুস্থ পরিবেশ নাই। আমরা চাই এমন ক্যাফে প্রত্যেকটা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পরুক।"
আগের দিনের সাইবার ক্যাফের আদলে প্রত্যেকটা গ্রামে গঞ্জে ছোট পরিসরে হলেও ভাইভকে ছড়িয়ে দেওয়াই হবে সমাপনী কাজ। তবে এর জন্য অনেক ধরনের সহায়তা দরকার বলে জানালেন মহিদুল।
"আমরা চাইলে ৬৪ জেলায় ৬৪ লক্ষ বই দিতে পারবো না। আমরা এডভাইভে যে এআই মডেল তৈরি করছি, যেখানে একজন মানুষ কথা বলতে পারে, তার স্পিকিং ইম্প্রুভ করতে পারে, সেই জিনিসটাকে আমরা ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই। অর্থাৎ ভাইভ যদি চৌষট্টিটা জেলায় থাকে, সব জায়গা থেকে আমাদের প্রডাক্টগুলো ইউজ করতে পারবে। এবং এর ফলে আমরা কাঙ্খিত স্টাডি এনভায়রনমেন্ট তৈরি করতে পারবো।"