মহেশখালীর পান কেন বিখ্যাত!
'যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম, যদি নতুন একখান মুখ পাইতাম, মইশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম'- শেফালী ঘোষের গাওয়া এ গানের মতোই জনপ্রিয় মহেশখালীর পান। খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে পান এই উপমহাদেশে প্রায় সবার কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। তাদের কাছে পানের আবেদন যেন চিরদিনের। বিয়ে-বাড়িতে, বাসায় মেহমানদারিতে, আড্ডায়, ধর্মীয় উৎসবে পান একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আলাদাভাবে। পান ছাড়া আচার-অনুষ্ঠান যেন অসম্পূর্ণ। আবার, সনাতন ধর্মের লোককথা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ পান খেতে পছন্দ করতেন বলে পানপাতাকে শুভ বা কল্যাণকর এবং পবিত্র বলে মানা হয়। তাই তো পুজো-পার্বণেও দেখে মেলে পানের বিশাল সমাহার।
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসেও দেখা মেলে পানের জনপ্রিয়তার চিত্র। এই উপমহাদেশে ভ্রমণ করতে আসা অনেক পর্যটকের লেখায়ও উঠে এসেছে পানের কথা। আগেকার দিনে রাজা বাদশাদের খাবারের তালিকায় পান ছিল অন্যতম রাজকীয় খাবার। ভারতবর্ষের রাজা -বাদশাদের অন্দরমহলে পান খাওয়ার প্রচলন ছিলো বলেও জানা যায়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূরজাহান অন্দরমহলের নারীদের কাছে পান খাওয়া জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। শুধু রাজা-বাদশাহের দরবারে নয়, পানের গুণগান গাওয়া হয়েছে মধ্যযুগের অনেক কবি-সাহিত্যিকের লেখায়। আগেকার দিনে পান রাজা-বাদশাদের রাজকীয় খাবার থাকলেও, পান খাওয়ার প্রচলন এখন রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেই।
৪৮ বছর বয়সী মহেশখালীর অধিবাসী নূর মোহাম্মদ দীর্ঘ সময় ধরে যত্নের সাথে করে যাচ্ছেন পান চাষ। পান চাষেই মিশে আছে তার সমস্ত ভালোলাগা এবং দেনা-পাওনা। পান চাষ এবং পানের যত্নে পার করেছেন জীবনের ৩৭টি বছর। খুব ছোট থাকতে এই কাজে নিজেকে সংযুক্ত করেন তিনি। তাই এই কাজে খুঁজে পান অন্যরকম শান্তি। শুধু নূর মোহাম্মদই নন, মহেশখালীর প্রায় সব মানুষেরই প্রধান পেশা পান চাষ। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে কেউ না কেউ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পান চাষে যুক্ত। অতি যত্নের সাথে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্পর্শকাতর এটি উৎপাদন করা হয়।
পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীর এই পান দেশ-বিদেশে পরিচিত 'মহেশখালীর মিষ্টি পান' নামে। তাই তো মহেশখালীর কথা আসতেই পানের দৃশ্যই যেন ভেসে উঠে সবার সামনে।
মিষ্টি স্বাদের অনন্য পান
নিয়মিত পান না খেলেও শখের বশে পান খান নি, এমন মানুষের দেখা মেলা ভার! সেই পান যদি হয় মহেশখালীর মিষ্টি পান তবে তা যুক্ত করে অন্যরকম মাত্রা। মহেশখালীর সাথে পানের সম্পর্ক চিরদিনের। এই দুটি শব্দ যেন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালিতে মিষ্টি পানের জন্য প্রায় সবার কাছেই জ্ঞাত একটি নাম।
এই দ্বীপের আবহাওয়া, মাটি এবং পানি ইত্যাদি পান চাষের উপযোগী বলেই প্রতিবছর বিদেশে রপ্তানি হওয়া পানের একটি বড় অংশ মহেশখালী থেকেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রজাতির পান চাষ হলেও মহেশখালীর এই পান মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয় এর মিষ্টি স্বাদের কারণে। অনেকের মতে উপকূলীয় এলাকার মাটির গুণগত পার্থক্যের কারণেই এই পান মিষ্টি হয়ে থাকে।
চাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, "এখানের যে লবণাক্ত হাওয়া সেটাই এই পানকে মিষ্টি করে। এই পান ঝাঁঝালো না হওয়ার আরও একটি কারণ হলো এই পান অনেক পাতলা। খেলেই গালে সহজে মিশে যায়। তাছাড়া এখানের মাটিই এমন যে পানগুলো মিষ্টি হয় খেতে।"
পানের আকারে হয় দামের পরিবর্তন
এই পানের মিষ্টি স্বাদ ছাড়াও আকারের পরিবর্তনের সাথে ঘটে দামেরও পরিবর্তন। পান যত বড় দামও তত বেশি। ২৫ বছর ধরে পান চাষে যুক্ত ওসমান গণি বলেন, "পান বরজ থেকে তুলে আনার পর সেগুলোকে আমরা ৩ ভাগে ভাগ করে ফেলি। বড়, মাঝারী ছোট- এইভাবে ভাগ করে দাম নির্ধারণ করে থাকি। বড় পানের দাম বিরা পতি ৫০০ এর উপরে হয়ে থাকে।"
পান বিক্রি করা হয়ে থাকে বিরা হিসেবে। এক বিরায় পান থাকে ৮০টি। তবে চাষীরা এখানে পান বিক্রি করেন গণ্ডা হিসেবে। তারা ৫০ গণ্ডা পান যে দামে বিক্রি করেন ঢাকায় বা অন্যান্য জায়গায় সেই একই দামে বিক্রি করে ২০ গণ্ডা পান। অর্থাৎ যারা তাদের কাছ থেকে কিনে নেন পান তারা বাজারে সেসব পান বিক্রি করেন দ্বিগুণ লাভে।
৫০ গণ্ডা বড় পান বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকা, মাঝারী পানের দাম হয়ে থাকে ৩০০-৪০০ টাকা এবং ছোট পানের দাম হয়ে থাকে ১০০-১৫০ পর্যন্ত। ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। সাধারণত এক গণ্ডায় থাকে ৪টি পান। ৫০ গণ্ডা পানকে এক বিরা হিসেব করে চাষীরা পান বিক্রি করেন।
পান চাষ করেন যারা তারাই এই পান বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। ফলে কিছুটা হলেও ন্যায্য মূল্য পেয়ে থাকেন তারা। সপ্তাহে দুইবার পানের বাজার বসলে চাষিরা খুচরা এবং পাইকারি দুইভাবেই বিক্রি করেন পান। শীতকালে পানের উৎপাদন কম হয় বলে দাম বেশি থাকে আর গ্রীষ্মকালে পান বেশি হয় বলে দাম কম থাকে।
ক্ষেত নয়, পান হয় বরজে
এই এলাকার অধিবাসীরা পানের ক্ষেতকে সম্বোধন করেন পানের বরজ বলে। চাষী নূর মোহাম্মদের ভাষ্যমতে হয়তো বর (জমি) থেকে বরজ শব্দটি হয়তো চলে এসেছে। সাধারণত দুই ধরনের পানের বরজ হয়ে থাকে মহেশখালীতে। পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। সমতলে যে পানের চাষ হয় তাকে বলা হয় বিল বরজ অন্যদিকে পাহাড়ের উপরে যেসব পানের চাষ হয় তাকে বলা যায় পাহাড়ি বরজ। এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৫টি ইউনিয়নে পানের চাষ হয়ে থাকে সমানভাবে। বড় মহেশখালী, হোয়ানক, ছোট মহেশখালী, কালারমারছড়া, শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে শতাব্দী ধরে পান চাষ করে আসছেন স্থানীয় পান চাষিরা।
জমি ভেদে পান চাষের সময় নির্ধারণে লক্ষ্য করা যায় ভিন্নতা। চাষী ওসমান গণির তথ্যানুসারে, পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ কয়েক বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে সে সময় এসে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৯ মাসে। সমতল জমিতে পান চাষের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময়ও নির্ধারণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে অক্টোবর এর দিকে পান চাষ শুরু হলে মে বা জুনের দিকে পান পরিপক্ক হতে শুরু করে। অপরদিকে পাহাড়ি জমিতে যেকোনো সময়ে পান চাষ হয়ে থাকে। এই ক্ষেত্রে চাষীদের কম দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
চাষী ওসমান গণি বলেন, "সাধারণত পাহাড়ে যে পান চাষ করে থাকি সেগুলো ৩-৪ বছর পর্যন্ত থাকে। অন্যদিকে সমতল ভূমির পান বেশিদিন রাখা যায় না। এগুলো টিকে থাকে ৯ মাস পর্যন্ত। তবে পাহাড়ি জমির চেয়ে সমতলে পান চাষ করা একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সারাবছরই পান চাষ হলেও শীতকালে পানের চাষ কমে যায়। তখন চাহিদা অনুযায়ী পানের যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না।"
বরজ থেকে পান তোলা হয় যেভাবে
পান গাছ থেকে পান কখন, কীভাবে ছিঁড়তে হয় সেদিকেও বিশেষ নজর নিতে হয় চাষীদের। পান গাছ লাগানোর পর তা মাটির ভেতর থেকে বের হতে প্রয়োজন হয় ১ মাসেরও বেশি সময়। পান পরিপক্ক হয়ে বিক্রির উপযুক্ত হতে লাগে ৪ মাসেরও বেশি সময়। পান গাছ বড় হয়ে পানপাতায় ভরপুর হলেও একসাথে সব পান তুলে নেন না চাষীরা। পান গাছ থেকে তুলে নেওয়ার জন্য আছে বিশেষ নিয়ম। সেই নিয়ম অনুসরণ করেই চাষীরা পান বরজ থেকে তুলে নেন।
পান চাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, "পান যখন পরিপক্ক হয়ে উঠে তখন আমরা প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর গাছ থেকে পান তুলে নিই। একসাথে সব পান তুলে ফেলি না। একটা পান গাছ থেকে ২-৪ টা পান ছিঁড়ে নিই। যেখান থেকে পান ছিঁড়ে নিই সেখানে আবার ৮-১০ দিন পর নতুন পান হয়। এভাবে করে ১০ দিন পর আবার পান সংগ্রহ করি।"
প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর পান বিক্রি করে চাষিরা ৫-৬ হাজার টাকা আয় করেন যা বছরে লাখ ছাড়িয়ে যায়। পান চাষী নূর মোহাম্মদ তার ১৫ শতক জমিতে পান চাষ করে বছরে আয় করেন ৫-৭ লক্ষ টাকা। ১-২ লক্ষ টাকা পান চাষে তার ব্যয় হলেও বাকি টাকা তার লাভের অংশ বলে জানান তিনি।
পান চাষ-সংরক্ষণে পোহাতে হয় দ্বিগুণ দুর্ভোগ
চাষী ওসমান গণির ভাষ্যমতে পান চাষের মতো কষ্টের কাজ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পান খুবই স্পর্শকাতর এবং অতি যত্নের একটি ফসল। প্রতিদিন নিয়ম করে পানের বরজের খেয়াল রাখতে হয়। বেশি রোদে ক্ষতি হচ্ছে কিনা, বৃষ্টি আসার পুর্ব প্রস্তুতি, গাছে পোকার আক্রমণ হচ্ছে কিনা, কোনো গাছ (যেহেতু লতা জাতীয় উদ্ভিদ) হেলে পড়ছে কিনা এইসবে নজর রাখতে হয় সারাক্ষণ।
চাষী নূর মোহাম্মদ বলেন, "পান গাছে যথাযথ সময়ে সার বা বিষ প্রয়োগ না করলে গাছ বাঁকা হয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায় এবং পানপাতা বড় হয় না। অতি-বৃষ্টি আর অতি রোদ দুটো বিষয়ের জন্যও আলাদা করে ব্যবস্থা নিতে হয়। বৃষ্টির জন্য আমরা পানের উপরে পলিথিন দিই। বেশি বৃষ্টি হলে পলিথিনেও কাজ হয় না। ফসলের ক্ষতি হয়ে যায় অনেক লোকসান হয়ে যায়।"
কিন্তু এখানেই সমস্যার শেষ নয়। পান সংরক্ষণের জন্যও চাষীদের পোহাতে হয় নানারকম ভোগান্তি। পান বরজ থেকে আনার দুই দিনের মধ্যেই চাষিদের বিক্রি করে দিতে হয় সংরক্ষণে কষ্ট হয় বলে। সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিন এই পান অনেক যত্নে রাখা যায়। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা গেলে হয়তো অনেকদিন রাখা যেত, সাথে চাষিরা বিক্রি করতে পারতেন অধিক লাভে।
এই বিষয়ে মহেশখালী উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ নাসেরুল আলম বলেন, "পান কীভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখায় যায় তা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন চিন্তাভাবনা করছি। এই লক্ষ্য সামনে রেখে পরিবহন সিস্টেমে পরিবর্তনের প্রকল্পও হাতে নিয়েছি। পান দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়ায় সঠিক সংরক্ষণ করতে না পেরে চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। এই জিনিসটা যাতে কমে যায় সে লক্ষ্যে ফ্রিজিং গাড়ি করে পান কীভাবে বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া যায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করছি।"
চাহিদা বেশি, যোগান কম
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যে চাহিদা রয়েছে, তার যোগান দিতে পর্যাপ্ত পান এখন উৎপাদিত হচ্ছে না। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, পান চাষীদের অন্য ফসলের দিকে মনোনিবেশ করা এবং প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই কাজ আধুনিক শিক্ষিত সমাজের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে না পারা। এর ফলে আগের তুলনায় চাষীর সংখ্যাও কমে গিয়েছে এবং পানের উৎপাদনও কমে গিয়েছে।
রাজধানী ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি পান বিক্রেতা হাসান বলেন, "মহেশখালীর পান অন্যান্য এলাকার পানের তুলনায় ক্রেতারা পছন্দ করে বেশি। কিন্তু এই পান আমরা সারাবছর পাই না। রাজশাহীর পান সারাবছর ঢাকায় পাওয়া গেলেও, মহেশখালীর এই পান ঢাকায় পাওয়া যায় কেবল দুইমাস। এই পানের যে চাহিদা আছে সে অনুযায়ী পানের যোগান নাই বললেই চলে।"
তবে মাঝের কয়েক বছর উৎপাদন কম থাকলেও এই বছর উৎপাদন আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের উপ-কৃষি কর্মকর্তা সৌরভ হোসেন। তিনি বলেন, "বর্তমানে ১৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। হেক্টর প্রতি পানের উৎপাদন হয়ে থাকে ২০ টন। এই পান বিক্রি করে চাষীরা একর প্রতি আয় করেন ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উৎপাদন আগের চেয়ে বাড়লেও পানের একটা নির্দিষ্ট রোগের কারণে গাছগুলা মরে যায় আর উৎপাদন কমে যায়। এই রোগ দমন করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হলেও আমাদের তরফ থেকে যতটুক সাহায্য করা যায় তা করা হচ্ছে।"
কৃষিবিদ নাসেরুল আলমের মতে আগে মহেশখালীর পান নিয়মিত ইউরোপের কিছু দেশে রপ্তানি হলেও মাঝখানে বন্ধ হয়ে যায় পানে ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার কারণে। এরপর থেকে কৃষি অধিদপ্তর গ্রহণ করে নিরাপদ পান উৎপাদন কর্মসূচি। বেশ অনেক কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কীভাবে নিরাপদভাবে পান চাষ করা যায়।
ঢাকায় পানের জনপ্রিয়তা
রাজধানী ঢাকায় প্রায় সব এলাকার পান আসলেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে বলেই অনেক বিক্রেতার দাবি। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পান আসে রাজশাহী থেকে। রাজশাহীর এই পানের অন্যতম গুণ হলো তা মহেশখালীর পানের তুলনায় মোটা এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়। ফলে বাজারে সারাবছরই পাওয়া যায় এই পান।
মহেশখালীর পানের গুণাগুন নিয়ে বিক্রেতা মো. আসাদ বলেন, "এই পান বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না কারণ এই পান অন্যান্য পানের তুলনায় অনেক নরম; ফলে দ্রুত পচে যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই নরম হওয়ার গুণটি এই পানকে অন্য পানের তুলনায় আলাদা করে এবং খেতেও মিষ্টি হয়।"
কারওরান বাজারের পাইকারি পান বিক্রেতা সেলিম বলেন, "যে পরিমাণ চাহিদা এই পানের তার তুলনায় এই পানের সাপ্লাই অনেক কম। বরিশাল বা রাজশাহীর পানের মতো ঝাল হয় না বলে সবাই কিনতে চায় এ পান।"
অনন্য স্বাদের মহেশখালীর পানের চাহিদা দেশের সীমানা পেরিয়ে রপ্তানি হয় দেশের বাইরেও। বৈশ্বিকভাবে এই পানের প্রধান ক্রেতা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। তাছাড়া ইউরোপের কয়েকটি দেশেও রপ্তানি হয় এই পান। মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান ক্রেতা কুয়েত, সৌদি আরব, মালেশিয়া, দুবাই সহ আরও নানা দেশে এই পানের রয়েছে বিশাল চাহিদা।
এই নিয়ে মহেশখালী উপজেলার কৃষিবিদ নাসেরুল আলম বলেন, "আমাদের সিগনেচার প্রোডাক্ট হচ্ছে এই পান। এটার উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে যত ব্যবস্থা নেওয়া যায় আমরা নিচ্ছি। পান সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারাও বড় একটি বাধা।"
পানের আছে ভেষজ গুণ
শুধু খাবারের অনুষঙ্গ নয়, পানের রয়েছে বিভিন্ন ভেষজ গুণও। গবেষকদের মতে, হজম শক্তি বাড়াতে পানের কোনো বিকল্প নেই। তেমন আবার রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও খুব কার্যকরী। এমনকি পান পাতায় আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি প্রতিরোধ করে।
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস এর তথ্য অনুসারে, হজমে সাহায্য করার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর করা, সর্দি উপশম করা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, মাথা ব্যথা কমানো, গলা-দাঁতের ব্যথা দূর করা ইত্যাদি সব কাজ করে থাকে পান।
অনেকেই মনে করেন গুরুপাক বা ভারী খাবার খাওয়ার পর হজমের সমস্যা হয় বলেই হয়তো যে কোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের শেষে পান পরিবেশন করা হয়, যা খেলে ওসব খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়।
অর্থ উপার্জনই মুখ্য নয় বরং বাবা-দাদাদের পেশাকেই আপন করে কাজ করে চলেছেন এই অঞ্চলের চাষীরা। অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে যখন পানের অধিক উৎপাদন হয় সেদিন রাজ্য জয়ের খুশি ভর করে চাষীদের চোখে-মুখে।
কৃষিবিদ নাসেরুল আলম বলেন, "আমাদের সিগনেচার প্রোডাক্ট হচ্ছে এই পান। মহেশখালী নামে যে একটা জায়গা আছে তা অনেকেই পানের জন্য চেনে। এটার উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধিতে চাষীদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করলে হয়তো আরও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।"