যখন পাঙাশ মাছের কাঁটাই শেষ ভরসা
আপনি যদি কখনো যাত্রাবাড়ি গিয়ে থাকেন তাহলে এলাকাটির ঠিক মাঝখানে অবস্থিত মাছ বাজারের কথা আপনার হয়তো জানার কথা।
এই বাজারের কিছু দোকানিকে দেখা যাবে পাঙাশ মাছের কাঁটা বিক্রি করতে। কাঁটাসহ মাছের মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ থাকলেও মাছ বলতে তেমন কিছুই থাকে না এতে। ছোট এই টুকরোগুলোর প্রতিটির দাম পড়ে ২০–৩০ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে অনেক পরিবারের কাছে এখন এ কাঁটাই ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ মাছের দাম ১৫০ থেকে ২২০ টাকারও বেশি। অনেকেরই একটি মাছ পুরোটা কেনার সামর্থ্য থাকে না। তাদের জন্য এই ছেঁটে ফেলা মাছই একমাত্র অবলম্বন। ক্রেতারা যারা এই মাছের কাঁটা কেনেন, তারা সাধারণত মুড়িঘণ্ট রান্নায় এটি ব্যবহার করে থাকে। একসময়ের বনেদি এ খাবারটি এখন নিয়মিত হয়ে গিয়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের পাতে।
স্থানীয়দের মতে, মাছের বাজারের পাইকারি মাছ সরবারহকারী 'রাজীব ফিস সাপ্লাই' এই ব্যবসার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় এখানকান ব্যবসায়ীদের।
রেস্তোরাঁগুলোতে কাঁটাবিহীন পাঙাশ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে। এসব মাছের বেঁচে যাওয়া কাঁটাগুলোই চলে আসে এই বাজারে।
দুই সন্তানের মা ৩৭ বছর বয়সি জেসমিন মাছের কাঁটা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার গোটা মাছ কেনার সামর্থ্য নেই। তাই মাছের এই অবশিষ্ট কাঁটাই কিনি। অন্তত মাছের ঘ্রাণ আর একটু স্বাদ তো পাওয়া যায়।'
মাছের মাংসল অংশ কেটে নেওয়ার পর খুবই সামান্যই থেকে যায় কাঁটার গায়ে। এর সঙ্গে ডাল মিশিয়ে তৈরি করা পাঙাশ মাছের মুড়িঘণ্ট। অনেক সময় এটিই জেসমিনের পরিবারের একমাত্র প্রোটিনের উৎস। জেসমিনের মতো আরও অনেক পরিবারেরই এমন অবস্থা।
রাজীব ফিস সাপ্লাইয়ের এক দোকানির ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি প্রতিদিন প্রায় ৫০০টির বেশি মাছের কাঁটা বিক্রি করেন।
৫৯ বছর বয়সি রিকশাচালক ইদ্রিস দুর্মূল্যের এই বাজারে সম্পূর্ণ পাঙাশ মাছ খাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না। তাই নিরুপায় হয়ে পাঙাশ মাছের কাঁটা কিনতে তারও এই লাইনে দাঁড়ানো।
'ঘরের সবাই প্রতিদিন ডিম খেতে খেতে বিরক্ত। তাই সপ্তাহে দুইবার কেনা হয় এ কাঁটাগুলো,' বলছিলেন তিনি।
যাত্রাবাড়ি মাছ বাজারে কর্মরত মিঠু চৌধুরীও একই ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন।
'আলুর দাম ছিল ২০ টাকা কেজি; তার দাম এখন ৪০–৪৫ টাকা। কিছুদিন আগেও দাম ৬০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল কেজিতে। আমাদের মতো দিনমজুর মানুষের জন্য এই বাজার পরিস্থিতিতে টিকে থাকা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। কী খাব আমরা?' প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তবে আপাতত এটুকু পাঙাশেই সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া মিঠু চৌধুরীদের আর কিছু করার নেই।
ছবি: নাঈম আলী