ছবির গল্প: বালিয়া মসজিদ, এখনও চোখ জুড়ানো
ঠাকুরগাঁও জেলার ভুল্লী থানা হতে ৩.৭ কি.মি. পূর্বে ছোট বালিয়া গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী একটি মসজিদ; গ্রামের নামেই বালিয়া মসজিদ নামে পরিচিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনা।
জানা যায়, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মেহের বকসের পরিবারের আদি-নিবাস ছিল অবিভক্ত ভারতের বিহার রাজ্যে (তখন সুবে-বাংলার অন্তর্গত)। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর মেহের বকসের দাদা সপরিবারে বিহার থেকে জলপাইগুড়ি চলে আসেন।
পরবর্তীতে মেহের বকসের বাবা রাজ-এ-মোহাম্মদ ঠাকুরগাঁও মহকুমার বালিয়ায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সমৃদ্ধি অর্জন করেন, কেনেন জমিদারি।
মসজিদ নির্মাণের সন নিয়ে অবশ্য মতবিরোধ আছে। মসজিদের গায়ে খোদাই করা সন অনুসারে মসজিদটি নির্মিত হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে মানে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে। আবার মসজিদের নির্মাতা মেহের বকস চৌধুরীর কবরেও তার মৃত্যুর সন খোদাই করা আছে ১৩১৭ বঙ্গাব্দ।
তবে স্থানীয় মানুষ ও মেহের বকসের বংশধরদের মতে উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে বালিয়া মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং মেহের বকসের মৃত্যুর সময়েই মসজিদটির বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়।
জমিদার মেহের বকস চৌধুরী উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ছোট বালিয়া গ্রামে এই মসজিদ তৈরীর পরিকল্পনা করেন। এজন্য দিল্লির আগ্রা মতান্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি আনা হয়। মোগল স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী নকশাকৃত এই মসজিদ তৈরির করাটা ছিল অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এরমধ্যেই হঠাৎ প্রধান স্থপতির মৃত্যুর ফলে মসজিদ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।
মেহের বকস স্থানীয় কারিগরের সহায়তায় পুনরায় মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় কারিগররা মসজিদের গম্বুজ নির্মাণে ব্যর্থ হন। ইতোমধ্যে ১৯১০ সালে মেহের বকস চৌধুরী মারা যান। মেহের বকসের ছোট ভাই কয়েক বছর পর আবারো মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কিন্তু, নির্মাণ কাজ শেষ না করে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। ফলে মসজিদটি ১০০ বছর গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে মেহের বকস চৌধুরীর প্রপৌত্রী তসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় ২০১০ সালে বালিয়া মসজিদটির সংস্কার কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত এর তত্ত্বাবধায়ন করেন শিল্পী কামরুজ্জামান স্বাধীন এবং জাকিরুল হক চৌধুরী। একই সাথে আর্কিটেক্ট সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশলের নকশায় নতুনভাবে গম্বুজ নির্মাণ করা হয়।