আপনি কি ঠিক কাজটিই করছেন? কর্মজীবনে সফল হতে চাইলে এই ৫ প্রশ্ন করুন নিজেকে
কর্মজীবনে কে না সফল হতে চায়! তবে এই সাফল্য হয়তো অনেকের জীবনে ধরা দেয়, আবার অনেকের জীবনে অধরাই থেকে যায়। কর্মজীবনে আপনি কীভাবে সফল হতে পারেন তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ। প্রতিবেদনে নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচটি প্রশ্ন; নিজের কাছে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে আপনি অর্জন করতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই পাঁচটি প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তর খোঁজার উপায়।
আমি কতটা পরিপূর্ণ?
এই উত্তর পেতে হলে আপনাকে আগে নিজের বর্তমান কাজের উদ্দেশ্য ও অর্থ খুঁজে পেতে হবে। আর সেটি নির্ভর করছে আপনি কী ধরনের মূল্যবোধ ধারণ করেন তার ওপর। এই মূল্যবোধই আপনাকে প্রতিনিধিত্ব করে; আপনাকে পরিপূর্ণ করে। মূল্যবোধের উদাহরণ হতে পারে- কারও প্রতি আপনার সহযোগিতা বা প্রভাব, আপনার ন্যায়-অন্যায় বিচারের ক্ষমতা, স্বায়ত্তশাসন, অ্যাডভেঞ্চার, স্বীকৃতি, সৃজনশীলতা কিংবা নিরাপত্তা। কর্মক্ষেত্রে আপনার মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ আত্মসন্তুষ্টি ও আপনার কর্মক্ষমতাকে আরও উন্নত করে তুলবে।
আমাদের প্রধান মূল্যবোধগুলো সাধারণত সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয় না; তবে এই মূল্যবোধের আপেক্ষিক গুরুত্ব পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- সিঙ্গেল বা একক জীবনে হয়তো আপনার কাছে আর্থিক নিরাপত্তা বা সঞ্চয়ের তেমন গুরুত্ব নেই; কিন্তু যখন আপনার সন্তান পৃথিবীতে আসবে, তখন হয়তো আপনার কাছে আর্থিক নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এবার আপনার শীর্ষ গুরুত্বের বিষয় বা মূল্যবোধগুলোর একটি তলিকা তৈরি করুন এবং সেগুলোর প্রতিটির জন্য ১ থেকে ১০-এর স্কেলে একটি করে মান নির্ধারণ করুন। এখানে ১০ আদর্শমান। আপনি যদি আপনার সৃজনশীলতাকে ৭ দিয়ে থাকেন, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, 'কেন সাত দিয়েছেন?' এরপরে একইভাবে ৮ বা ৯ এর ক্ষেত্রেও এই প্রশ্ন করতে হবে।
এটি কর্মক্ষেত্রে আপনার মূল্যবোধকে আরও ভালোভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আপনার ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনাকে ফলপ্রসূ করে তুলতে পারে।
আমি কিভাবে শিখছি?
নতুন কিছু শেখা তাৎক্ষণিকভাবে বিজয়ের অনুভূতি এনে দিতে পারে। আপনার কাজে আপনি কতটা দক্ষ বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন এই প্রশ্নটিও নিজেকে করতে হবে। প্রায়শই আমরা বুঝতে পারি না আমরা কতটা শিখেছি; চাকরিতে যখন অন্য কাউকে শেখানোর দায়িত্ব পড়ে কেবল তখনই হয়তো আমরা বুঝতে পারি।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, গত বছরে আপনি কী কী নতুন দক্ষতা ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন? হয়তো আপনার উপস্থাপনার দক্ষতা উন্নত হয়েছে কিংবা আপনি হয়তো আরও ধৈর্যশীল হতে শিখেছেন।
এবার ঠিক করুন সামনের বছর আপনি আরও কী কী দক্ষতা অর্জন করেত চান। ঠিক কোন খাতে আপনি আপনার মূল্যবান সময়, শ্রম বা প্রচেষ্টা এবং টাকা বিনিয়োগ করবেন? অনেকভাবেই আপনি শিখতে পারেন। কনফারেন্সে যোগ দেওয়া, কোনো বিষয়ের ওপর কোর্স করা, বই পড়া, অন্যদের কাজ ও দক্ষতাকে পর্যবেক্ষণ করা, কিংবা পরামর্শদাতাদের সঙ্গে আলোচনা- এর যেকোনো উপায়েই আপনি শিখতে পারেন।
সামনের দিনগুলোতে আপনি যা শিখতে চান এবং নিজের দক্ষতা যতখনি বৃদ্ধি করতে চান, সে অনুযায়ী আপনাকে এখনি পরিকল্পনা করতে হবে।
আমি কি সঠিক পথে এগোচ্ছি?
আপনি যদি নিজেকে বছরের পর বছর মূল্যায়ন না করেন, তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর আপনি ঠিক পথে এগোচ্ছেন কিনা তা নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়বে।
এমন অনেকেই আছেন যারা হয়তো বলে থাকেন, 'আমাকে কখনই নতুন সুযোগের সন্ধান করতে হয়নি। সুযোগ আপনা-আপনি এসেছে আমার কাছে।'
আবার কর্মজীবনে অনেক সফল ব্যক্তিও বলে থাকেন, 'আমি জানি না আমি এখানে কীভাবে এসেছি। আমি শুধু ধাপে ধাপে আসা কাজগুলো করে গিয়েছি। আর এভাবেই আমি আজ এখানে। তবে, আমি সত্যিই এখানে আসতে চেয়েছিলাম কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নই।'
যখন একটি ভাল প্রকল্প বা কাজ আপনার কাছে আসে তখন সেটি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু অনেক সময় খুব বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হওয়া বা অন্ধভাবে সেই কাজ করে যাওয়া আপনার কর্মদক্ষতার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারে।
'আগামী ১০ দশ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?'- যদিও এই প্রশ্নটি সবার কাছেই বিরক্তির, তবুও এটি আপনাকে একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি বা দিকনির্দেশ খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, 'আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মজীবনে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?' সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা তৈরি ও তা অনুসরণের চেষ্টা করুন।
আমাকে এখন কী করতে হবে?
তিন থেকে পাঁচ বছরের কর্মজীবনে আপনি কী অর্জন করতে চান সে অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি বা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আপনার বর্তমান কাজের ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে। এই পরিকল্পনা তৈরিকে অনেকেই 'বীজ রোপণের' সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। এখন আপনি যে বীজ রোপণ করবেন, আগামীতে ঠিক সেই ফলই পাবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভালো মানের বীজ রোপণ অর্থাৎ, ভালো পরিকল্পনা বা কর্মসূচি তৈরি করতে হবে। যেন এখন থেকে তিন, পাঁচ কিংবা দশ বছর পর আপনি কাঙ্ক্ষিত ফলাফলটি পেতে পারেন।
আমাকে কী ধরনের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে?
কর্মজীবনের সাফল্যের জন্য সম্পর্ক স্থাপন একটি মৌলিক বিষয়। এটি আপনি একা করতে পারবেন না; এর জন্য আপনার পাশের মানুষের সাহায্য বা সমর্থনের প্রয়োজন হবে।
স্বল্প, মধ্যম কিংবা দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনে কারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে সেটিও আপনার নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে। হয়ত আপনি ইতোমধ্যে অনেককেই চেনেন এবং অন্যদের আগামী দিনের চলার পথে চিনবেন। কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেক সম্পর্কই হয়ত ফিকে হয়ে যায়, তবে আপনাকে নিজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের বেছে নিতে হবে। যাদেরকে আপনি বিভিন্ন সময়ে চিনেছেন; যারা আপনার বিপদের পরীক্ষিত বন্ধু তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন দিতে হবে। এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে আপনি যে সেক্টরে আছেন, সেই সেক্টরের মানুষদের সঙ্গেও আপনার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।
এরপর নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, 'আমি কোথায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করছি? এবং আমি কোথায় কম বিনিয়োগ করছি?' আপনি যদি একজন প্রকৌশলী হন, তাহলে হয়তো আপনি অন্যান্য প্রকৌশলীদের সঙ্গেই বেশি সংযুক্ত থাকবেন। কিন্তু যদি আপনি প্রযুক্তি খাত থেকে শিক্ষাখাতের দিকে যেতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার যোগাযোগের পরিধিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
একইভাবে, যদি আপনি শিক্ষক হন, কিন্তু কর্পোরেট সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার পরিবর্তন করতে চান, তাহলে সে অনুযায়ী আপনাকে নিজের সম্পর্কের ও যোগাযোগের পরিধি বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে, আপনার লক্ষ্যগুলো অর্জনে আপনি যেই সম্পর্কগুলো তৈরি করবেন, তা বজায় রাখতে সম্পর্কের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে।
এখন আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে কর্মজীবনের লক্ষ্য অর্জনে কী ধরনের সম্পর্ক আপনি তৈরি করতে চান।
আমরা সবাই জানি, আমাদের কর্মজীবন সরল রাস্তার মতো নয়; বরং বহু বছর, এমনকি কয়েক দশক ধরে এটি বিকশিত ও সমৃদ্ধ হতে পারে। তবে, ওপরে উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার কর্মজীবনকে 'অটোপাইলট মোড' (স্বচালিত) থেকে পরিবর্তন করতে পারেন; চালকের আসনে আপনি নিজেই বসতে পারেন। নিজের কর্মজীবনের সাফল্যের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং তা অর্জনে কর্মসূচি তৈরি ও অনুসরণে প্রশ্নগুলো আপনাকে দিক নির্দেশনা দিতে পারে।
- সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ