সাজঘরের পোশাকে আর কেউ রাজা সাজবে না!
হ্যাঙ্গারে লাল আর বেগুনি রঙের চিকচিক জ্যাকেট। পাশেই একটি তাকে ঝলমলে পাগড়ি, মুকুট রাখা। দেয়ালে চাবুক, পিস্তল, ঝোলানো তরবারি। আবার অন্য তাকে মিলিটারি বুট, হ্যাট রাখা। তার একপাশে ঝুলছে, বাইজির পোশাক- এ যেন দোকান নয়, জাদুঘর!
একসময় খুব রমরমা ব্যবসা চলতো এই যাত্রা-নাটক-সিনেমার সাজপোশাকের দোকানগুলোতে। কারওয়ান বাজারে ডিআইটি ভবনের দোতলায় 'পোশাক বিতান', 'সাজঘর', 'বোম্বে ড্রেস কর্ণার' এই তিনটি দোকান আজও বাংলা চলচ্চিত্রের স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে আছে।
শাঁখারিবাজারেও ১০-১২টি দোকান ছিল একসময়। কালের গর্ভে হারাতে হারাতে এখন একটাই অবশিষ্ট আছে। সেদিন গিয়েছিলাম কারওয়ান বাজারের ডিআইটি ভবনের দোতলায় স্মৃতি আঁকড়ে পড়ে থাকা এরকম তিনটি দোকানে...
পোষাক বিতান
এক হাত সেলাই মেশিনের চাকা ঘোরাচ্ছে। অন্য হাত ধরে আছে সুঁইয়ের নিচে কাপড়টাকে। পা দুটোও প্যাডেল ঘোরাচ্ছে। উপরে ঝুলছে ক্লান্ত সিলিং ফ্যান। শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসছে যেন সিলিং ফ্যানেরও।
একমনে রাজার পোষাক বানানো চলছে। এ কোন রাজার পোষাক? জানেন না খোকন মিয়া। যাত্রার লোকদের কাছে বিক্রি করার জন্য বানিয়ে রাখছেন। আর তো আছেন একসপ্তাহ। চলে যাওয়ার আগে যতটা সম্ভব কাজ করে নেওয়া।
বলছিলাম ড্রেসম্যান খোকনের কথা। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ফেল করার পর, বড় ভাইয়ের ভয়ে ঢাকায় মামার কাছে চলে আসেন। মামা শাঁখারীবাজারে সিনেমার জন্য বিভিন্ন পোশাক, প্রপ্স বানাতেন। দোকানটার নাম ছিল 'পোশাক ঘর'। এই মামার কাছ থেকেই খোকন কাজগুলো শিখেছিল। মামা খুব সুপরিচিত ছিলেন সিনেমার লোকদের কাছে। মিশর কুমারী, অরুন বরুন কিরণমালা, রূপবান, সিরাজউদ্দৌলার মতো কালজয়ী সিনেমাগুলো দাঁড়িয়েছে তার হাত ধরেই। মামার নাম ছিল মন্টু পরদেশী। অগ্রজদের কাছে এই নাম এখনো পরিচিত। এসিস্ট্যান্ট হয়ে জীবন শুরু করে, একপর্যায়ে নামের আগে পরিচালক আর প্রযোজক পদবী দুটিও বসাতে পেরেছিলেন মামা। 'জিনা ইসি ক্যা নাম হ্যায়' এবং কায়েস-সুজাতা অভিনীত 'মন নিয়ে খেলা' সিনেমা দুটো পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন মামা।
আগে প্রতিদিন এফডিসি যেতেন খোকন। কত ব্যস্ততা ছিল! দৈনিক ৫-৬টা কাজের অর্ডার পেতেন। সবগুলো ছিল সিনেমা। কিন্তু একসঙ্গে ১০টার বেশি কাজ হাতে নিতেন না। আর আজ সিনেমা নেই ১০ বছরের বেশি হলো। শেষ কাজ করেছেন মান্না-শাবনূর অভিনীত 'মোঘলে আজম'(২০১০) সিনেমায়। ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত যাত্রাদলই ছিল তার ভরসা। এখন সে ভরসার বাতিও নিভে যাওয়ার পথে।
অথচ চলচ্চিত্রের সোনালীযুগে ড্রেসম্যান খোকনের নাম এফডিসির দারোয়ানও জানতো! নায়িকাদের মধ্যে ববিতা, অলিভিয়া, শাবানা, নতুন, অঞ্জু ঘোষ, শাবনূরের পোশাক বানিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। তবে তাদের মধ্যে সুনেত্রা এবং শ্যামা ছিলেন তার কাজের অন্ধভক্ত। তাদের কস্টিউম খোকন ছাড়া অন্য কেউ বানাতে পারতো না। আর নায়কদের মধ্যে ইলিয়াস কাঞ্চন, সাত্তার, মান্না, শাহীন আলম, জসীম, রুবেল, আলমগীর এদের কস্টিউমের কাজ করেছেন সবচেয়ে বেশি।
একসময় রমরমা ব্যবসা ছিল খোকনের। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার চুক্তিতেও কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু অর্থ, সম্মান-দুটোর মধ্যে রেখেছেন সামঞ্জস্য। অর্থের সঙ্গে আপস করলেও, আত্মসম্মানের সঙ্গে আপস করেননি কখনো। আগে পরিচালকের ব্যবহার দেখেছেন, তারপর কাজে রাজি হয়েছেন। একারণে চাষী নজরুল ইসলামের মতো বিখ্যাত নির্মাতার সঙ্গেও কাজ করতে রাজি হননি কোনোদিন!
তার করা সিনেমার বেশিরভাগই পোশাকি ছবি। সামাজিক ছবি করেছেন হাতে গোনা কয়েকটা। তবু সবমিলিয়ে সিনেমার সংখ্যা ৩৫০ এর কম হবে না।
আজকের মতো এত উন্নত ইন্টারনেট ব্যবস্থা তখন ছিল না। তাদের ডিজাইনগুলো হতো মনগড়া আর কাল্পনিক। তবে পরিচালক বা নায়ক-নায়িকাদের অপছন্দ হয়েছে, এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে কখনো।
বেদের মেয়ে জোছনা, শঙ্খমালা, অচিন দেশের রাজকুমার, জন্তর মন্তর- এরকম বড় বড় পোশাকি ছবিগুলো তার হাত থেকেই উঠেছে। কত বড় বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন, বড় বড় নায়িকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন! অথচ, কখনো তাদের ব্যবহারে কষ্ট পেতে হয়নি। পরিচালকের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিতে হয়নি। তারাই বরং বিল রেডি করে দিয়ে গেছেন।
আফসোস করে বলেন, 'আগে যারা নায়ক-নায়িকা ছিল, তাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করতো, তাদের ব্যবহার ছিল ভালো। আর এখন যারা আছেন, তাদের তো শিল্পীই বলতে ইচ্ছে হয় না।'
১৭ বছর বয়সে এসেছেন। এই কারওয়ান বাজারেই চারবার দোকান বদলেছেন। কোন কাজ তিনমাসেও সেরেছেন, কোনটি করতে আট বছর লেগেছে এমন নজিরও আছে। ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'ওমর আকবর' সিনেমাটি করতে দীর্ঘ আট বছর সময় লেগেছিল। তবে ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছিলেন শরীফুদ্দীন খান দিপু পরিচালিত এবং মান্না আর শাবনূর অভিনীত 'মোঘলে আজম' সিনেমাটি করতে গিয়ে।
আর মাত্র একসপ্তাহ। এরপর দোকান ছেড়ে, এতবছরের সব জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবেন কেরানীগঞ্জ। সেখানে তার স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে আছে। ছেলেটাকে ম্যাট্রিকের বেশি পড়ালেখা না করাতে পারলেও, মেয়েটাকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াতে পেরেছেন। কিন্তু তাতে কি, কপালের জেরে আজ দুজনেই বেকার- ঘরে বসা। খোকন বলেন, '৭৩ সালে এসেছি। আজ সবকিছু নিয়ে চলে যাচ্ছি। কিভাবে খাবো, কিভাবে বাঁচবো জানিনা। এমনকি এটাও জানিনা, এই জিনিসগুলো (এতদিনের সব সংগ্রহ) নিয়ে কই রাখবো।'
কাজের ক্ষেত্রে কখনো বাছবিচার করেননি রূপচান মিয়া
সবেমাত্র সিরাজদ্দৌলা করে ফিরেছেন গতকাল। আজ নাকি আবার আরেক নাটকের ভাড়া আসবে। তাদের জন্য সব শাড়ি-কাপড় গুছিয়ে রাখছেন। লাল, কমলা, হলুদ চুমকি, জরিতে শাড়িগুলো যেকারো নজর কাড়তে বাধ্য। বেশি কথা বলার সময় নেই তার, কাজে খুব ব্যস্ত।
'এফডিসিতে গিয়ে রূপচান মিয়া বললেই হইবো, সবাই আমারে চেনে। নাম জিজ্ঞেস করতেই গর্বের সঙ্গে নিজের পরিচয় দিলেন।
অন্ধকার একটি ছোটো ঘর। তবে দোকানে ঢোকামাত্রই বোঝা যায়, ব্যবসার বাতি এখনও প্রজ্বলিত। বসে কথা বলার ফুসরত তার নেই। সিনেমা না করলেও মঞ্চ নাটক, যাত্রা, ইউটিউব- একটার পর একটা অনুষ্ঠান তার লেগেই আছে। সবে 'সিরাজদ্দৌলা' করে আসলেন, আবার ২৬ তারিখ যাবেন রংপুর। আবার ৩১ তারিখেও ঢাকার অদূরে এক মঞ্চ নাটক আছে।
মঞ্চনাটক, যাত্রা, ইউটিউবের ভিডিও করেই এখন তার ব্যবসা চলছে। সিনেমায় টাকা নেই, তাই এসবের দিকেই ঝুঁকছেন। তবে এসব করে যে ব্যবসার অবস্থা খারাপ, তা বলা যাবে না।
দিনে অন্তত চার পাঁচটা ফোন আসে তার। সব-ই যাত্রা আর মঞ্চ নাটকের। ইউটিউবে টাকা কম, তাই কাজ করেন কম। টিভি চ্যানেলগুলোও ভাড়া নেয়, তবে দুটো ধুতি, দুটো ফতুয়া এমন।
আগে সিরাজদ্দৌলা নাটকে ভাড়া হতো পাঁচ হাজার টাকা। এখন তা আট হাজারে হয়। তবে ঢাকার বাইরে গেলে ১৪-১৫ হাজারও ভাড়া নেন। আবার ঢাকার আশেপাশে কোথাও হলে ১২ হাজার টাকা ফিক্সড।
এখন হাতে ৫-৭ টা নাটক আছে তার। যখন সিনেমা করতেন একসঙ্গে চার-পাঁচটা নিতেন। মহাগুরু, ডন, রাজকুমার, নবাব সিরাজদ্দৌলা, মুক্তমানব, রাজকপাল, চাপাডাঙ্গার বউ, চন্ডিদাস, বিরাজ বৌসহ মোট ৩০০-৩৫০টি ছবিতে কাজ করেছেন রূপচান। কাজের ক্ষেত্রে কখনো বাছবিচার করেননি। যা পেয়েছেন করেছেন। কামাল আহমেদ, মুনতাসীর রহমান আকবর, এ জে রানা, আবুল খায়ের বুলবুল, শবনম পারভীন, চাষী নজরুল ইসলাম সবার সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পেয়েছেন।
পাশাপাশি কিছু যৌথ প্রযোজনার সিনেমাতেও কাজ করেছেন। ভারতীয় অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো কালজয়ী নায়ক-নায়িকার পোশাকও তিনি বানিয়েছেন।
কোনো এসিস্ট্যান্ট বা সহযোগী নেই তার। দরকারও পড়ে না এখন আর। সিনেমা তো কবেই বাদ দিয়েছেন। এখন শুধু ভাড়া দেন। '৮৮ সাল থেকে তিনি কাজ করছেন। আগে শাঁখারিবাজারে কাজ করতেন। এখন কারওয়ান বাজারে বসেন। দোকানের নামও বেশ সুন্দর, 'সাজঘর'। কিন্তু এই ব্যবসা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
'বিএনপি এরশাদের আমলে ব্যবসা ছিল জমজমাট। এই সরকার তো শিল্পীই মেরে ফেলতে চায়, ব্যবসা ধরে রেখে কী করমু?' রূপচান বলেন।
তিনি নিজে যতদিন আছে, ততদিনই থাকবে এই 'সাজঘর'।
কপালে মারও জুটেছে নাকি!
সাদা পাঞ্জাবি, পান চিবোনো লাল মুখ, চোখে চশমা, হাতে রুমাল। এই রুমাল দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর পান চিবোনো মুখটা মুছে নিচ্ছেন আর একটি বস্তায় পিস্তল, মিলিটারি হ্যাট ঢুকিয়ে দিচ্ছেন কাশেম সাহেব। সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন স্কুলগামী ছেলে। দোকানের নাম 'বোম্বে ড্রেস কর্ণার'।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে স্কুলে নাটক মঞ্চস্থ হবে। সেই নাটকের জন্য কস্টিউমসহ বিভিন্ন প্রপস নিতে এসেছে তারা। এর আগেও এখান থেকেই নিয়েছে নাটকের কস্টিউম।
এখন কাশেমের ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই। যেমন খুশি তেমন সাজো, মঞ্চ নাটক, থিয়েটার এসবের জন্যই এখনও তার কাছে কাস্টমার আসে।
খোকন আর কাশেম একই সঙ্গে আসেন এই জগতে। দুজনের মাস্টারও এক 'মন্টু পরদেশী'। দু'বন্ধু একসঙ্গে কাজ করেছেন এমন সিনেমাও অনেক।
কিন্তু '৯০ এর দিকে বুদ্ধি করে এই দোকান কিনে নিয়েছিলেন আবুল কাশেম। এখন তাই একটু হলেও স্বস্তি ফেলতে পারছেন।
ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে বড় হয়েছেন তিনি। ঢাকায় এসে প্রথমে এফডিসিতে প্রডাকশনের কাজ করতেন। এরপর বিখ্যাত পরিচালক ইবনে মিজানের হাত ধরে ড্রেসম্যানের জীবন শুরু হয় তার। সেসময় সিনেমায় স্যার ডাকা হতো নাকি শুধু 'ইবনে মিজান'কেই!
সব মিলিয়ে তার কাজ করা সিনেমার সংখ্যা ৪০০-৪৫০ হবে। এসব সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে পরিচালকের ভালোবাসা যেমন পেয়েছেন, তেমন কপালে মারও জুটেছে নাকি!
কথা বলতেই বলতেই পাশ থেকে একজন ডাক দিলো 'কাশেম চাচা' নামে। বুঝলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। থিয়েটার শেষে কাপড় ফেরত দিতে এসেছে। দুটি খাকি শার্ট, দুটি পিস্তল, একটি হারমোনিয়াম, সব মিলিয়ে ভাড়া পড়েছে এক হাজার টাকা। একদিন দু'হাজার টাকা আয় হলে, দুদিন বসে থাকতে হয়। এভাবেই কোনোভাবে ব্যবসার বাতি জ্বলছে। তবে যতটুকুই হচ্ছে তাতে দিন চলে যাচ্ছে। দুই ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে পরিবার তার। মেয়ে দুটোর ভালো বিয়ে হয়েছে। ছেলে দুটো পড়ালেখা করেছে। একজন চাকরি করে, অপরজন চাকরি খুঁজছে।
ড্রেসম্যানরা হারিয়ে গেছে
প্রত্যেক শিল্পীর একেবারে মাথার তাজ থেকে পায়ের জুতো পর্যন্ত সবকিছু সাজিয়ে দিতেন ড্রেসম্যানরা। কোথা থেকে কিনবেন, কি রকম ডিজাইন হবে এইসবকিছু তারাই ঠিক করতেন। ড্রেসম্যান বলা হতো তাদেরকে যারা মূলত কস্টিউম পরাতেন, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে থাকতেন। মন্টু পরদেশী, বিনয় সুর, লতিফ, শাহজাহান ছিলেন একসময়কার নামকরা ড্রেসম্যান। এসব ড্রেসম্যানদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে নতুন কস্টিউম ডিজাইনার। ড্রেসম্যানদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। মাস্টারের কাছ থেকে শিখে, নিজেদের কল্পনা জুড়ে অসাধারণ কাজগুলো করে গেছেন। অপরদিকে নতুনরা আসছেন এ বিষয়ে ডিগ্রী নিয়ে। নতুনদের ভিড়ে তাই প্রবীণদের মনগড়া কাজ আর টিকতে পারছেনা।
গত পঞ্চাশ বছরে এই খোকন, কাশেম, রূপচান যা দেখে এসেছেন তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। একসময় বাংলা চলচ্চিত্রের একটা ঐতিহ্য ছিল। আর সেই ঐতিহ্য হারাতে শুরু করে ৯০-এর দশকের শেষ দিকে এসে। বিশেষ করে ৭০-৮০ এর সময়টাতে ঢাকাই চলচ্চিত্র মানেই ছিল পোশাকি-ফ্যান্টাসি শ্রেণির চলচ্চিত্র।
এখন বেশিরভাগ সিনেমা হয় সামাজিক। ফ্যান্টাসি বা ঐতিহাসিক ঘরানার কোনো সিনেমা এখন আর হয় না। যে কারণে এদের চাহিদা আরও কমে এসেছে। পোশাকি ছবি এখন নেই বললেই চলে। আগের পরিচালক নেই, যারা আছে তাদের হাতে ছবি নেই। যাদের ছবি আছে, তাদের কদর নেই।
তবে খুব কষ্ট আর অপমানিত বোধ করেন, যখন দেখেন নিজের দেশের লেখাপড়া জানা ছেলেমেয়েদের বাদ দিয়েও পাশের দেশ থেকে কস্টিউম ডিজাইনার ভাড়া করতে হয়। সম্প্রতি ভারতে শুটিং করা বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে একজন ভারতীয়কে (পিয়া বেনেগাল) নেয়ায় বেশ কষ্ট পেয়েছেন তারা।
এখন তাদের কেউ চেনেও না, ডাকেও না। একান্ত পিঠ লেগে গেলে হয়তো তাদের কাছে আসেন। এভাবেই একদিন ড্রেসম্যান শব্দটাও বিলীন হয়ে যাবে। যেভাবে তাদের পূর্বসূরীদের সবাই ভুলে গেছে, একদিন তাদেরও সবাই ভুলে যাবে। অপেক্ষা শুধু সময়ের।