বয়স নিয়ে অহেতুক ভয়? এই পর্ব আপনার ধারণার চেয়েও ভালো হতে পারে
ইতিবাচক ভাবনা মানুষকে রাখে দীর্ঘজীবী ও সুস্থ। জার্নালস অব জেরোন্টোলজি: সাইকোলজিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সে চলতি মার্চে প্রকাশিত এক গবেষণায় ২৩৩ জন বয়স্ক ব্যক্তির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা ইতিবাচক তাদের মনমেজাজও বেশ ভালো থাকে। এমনকি অতিরিক্ত চাপে সৃষ্ট কঠিন পরিস্থিতি সামলে উঠতেও সাহায্য করেছে তাদের ইতিবাচক ভাবনা।
এর আগে এক গবেষণায় দেখা যায়, দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট ড. এলেন ল্যাঙ্গার ও তার সহযোগীরা ২০০৯ সালে গবেষণার এক নতুন দিক উন্মোচন করেন। ড. ল্যাঙ্গার সময়কে ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি অংশগ্রহণকারীদের দুটি দলে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রথম দলটিকে এক সপ্তাহের জন্য ২০ বছর আগের দুনিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মোবাইল ফোন বন্ধ করে ১৯৯৯ সালে তারা যেভাবে ছিল, সেভাবে থাকতে বলা হয়। যেমন: সেই সময়কার বই নিয়ে গল্প, তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোচনা। এমনকি নিজেদের পুরোনো ছবি চালাচালি এবং ২০ বছর আগের হয়ে এক ছোট আত্মজীবনীও লেখেন অনেকে। দ্বিতীয় দলটিকে স্রেফ সেই পুরোনো যুগের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, বৃদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াটি কোনো ধরাবাধা বিষয় নয়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুদলের অংশগ্রহণকারীর সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। তাদের দাঁড়ানোর ভঙিমা, ওজন, দৃষ্টিশক্তি, হাড়ের জয়েন্টে নমনীয়তা, বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় ভালো করাসহ আরও অনেক বিষয়ে উন্নতি দেখা গেছে।
দুদলের উন্নতি হলেও যে দলটি আসলেই ২০ বছর আগের মতো থাকাপড়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল, তাদের ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা যায় বেশি। ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে নিয়ে যাওয়া এই গবেষণা নির্দেশ করে যে, আমাদের চিন্তাভাবনা, ভাষা ও আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বয়সে গিয়ে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার মাধ্যমে বয়সজনিত প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারি।
অর্থাৎ, তথ্যপ্রমাণ বলছে , আমাদের শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর বয়স নিয়ন্ত্রণে আমরা যতটা না ভাবি, তারচেয়েও বেশি প্রভাব রাখা সম্ভব। শরীরের ওপর আমাদের মনের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে এক গবেষণায় দেখা যায়, বয়স বাড়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা পোষণকারী ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় সাড়ে ৭ বছর বেশি বাঁচেন।
মানুষের আয়ুষ্কাল এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ১৮ শতকের পর আয়ু প্রায় ৪০ বছর বেড়েছে। কিন্তু তারপরও সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা, বিজ্ঞান, গণমাধ্যমের প্রভাব ও সামাজিক চাপের কারণে বার্ধক্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাগুলোই প্রচার পায়। মধ্যবয়সে পৌঁছানোর আগেই এই ধ্যানধারণার উদ্ভব ঘটে এবং তরুণরা কোনো প্রশ্ন না তুলেই বার্ধ্যক্যকে নেতিবাচক একটি দিক হিসেবেই গ্রহণ করে।
আজ এই বৈষম্যের কারণে বয়স্ক ব্যক্তিরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। ফলে বৃদ্ধদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে প্রান্তিক অনিশিচৎ ভবিষ্যতের দিকে। বয়সের দাগ, অক্ষমতা, বয়স্ক, অল্পবয়সী, অনাকর্ষণীয় এই ধরনের শব্দের ব্যবহার নেতিবাচক স্টেরিওটাইপগুলোকেই শক্তিশালী করে। বয়সের সঙ্গে শরীর ও স্বাস্থ্যের পতন সুনিশ্চিত এমন ভ্রান্ত ধারণাওকেও তা জোরদার করে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে