প্রশিক্ষণ ছাড়াই দারুণ প্রতিমা গড়ল কিশোর, তাতে চলছে দুর্গাপূজা
বংশ পরম্পরায়ভাবে পাল সম্প্রদায়ের শিল্পীরাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা (মূর্তি) তৈরি করেন। কিন্তু পাল সম্প্রদায়ের না হয়ে, কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিখুঁত দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে সাড়া ফেলেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার এক কিশোর। তার তৈরি করা প্রতিমায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
প্রতিভাবান এ কিশোরের নাম নির্মাণ দত্ত। বয়স ১৪। দুর্গাপুর উপজেলার শিবগঞ্জ গ্রামের গোপাল দত্ত ও নমিতা দত্তের ছেলে সে। দুর্গাপুর সদরের এমকেসিএম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে।
নির্মাণের হাতে গড়া প্রতিমায় চার বছর ধরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের বাড়িতে।
জানা গেছে, একেবারে শিশু থাকাকালে ছবি আঁকা রপ্ত করে নির্মাণ। পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে প্রতিমা তৈরির আগ্রহ জাগে। কোনো প্রশিক্ষণ বা ওস্তাদের সান্নিধ্য ছাড়াই আয়ত্ত্ব করে প্রতিমা তৈরির কলাকৌশল। এরপর ২০১৭ সালে নিজ বাড়িতে মাটি দিয়ে প্রথম দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে।
কিশোর ছেলের প্রতিভা দেখে অবাক হন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সেবারই তার মা-বাবা বাড়িতে মণ্ডপ স্থাপন করে প্রথমবারের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।
স্থানীয়রা জানান, নির্মাণ দত্ত একেক বছর একেক ডিজাইনের প্রতিমা তৈরি করে। এবারের প্রতিমাটি আগের তুলনায় অনেক সুন্দর হয়েছে। এ কারণে পূজা শুরুর আগে থেকেই তাদের বাড়িতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছিল। পূজা শুরুর পর রীতিমতো ঢল নেমছে।
কিশোর প্রতিমা শিল্পী নির্মাণ দত্ত জানায়, প্রতিমা তৈরিতে সে মাটি, শোলা, পাট, বাঁশের কাঠামো, বিভিন্ন ধরনের রঙ প্রভৃতি ব্যবহার করে। কোনো রকম ডাইস (ফর্মা) ছাড়াই তৈরি করেছে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, অসুর, লক্ষ্মী ও সরস্বতীসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মুখাবয়ব। রঙতুলির কাজও সে একাই করেছে।
পুরো কাজ শেষ করতে তার সময় লেগেছে এক মাসের মতো। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এই খরচ তার বাবা-মা দিয়েছেন।
নির্মাণ বলে, 'নিজ হাতে দেবী দুর্গার প্রতিমা বানাব- শিশুকাল থেকে এমন একটা ইচ্ছা ছিল। আমি তা করতে পেরে আনন্দিত।'
দুর্গাপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মানেশ চন্দ্র সাহা বলেন, 'এ বয়সে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিখুঁত প্রতিমা তৈরি করে সে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, একদিন সে বড় শিল্পী হবে।'