আবরার হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়েত করা হয়েছে। এতে বুয়েট শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এর আগে, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বুয়েটের কয়েকজন ছাত্রকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। ওসি জানান, আটককৃতদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন।
এদিকে গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) রাত দশটার দিকে ঢাকায় বুয়েট প্রাঙ্গণে আবরারের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর অ্যাম্বুলেন্স যোগে আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আবরার ফাহাদের মরদেহ তাঁর কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে পৌঁছে। সেখানে সকাল সাড়ে ছয়টায় আবরারের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, দুপুর নাগাদ আবরারের দাফন হবে তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গায়। দাফনের আগে সেখানে তাঁর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা আবাসিক হলে বেদম প্রহারে আবরার ফাহাদের মৃত্যু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আবরার ফাহাদ (২১) বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।
শের-ই বাংলা হলের শিক্ষার্থীরা জানান রোববার রাত ৮ টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর শিবির সন্দেহে জেরা করার পর ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবরারকে পেটান। তবে ভয়ে শিক্ষার্থীদের কেউই নাম প্রকাশ করে কোন কথা বলতে চাননি।
পরে চিকিৎসককে ফোন করে শিক্ষার্থীরা। বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাসুক এলাহী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিঁড়ির পাশে ছেলেটিকে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।"
পরে হল প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশকে খবর দেয় তারা। পুলিশ এসে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
এ বিষয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু বলেন, "আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি আমরা।
পরে চতুর্থ বর্ষের কয়েকজনকে নিয়ে আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।"
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দু'টি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন আবরার।
আবরারকে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।