আবারও হিলি রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ
সারাদেশে যখন রেলের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে যাচ্ছেন বর্তমান সরকার, সেখানে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত দেশের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশন দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনটিকে আবারো জনবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে 'ক্লোজ ডাউন' ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে এই পথ দিয়ে চলাচলরত সকল যাত্রীকে ট্রেনে ওঠানামা করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। হিলি থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও রেলস্টেশনটির কোন উন্নয়ন না করায় ক্ষোভে ফুঁসছে হিলিবাসী। অবিলম্বে হিলি রেলস্টেশনটি চালুকরণসহ এর আধুনিকায়ন ও সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানিয়েছেন তারা।
জনবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে গতকাল ২০ অক্টোবর থেকে হিলি রেলস্টেশনটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে করে এই পথ দিয়ে চলাচলরত সকল ট্রেন থ্রু পাস হয়ে যাবে। যে কয়টি ট্রেনের স্টপেজ আছে, সে ট্রেনগুলো প্লাটফর্মে না দাঁড়িয়ে চালকের ইচ্ছায় ২নং লাইনে দাঁড়াচ্ছে, আবার যাত্রী নিয়ে স্টেশন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। হিলির পার্শ্ববর্তী বিরামপুর ও পাঁচবিবি রেলস্টেশন থেকে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে করে যে কোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা তৈরি হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হওয়ায় যে কোন সময় বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
হিলি রেলস্টেশনে আসা জুয়েল হোসেন বলেন, "আমার মা রাজশাহীতে তার মেয়ের বাড়িতে যাবে সেজন্য আমি সকালে রাজশাহীগামী বরেন্দ্র ট্রেনে উঠিয়ে দিতে স্টেশনে এসেছি। স্টেশনে এসে শুনি স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সব ট্রেন ২নং লাইনে দাঁড়াবে। আমার বয়স্ক মা কোনভাবেই ২নং লাইনে সেই ট্রেনে উঠতে পারবেনা। তারপরেও অনেক কষ্ট করে কোনরকম দুজন মিলে ধরে তাকে ট্রেনে তুলে দিয়েছি। একই রকম অবস্থা অন্যান্য বয়স্ক মানুষদের, আর মেয়েদের অবস্থা তো বলার মতো না। এতো কষ্ট করেই যদি ট্রেনে উঠতে হবে, তাহলে এই স্টেশন রেখে লাভ কি। এভাবে কি মানুষজন ট্রেনে উঠতে পারে! আমরা এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই"।
হিলি স্টেশনে টিকিট কাটতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, "ছেলে খুলনায় পড়ালেখা করে, সেখানে যাবো। সেজন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে এসে শুনি স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে সরকার রেল যোগাযোগ উন্নয়নের কথা বলছে, সেখানে হিলি রেলস্টেশন বন্ধ করে দিয়ে কিসের উন্নয়ন করছে, সেটি আমাদের মাথায় আসছেনা। সরকার প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আয় করছে হিলি থেকে। এরপর রেলপথ দিয়ে পণ্য পরিবহনের কারণে স্টেশনের আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। এরপরও স্টেশন বন্ধ করে দেওয়ার কারণ কি! এটি হিলির প্রতি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা হিলিবাসী এর থেকে পরিত্রাণ চাই, যেখানে আমরা ঢাকাগামী ট্রেনের স্টপেজসহ স্টেশনটির আধুনিকায়নের দাবি করে আসছিলাম সেখানে স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক সহ্য করেছি কিন্তু আর নয়। আমরা হিলিবাসী আমাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবারে আন্দোলনে নামবো, এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই"।
হিলি রেলস্টেশনে দায়িত্বরত চুক্তিভিত্তিক মাস্টার তপন কুমার বলেন, "হিলিতে কোন মাস্টার নেই, পয়েন্টসম্যান নেই, এখানকার যে পয়েন্টসম্যান ছিল তাদেরকে অন্যত্র নিয়ে গেছে। এ কারণে গত ২০ অক্টোবর থেকে ক্লোজ ডাউন করে হিলি রেলস্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাকে যেভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিল সেটি থেকে বিদায় করে দিয়েছে। এখন থেকে ট্রেনের টিকিট দিবে বুকিংগার্ড আর সব ট্রেন প্লাটফর্মে না দাঁড়িয়ে ২নং লাইন দিয়ে চলাচল করবে, সেখানেই মানুষকে উঠতে হবে"।
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন বলেন, "রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানির মাধ্যমে হিলি রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরকার কোটি কোটি রাজস্ব আহরণ করছে। একইসাথে রেলপথে চলাচলরত যাত্রীদের নিকট টিকিট বিক্রি করেও হিলি রেলস্টেশনের আয় বেড়েছে। কিন্তু এরপরেও হিলি রেলস্টেশনটি বন্ধ করায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক বরাবর পত্র দেওয়া হয়েছে। এর অনুলিপি মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট দেওয়া হয়েছে। শুধু এটি চালু করা নয়, এটির আধুনিকায়নের অনুরোধ জানানো হয়েছে।