আম্পান: বরগুনায় মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরি, বইছে মৃদু হাওয়া
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুপার সাইক্লোন আম্পান এর প্রভাবে বরগুনার আকাশে কখনো মেঘ আবার কখনো রোদ্রের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। পুরো বরগুনা জেলা জুড়ে বইছে মৃদু হাওয়া। গত কয়েক দিনের চেয়ে কমেছে তাপমাত্রাও।
স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বিকেল থেকে গত কয়েকদিনের তুলনায় বরগুনার আবহাওয়ায় হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেয়। গত কয়েকদিন ধরে বরগুনায় তাপদাহ থাকলেও গতকাল বিকেল থেকে আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকে। কমে যায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রা। অন্যদিকে সুপার সাইক্লোন আম্পান এর প্রভাব বরগুনায় জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতোমধ্যে জেলার ৬ উপজেলায় ২৬ লাখ টাকা দুই 'শ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলায় পাঁচ'শ নয়টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
জেলায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই জেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরগুনায় এখন মৃদু বাতাস বইছে। সেইসঙ্গে আকাশে কখনো মেঘ আবার কখনো রোদ দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। জেলার সকল সাইক্লোন শেল্টার ইতোমধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আড়াই লাখ স্থানীয় অধিবাসীসহ প্রায় ১০ লাখ গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই উপজেলাগুলোতে নগদ অর্থ ও চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষের খাবারের ব্যবস্থাও করা হবে। আমরা ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলেছি। তবে দুপুরের পর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের সাধারণ মানুষদের নেয়ার জন্য আমরা বল প্রয়োগ করব।
এদিকে উপকূলজুড়ে জারি করা হয়েছে সাত নম্বর বিপদ সংকেত। তাই গভীর সমুদ্র থেকে তীরে এসে অন্তত তিন হাজার মাছ ধরার ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। এছাড়াও যেসব ট্রলার ও জেলেরা এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেনি, তারাও নিরাপদ প্রস্থানের খুব কাছাকাছি রয়েছে।
বরগুনা জেলার ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাগর শান্ত ছিল। এ কারণে ৭ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু মাছ ধরার ট্রলার গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত ছিল। কিন্তু রাতের পর হঠাৎ করে সমুদ্র বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এ কারণে সমুদ্রে অবস্থানরত অন্তত দেড় শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বরগুনা জেলার ট্রলার মালিক সমিতির অন্তর্ভুক্ত যেসব ট্রলার রয়েছে তাদের মধ্যে সিংহভাগ ট্রলার ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম, মংলা, সখিনা, দুবলার চরসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে কোন জেলে ট্রলার ডুবে কোন প্রণহানির ঘটনা ঘটবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে বরগুনায় জেলেদের প্রাণহানির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এবার আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। ইতোমধ্যেই কোস্টগার্ড আমাকে নিশ্চিত করেছে সমুদ্রে কোন মাছ ধরার ট্রলার নেই। আর যারা এখনও নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেনি তারাও নিরাপদ স্থানের খুব কাছাকাছি রয়েছেন। আমি আশা প্রকাশ করি- ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কোন জেলে ট্রলার ডুবির ঘটনা এবং কোন জেলের প্রাণহানি ঘটবে না।