উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি কমলেও, বেড়েছে অন্য নদীর পানি
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদ-নদী ধরলা, ব্রক্ষ্মপুত্র, সানিয়াজান ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও- কমেছে তিস্তার পানি।
তিস্তার পানি প্রবাহিত হচ্ছে ব্যারেজ পয়েন্টের ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। অন্যদিকে ধরলার পানি ব্রিজ পয়েন্টের ৪৩ সেন্টিমিটার ও ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, আউশ বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী, সদর উপজেলাসহ নয় উপজেলার ৫১ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টেও পানি বাড়ছে। ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা ব্যারাজের পানির উচ্চতা বা গেজ পাঠক নুরুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও অনবরত বৃষ্টির ফলে পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ বুধবার (১ জুলাই) দুপুর থেকে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর ৩টা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার কয়েকটি এলাকায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বৈশাখীর চরে পানি জমেছে। রাধানগর, নিউ সারিয়াকান্দি, শহড়াবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) এ এস এম আমিনুর রশিদ জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ব্যারাজের সব গেট খুলে রাখায় ভাটি এলাকার খালিশা চাঁপনী ও বাইশপুকুর চর প্লাবিত হয়ে বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
উত্তরাঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, ভারতে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, ব্রক্ষ্মপুত্র, দুধকুমার নদীর ভাঙনে বাঁধ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণও করা হচ্ছে।
তবে নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। কলমাকান্দা উপজেলা সদরে প্লাবিত অধিকাংশ বাসাবাড়ি থেকে পানি সরে গেছে। তবে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে।
রংছাতি, খারনৈ ও বড়খাপন ইউনিয়নে প্লাবিত শতাধিক গ্রামের মধ্যে অন্তত ৬০টি গ্রাম এখনও পানিবন্দি অবস্থায়। ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কের অনেক জায়গা ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার এবং উবদাখালি নদীর পানি একশ ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য পয়েন্টেও কংস এবং সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে।