একদিন আগেই শুরু ঢাকার অনিয়ন্ত্রিত পশুর হাট
শনিবার থেকে রাজধানীতে অস্থায়ী পশুর হাট চালু হওয়ার কথা থাকলেও শুক্রবারেই সব হাট চালু হয়ে গেছে। কোরবানীর পশুতে সয়লাব রাজধানীর ১৯টি অস্থায়ী হাট। কোথাও নেই নিয়ম মানার চিহ্ন।
গতকাল দুইটি হাট ঘুরে দেখা যায় হাটে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার থেকে যে স্বাস্থ্য বিধির কথা বলা হয়েছে তা মানা হয় নি। আবাসিক এলাকা ও রাস্তায় পশুর হাট বসানোতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ অথচ রামপুরার মেরাদিয়া ও আফতাব নগরে আবাসিক এলাকায় হাট বসেছে।
এলাকার লোকজনকে বাসা থেকে বের হয়ে হাটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এলাকাবাসী বলেন, তারা পরিস্থিতির শিকার। প্রতিবছরই হাট বসে। অসুবিধা হলেও তাদের করার কিছুই থাকে না।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে । এর মধ্যে রামপুরার মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা অস্থায়ী হাটের স্থান । তবে হাটে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার দুই পাশে গরু সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। মেরাদিয়া বাজার ও দক্ষিণ বনশ্রীর জি ব্লকের আশপাশের রাস্তার দুই পাশে বাঁশের কাঠামোতে গরু ও ছাগল বেঁধে রাখছেন ব্যবসায়ীরা।
দক্ষিণ বনশ্রী ১১ নম্বর রোডের এল ব্লকের কাজিবাড়ির দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে গরু রাখা। এমনকি ফার্মেসি, ব্যাংক, হোটেল, আবাসিক ভবন, মুদি দোকান ও সুপার শপের সামনের রাস্তায়ও গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। এইচ ব্লকে আট নাম্বার রোডে রয়েছে স্বপ্ন, আগোরা সুপার শপ ও বেশ কয়েকটি মুদি এবং স্টেশনারি দোকান। এলাকার যে গলিতেই তাকানো হয় রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ গরু রাখা।
অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ৯টি এলাকায় অস্থায়ী হাট বসানো হচ্ছে, সেগুলোর একটি হলো বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই। এ হাট শুক্রবার বিকেলে পরিণত হয়েছিল বিনোদন কেন্দ্রে। শিশু কিশোররা ঘুরতে এসেছে দলে দলে। এখানেও বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনের সামনে গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। আর রাস্তার পাশেই গরু বেঁধে রাখায় যে সব বাসিন্দারা এখানে বসবাস করে তাদের চলাললে অসুবিধা হচ্ছে।
আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, "কি করবো সারাদেশ থেকে গরু নিয়ে আসা হচ্ছে হাটে। কে করোনা ভাইরাস বহন করছে সেটাতো আমরা বুঝতে পারি না। বাচ্চাদেরও ঘরে রাখতে পারছি না। ওরা বিকাল হলেই গরু দেখতে বের হয়ে যায়। আমরা প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হই আমাদেরও হাটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে"।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, "এমনিতেই জনবহুল এলাকায় হাট হতে পারে না তার ওপর আবাসিক ভবনের সামনে কিভাবে হাট বসে। ওষুধের দোকান তো জরুরি প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে, তার সামনে হাট বসে কিভাবে। এটা তো অন্যায়"।
তিনি বলেন, "স্বাস্থ্য বিধিটা বাংলাদেশে এক ধরনের কৌতুকে পরিণত হয়েছে; পশুর হাট বসানোর জন্য যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে তা কাগজেই রয়েছে"।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন টিবিএসকে বলেন, "ডিএসসিসিতে এ বছর একটি স্থায়ীসহ ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হয়েছে। ৪৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছি। এগুলো মেনে হাট চালাতে হবে। আমরা মনিটরিং করছি। মেরাদিয়া হাট এলাকায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নেই, এজন্য হয়তো ভবনের সামনে রাস্তায় কেউ কেউ গরু রেখেছে। তবে জনবহুল এলাকায় পশু রাখা হলে আমরা সরিয়ে দেব"।
ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের বনশ্রী উপশাখার তিন তলায় বসানো হয়েছে হাটের ইজারাদারের অফিস। এ ভবনের সামনেরও সারিবদ্ধভাবে গরু রাখা।
ফোনে কথা হয় হাটের ইজারাদার আওরঙ্গজেব টিটুর সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য বিধি ও নির্দেশনা মেনেই হাট পরিচালনা হচ্ছে। কোন ফার্মেসি ও সুপার শপের সামনে গরু রাখা হয় নি। যদি কেউ রাখে তাহলে সরিয়ে দেয়া হবে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে ৫ দিনের জন্য বসেছে এসব কোরবানীর পশুর হাট। সরকারী নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধিসমূহ যথাযথভাবে মেনে হাট চলবে ২১ জুলাই ঈদের দিন পর্যন্ত।
কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনা জারি করেছে সরকার।
অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে আছে, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এমন স্থানে পশুর হাট না স্থাপন এবং হাটে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ ও বের হওয়া নিশ্চিত করা।
নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।