এবার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বরিশাল-সিলেটে
রাজশাহীর সংক্রমণ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখন দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে বরিশাল ও সিলেট বিভাগে। তবে ঢাকায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ায় ঈদের পর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
টানা পাঁচদিন ধরে দুইশ'র বেশি মানুষের মৃত্যুর পর শিথিল লকডাউন চলাকালীন গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৮৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সংখ্যা তেমন কমেনি। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১২,১৪৮ জন।
আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী থাকা পজিটিভ শনাক্তের হার গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়ে ২৮.৯৬ শতাংশ হয়েছে। তবে জাতীয়ভাবে পজিটিভ শনাক্তের হারের তুলনায় ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোতে এ হার অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বরিশাল বিভাগের সংক্রমণের হার ৪০.২০%, সিলেটে ৩৯.৪৬%, চট্টগ্রামে ৩২.৪০%, খুলনায় ৩৩.২৫% ও রংপুরে ৩০.৭৬%।
রাজশাহীতে সংক্রমণ হার জুন মাসে ৫০% থাকলেও এখন তা কমে ২২.৯০% নেমেছে। আর গত মাসে ঢাকার পজিটিভ শনাক্ত হার ১০% থাকলেও এখন তা বেড়ে ২৮.১৪% হয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) মতে, সংক্রমণ হার ১০ শতাংশ বা তার বেশি হলে জেলাগুলো 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ' অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হবে, ৫-৯ শতাংশ হলে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' এবং সংক্রমণ হার পাঁচ শতাংশের নীচে হলে সেসব জেলা 'নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ' অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, বরিশালে গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি। সেখানে গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ ১১৪% বেড়েছে। আর চট্টগ্রামে বেড়েছে ৭৭%।
তিনি বলেন, "কয়েকদিন ধরে আমরা দুইশর বেশি মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি। একদিনে শনাক্তের হারও অনেক বেশি। আমাদের মৃত্যুর হারও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহে ঢাকা ও খুলনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। এখন অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। লকডাউন শিথিলের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে"।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে মৃত্যু বেশি ছিল। কিন্তু জুনে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় ঢাকার বাইরে মৃত্যু বাড়তে থাকে। রাজশাহী ও খুলনায় মৃত্যু বেড়েছিল। রাজশাহীর অবস্থার উন্নতি হলেও খুলনায় এখনো মৃত্যু বেশি। তবে এখন ঢাকায় আবার মৃত্যু বাড়ছে। জুলাইয়ে ১৬ দিনে ঢাকায় মারা গেছেন ৩৯১ জন। ঢাকার পরেই কুষ্টিয়া, খুলনা ও যশোরে মৃত্যু বেশি।
গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকা বিভাগে ৬৮ জন মারা গেছেন সংক্রমণে।
খুলনায় করোনা সংক্রমণে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩৯ এবং চট্টগ্রামে ৩৬।
এছাড়াও রাজশাহীতে ১৪ জন, রংপুরে ৬ জন, ময়মনসিংহে ৭ জন, বরিশালে ৮ জন এবং সিলেট বিভাগে ৯ জন মারা গেছে।
শনিবার আসছে চীনের ২০ লাখ ডোজ টিকা
চীন থেকে কেনা চুক্তির দেড় কোটি ডোজের মধ্যে সিনোফার্মের টিকার আরও ২০ লাখ ডোজ শনিবার রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'আগামীকাল শনিবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সিনোফার্মের টিকার আরও ২০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। চীন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ টিকা পাঠাবে। এটা সরকারের কেনা চুক্তির দ্বিতীয় চালান হিসেবে আসছে।'
এর আগে গত ২ জুলাই চুক্তির ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ সিনোফার্মের কাছ থেকে দেড় কোটি ডোজ টিকা কিনেছে। তিন মাসের মধ্যে এই টিকা দেশে আসার কথা। এছাড়াও, চীন থেকে উপহার হিসেবে দুই দফায় সিনোফার্মের ১১ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।