কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও ঢলের পানিতে ৬ রোহিঙ্গাসহ ৮ জনের মৃত্যু
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প, মহেশখালী ও টেকনাফে পৃথক পাহাড় ধস এবং পানিতে ভেসে গিয়ে ৬ রোহিঙ্গাসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ভোররাত ও সকালের পৃথক সময়ে এসব পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ।
উখিয়ার ক্যাম্প-১০ এ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ২ জন। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বালুখালী ক্যাম্পে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে ঢলের পানিতে গোসল করতে নেমে ভেসে গিয়ে এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামশুদ্দোজা নয়ন। পাহাড় ধসে নিহতদের মাঝে এক পরিবারের ২ জন ও আরেক পরিবারের ৩ জন সদস্য রয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই শিশু ও নারী।
নিহতরা হলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর শাহ আলমের স্ত্রী দিল বাহার (৪২), তাদের ছেলে শফিউল আলম (৯), একই ক্যাম্পের মো. ইউসুফের স্ত্রী দিল বাহার (২৫), তাদের ছেলে আব্দুর রহমান (৩) মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা (১)।
এসময় শাহ আলমের মেয়ে নুর ফাতেমা (১৪), ছেলে জানে আলম (৮) আহত হন।
বানের পানিতে ভেসে ক্যাম্প-৮ এ মৃত্যু হয়েছে বাহার নামের এক শিশুর। তার বিস্তারিত পরিচয় দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, "সোমবার সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ চলছে। এ ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বেলা ১০টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক- জি/৩৭ এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের মা-ছেলেসহ দুইজন ও অপর পরিবারে মা-ছেলে-মেয়েসহ তিনজন নিহত হন। প্রথম পরিবারের আরও দুইজন আহত হয়।"
ক্যাম্পে কর্মরত ৮ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) সিহাব কায়সার খান জানান, "খবর পেয়ে ১০ নম্বর ক্যাম্পে দায়িত্বরত ৮ এবিপিএন এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালায়। তাদের সাথে যোগ দেয় অন্যান্য উদ্ধারকারী দল। তাদের উদ্ধারের পরই ক্যাম্প-১০ এর সিআইসির সহযোগিতায় নিহত ও আহতদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনায় পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পে জিডি করা হয়েছে (জিডি নং-৭৯৯/২০২১)।
এদিকে, পৃথক পাহাড় ধসে মহেশখালীতে মারা গেছেন মোরশেদা আক্তার (১৪) নামের এক কিশোরী। সে ছোট মহেশখালী উত্তর সিপাহী পাড়ার আনছার হোসেনের মেয়ে। পাহাড় ধসের সময় ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ভোররাতে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
ছোট মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াদ বিন আলী তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পরিবারের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, "সোমবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টির পানিতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে পাহাড়ের মাটির আঘাতে আনছারের ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে ঘুমন্ত মেয়েটিকে চাপা দেয়। এতে তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।"
অপরদিকে, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরঘোনা গ্রামে পাহাড় ধসে রকিম আলী (৪৮) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি স্থানীয় মনিরঘোনা গ্রামের মৃত আলী আহমদের ছেলে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রকিম আলীর বাড়ি পাহাড়ের পাদদেশে। গত দুদিনের টানা অতিবৃষ্টিত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে রকিম আলীর বাড়িতে হঠাৎ পাহাড় ধসে পড়ে। এতে বাড়ির অন্য সদস্যদের সাথে রকিম আলী গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে বালুখালি তুর্কি হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফানুল হক চৌধুরী, হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ি আইসি এসআই মাহামুদুল হাসান মাহবুব, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররাসহ প্রশাসনের অন্যান্যরা ঘটনাস্থলে যান।
টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী জানান, "অতিবর্ষণে পাহাড় ধসে মারা যাওয়া রকিম আলীর পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ের উপর বা পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছ প্রশাসন।"
অন্যদিকে, সোমবার সকাল হতে কক্সবাজারে থেমে থেমে ভারি বর্ষণ চলছে। অতিবৃষ্টির কারণে ঢল নেমেছে জেলার তিন প্রধান নদী ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, চকরিয়ার মাতামুহুরি ও রামুর বাঁকখালীতে। বান ও বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নয় উপজেলার নিম্নাঞ্চল। শত শত বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে জলবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারে রান্নাও বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, সোমবার দুপুর ১২ টা হতে মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ১১৭ মিলিমিটার। সাগরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত বলবত রয়েছে। আরও দু-তিনদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘটতে পারে পাহাড় ও ভূমি ধসের ঘটনাও।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, শ্রাবণের অতিবর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে এবং বানের পানিতে ভেসে এ পর্যন্ত ৮ জন নিহত হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি। মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাইকিং ও অভিযান চলছে।