কপ-২৬ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩১শে অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে একাধিক বিশ্ব নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।
যুক্তরাজ্য কর্তৃক আয়োজিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা। প্যারিস চুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতেই মূলত ডাকা হয়েছে এই শীর্ষ সম্মেলন।
বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কিছু অংশ তুলে ধরা হল এ প্রতিবেদনে:
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আমন্ত্রণে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) 'জলবায়ু উন্নয়নে অংশীদারিত্ব' শীর্ষক প্যানেল আলোচনার অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে 'অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি-দ্য ক্রিটিক্যাল ডিকেড' শীর্ষক আরেকটি বৈঠকে যোগ দেন তিনি।
একই দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়াও কপ-২৬ এর মূল পর্বে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে তিনি উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্য রেখে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার আহ্বান জানান।
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে চার দফা দাবি জানান। বক্তব্যে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জানানোর পাশাপাশি জাতীয় কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজন বাস্তবায়ন করতে হবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত জলবায়ু অভিবাসীদের প্রতি দায়বদ্ধতাসহ অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়গুলো সমাধান করার জোর দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী।
পরে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং বিল গেটসের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সামনে কী করবেন
বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে স্কটল্যান্ড ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একই দিনে ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী এবং লর্ড গাধিয়ার আমন্ত্রণে ওয়েস্টমিনস্টার পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোয়েলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
৪ নভেম্বর "বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ" নামের একটি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া 'সিক্রেট ডকুমেন্টস' এবং 'মুজিব অ্যান্ড ইন্ট্রোডাকশন' শিরোনামের দুটি প্রকাশনার প্রচ্ছদ উন্মোচন করবেন তিনি, এবং "বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড ব্রিটেন: অ্যা সেটেনারি কালেকশন" শীর্ষক একটি শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
৭ নভেম্বর লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের সদ্য সম্প্রসারিত একটি অংশ এবং বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের দ্বারা আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন তিনি।
৯ নভেম্বর সকালে বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্যারিসের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এলিসি প্যালেসে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে একটি বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। বৈঠকে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ফরাসি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন তিনি। প্যালেসে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার কথা রয়েছে।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জাঁ কাস্টেক্সের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী।
১০ নভেম্বর, এয়ারবাসের সিইও গুইলাম ফৌরি, ডাসল্ট এভিয়েশনের সভাপতি এরিক ট্র্যাপিয়ার এবং থ্যালেস গ্রুপের সভাপতি প্যাট্রিস কেইন সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
এছাড়া এদিনে ফরাসি ব্যবসায়িক সংস্থা মেডেফের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ফরাসি মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লিও তার সঙ্গে দেখা করবেন।
বিকেলে ফরাসী সিনেট পরিদর্শনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
১১ নভেম্বর প্যারিস পিস ফোরামে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে তিনি ইউনেস্কো সদর দপ্তরে 'ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি'-র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
রাতে এলিসি প্যালেসে তার সম্মানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
১২ নভেম্বর প্যারিস পিস ফোরামে দক্ষিণ এশিয়া এবং ত্রিদেশীয় সহযোগিতার উপর একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দিতে ইউনেস্কো সদর দফতরে যাবেন তিনি। যেখানে নিজের বক্তৃতা উপস্থাপন করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মানে ইউনেস্কো মহাপরিচালক অদ্রি আজোলে আয়োজিত নৈশভোজেও অংশ নেবেন তিনি।
১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনা ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
বিকেলে ডি গল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। ১৪ নভেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে তার।